বাড়ির অমতে বিয়ে নয়

মানুষি ছিল্লার

পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। মেডিকেলে পড়ছিলেন। পড়তে পড়তে হঠাৎই গ্ল্যামার দুনিয়ায় পা রাখেন। ২০১৭ সালে বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জয়ের পর লোকে মানুষি ছিল্লারকে চিনতে শুরু করে। ভারতের অনেক সাবেক বিশ্বসুন্দরীর মতো তাঁরও বলিউড অভিষেক নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। সেই জল্পনা সত্যি হয় দ্রুতই। বলিউডের নামী প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মস তাঁর সঙ্গে চুক্তি করে। প্রথম ছবিতেই সহকর্মী হিসেবে মানুষি পান এ সময়ের অন্যতম সফল বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমারকে। তবে কোভিডের কারণে বারবার তাঁর অভিষেক বিলম্বিত হচ্ছিল। অবশেষে আজ ৩ জুন মুক্তি পাচ্ছে তাঁর প্রথম ছবি সম্রাট পৃথ্বীরাজ।

মানুষি ছিল্লার

ছবিতে রাজকন্যা সংযুক্তার মতো রূপসী আর সাহসী নারীর চরিত্রে দেখা যাবে মানুষিকে। চন্দ্র প্রকাশ দ্বিবেদী পরিচালিত সম্রাট পৃথ্বীরাজ মুক্তির আগে যশরাজ স্টুডিওতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মানুষি ছিল্লার। সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধিও।

আড্ডার শুরুতে মানুষি বলেন তাঁর ‘সংযুক্তা’ হয়ে ওঠার কথা। ‘টানা ৯ মাস আমি “সংযুক্তা” হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। রোজ সকালে যশরাজ স্টুডিওতে যেতাম। রাতে ফিরতাম। এই ছিল রোজনামচা। এ সময় নানা ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। অভিনয়ের প্রাথমিক ব্যাপারস্যাপার শিখতে হয়েছে। এ ছাড়া লাইট, ক্যামেরার সঠিক অ্যাঙ্গেল নেওয়া শিখেছি,’ বলেন মানুষি। চরিত্রের প্রয়োজনে আরও অনেক কিছুই শিখতে হয়েছে এই অভিনেত্রীকে। কত্থকের তালিম নিতে হয়েছে।

মানুষি ছিল্লার

হিন্দি ঝালিয়ে নিতে হয়েছে। মানুষি বলেন, ‘ছোটবেলায় ভরতনাট্যম আর কুচিপুরি শিখেছিলাম। কত্থক এই প্রথম করলাম। ছবিতে শুদ্ধ হিন্দি বলতে হয়েছে। আমি দিল্লির মেয়ে, মুম্বাইবাসীদের তুলনায় হিন্দি বেশ ভালো। তবে কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণে মাঝাঘষার প্রয়োজন ছিল।’
বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জয় তাঁর জন্য বলিউডে সুযোগ পাওয়া সহজ করে দিয়েছে, সেটা জানেন মানুষি নিজেও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জয়ের কারণে আগেই অনেকের নজরে চলে এসেছি। এর আগে আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। সেসব অভিজ্ঞতা অভিনয়ের ক্ষেত্রে কাজে এসেছে। তাই সিনেমায় নতুন হয়েও নিজেকে পুরোপুরি নতুন মনে হয়নি।’

মানুষি ছিল্লার

সম্রাট পৃথ্বীরাজ আর রাজকন্যা সংযুক্তার প্রেমকাহিনি ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছে। শুরুতে তাঁদের প্রেমকথা শুনে অবাক হয়েছিলেন মানুষি, ‘আমার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং লেগেছে তাঁদের প্রেমকাহিনি। কোনো মেয়ে একজনকে না দেখে শুধু তাঁর চিত্রকর্ম দেখে আর কবিতা শুনে কীভাবে প্রেমে পড়েন আর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন!’ তবে পর্দায় সংযুক্তার চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তবে মানুষি একেবারেই তাঁর মতো নন। ‘আমি সংযুক্তার মতো প্রেমের কারণে মা–বাবার বিরুদ্ধে যেতে পারব না। বাড়ির অমতে কাউকে বিয়ে করতে পারব না। তাই ড. সাহেব (পরিচালক চন্দ্র প্রকাশ দ্বিবেদী) আমাকে বলেছিলেন, আমি এখনই এই রোমান্স বুঝব না।’

মানুষি ছিল্লার

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথ্বীরাজ আর সংযুক্তার গভীর প্রেম উপলব্ধি করেছেন মানুষি। কিন্তু তাঁর জীবনে বাস্তবে প্রেম আসেনি বলেও জানান, ‘মেয়েদের স্কুল আর কলেজে পড়াশোনা করেছি। এই ছবি নিয়ে তিন বছর ব্যস্ত ছিলাম। প্রেমের সময় কোথায়! তবে ছোট থেকে ক্ল্যাসিক প্রেমকাহিনি পড়তে ভালো লাগত। প্রেমের ছবি দেখতাম।’

বলিউডের প্রিয় রোমান্টিক নায়ক কে জানতে চাইলে বলেন, ‘অবশ্যই শাহরুখ খান। তাঁর দিল তো পাগল হ্যায়, ভির জারা আমার প্রিয় রোমান্টিক ছবি। তাঁর ছবি দেখে আমার বেড়ে ওঠা। আমি শাহরুখের সঙ্গে রোমান্টিক ছবি করতে চাই। আমির খানের সঙ্গেও কাজ করতে চাই। আমির স্যারের চিত্রনাট্য নির্বাচন আমাকে মুগ্ধ করে।’

একসময় বলিউডে আসা নিয়ে নানা টানাপোড়েনের মধ্যে ছিলেন মানুষি। তাই সিনেমা করবেন, এই সিদ্ধান্ত নিতেই অনেকটা সময় লেগে গেছে তাঁর। মানুষি বলেন, ‘বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জয়ের পর আমি আবার মেডিকেলে পড়ব বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু মিস ওয়ার্ল্ড হওয়ার পর আমার জীবনে ব্যক্তিগত বলে কিছু ছিল না। আমার নম্বরপত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। কলেজের শিক্ষকেরা বললেন, পাঁচ বছর পরও আমি মেডিকেলে পড়তে পারব। এখন যে সুযোগ আমার জীবনে এসেছে, তা যেন গ্রহণ করি।’

মানুষি ছিল্লার
ইনস্টাগ্রাম

বলিউডযাত্রা শুরুর পেছনে মা–বাবার সহযোগিতাও পেয়েছেন মানুষি। তাঁর মা–বাবা দুজনই চিকিৎসক। মানুষির মেডিকেলে পড়া শেষে তিনজন মিলে হাসপাতাল খুলবেন, এমন সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু মানুষির তো পড়া হলোই না, উল্টো তাঁর সঙ্গে থাকতে মা–বাবা চাকরি ছেড়ে মুম্বাইয়ে চলে এসেছেন।