বুড়ো হতে চান না অনিল কাপুর

বলিউডের নামকরা ফ্যাশন স্টাইলিস্ট আনাইতা শ্রফ আদজানিয়া একবার বলেছিলেন, ‘মোটা, ঘন, পুরুষালি গোঁফের একটা অন্য ধরনের মাচো আবেদন আছে। একটা রুক্ষ, রাফ অ্যান্ড টাফ ব্যাপার। বলিউডে যদিও দক্ষিণের নায়কদের মতো গোঁফ আবশ্যিক নয়, তবু মানতেই হবে, গোঁফসহ চেহারায় একটা দৃঢ়তা ধরা পড়ে।’ কথাটা ১০০ ভাগ খেটে যায় বলিউড তারকা অনিল কাপুরের ক্ষেত্রে।
রুপালি পর্দার দীর্ঘদিন একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকা কঠিন। এখানে উত্থান-পতনের পালা বদলায় দ্রুতই। বছরের পর বছর উজ্জ্বল তারা হয়ে নিজের অবস্থান রাখার ক্ষমতা খুব কম তারকারই রয়েছে। সেই হাতে গোনা শিল্পীদের একজন অনিল কাপুর। আশি ও নব্বইয়ের দশকের সফল নায়ক এবং নতুন শতকের শক্তিশালী চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে বলিউডে নিজের আসন পাকাপোক্তভাবে ধরে রেখেছেন তিনি। বলিউডের ‘শাহেন শাহ’, ‘কিং খান’, ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ বা ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ নন। তিনি বলিউডের ‘বেনাম বাদশাহ’।
‘তেজাব’, ‘বেটা’, ‘কিষান কানাইয়া’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘বেনাম বাদশাহ’, ‘লাডলা’র মতো ব্যতিক্রম ছবিতে যেমন তিনি পর্দা কাঁপিয়েছেন, তেমনি ‘ঈশ্বর’, ‘নায়ক’, ‘লামহে’র মতো ছবিতে জটিল চরিত্রে অভিনয় করে প্রমাণ করেছেন তাঁর প্রতিভা ।

আজ ২৪ ডিসেম্বর ৬০ বছর পূর্ণ করলেন অনিল কাপুর। কিন্তু সব চরিত্রকে আয়ত্তে আনা, চিরসবুজ বলিউডের এ অভিনেতাকে দেখলে সেটা বোঝার উপায় আছে কি? মোটেও না। এই তো কিছুদিন আগে চুলের নতুন স্টাইল করে আলোচনায় অনিল কাপুর। বয়স বাড়লেও যেন বুড়ো হতে চান না তিনি। এমনকি বাবার কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে বললে রীতিমতো খেপে যান এই অভিনেতা।
অনিল কাপুরের জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে। হুট করে পর্দার তারকা হয়ে যাননি এ অভিনেতা। বাবা সুরিন্দর কাপুর ও বড় ভাই বনি কাপুরও প্রযোজক। লেখাপড়া করেছেন মুম্বাইয়ে। মাত্র ১২ বছর বয়সে চলচ্চিত্রের ভুবনে পা রাখেন তিনি। অবশ্য ১৯৭১ সালে শশী কাপুরের ছোটবেলার ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘তু পায়েল ম্যায় গীত’ ছবিতে, সেটি অবশ্য আলোর মুখ দেখেনি। ওই হিসাবটা বাদ দিলে উমেশ মেহেরার ‘হামারে তুমহারে’ ছবিতে ছোট্ট একটি ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে রুপালি ভুবনে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৯ সালে।
১৯৮৩ সালে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ‘ও সাত দিন’ ছবিতে। ছবিটি বাণিজ্যিক সাফল্য পাওয়ায় আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ১৯৮৪ সালে সুপারহিট ‘মশাল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ঘরে তোলেন।

আশির দশকে অনিল কাপুর হয়ে ওঠেন হিন্দি ছবির নির্ভরযোগ্য নায়ক। বাণিজ্যিক ছবিতে সাফল্য তো আসেই সেই সঙ্গে ব্যতিক্রমী ছবিগুলোতেও অভিনয়ের জন্য সমালোচকদের প্রশংসা পান। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাহেব’, ‘মোহাব্বত’, ‘মেরি জাং’—সব কটি ছবিই যেমন বাণিজ্যিক সাফল্য পায়, তেমনি তাঁর অভিনয়ও প্রশংসিত হয়। ১৯৮৬ সালে ‘চামেলি কি শাদি’ ছবিতে আমজাদ খান ও অমৃতা সিংয়ের সঙ্গে অনবদ্য কমেডি উপহার দেন অনিল কাপুর।
১৯৮৭ সালে মুক্তি পায় ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’। শ্রীদেবীর বিপরীতে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ সুপার ডুপার হিট হয়েছিল। শ্রীদেবী-অনিল জুটি যেমন সাফল্য পায়, তেমনি অনিল কাপুরও যেন ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ হয়ে ওঠেন দর্শকদের চোখে। ‘তেজাব’ মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। ব্লকবাস্টার হিট ‘তেজাব’ সূচনা করে অনিল কাপুর-মাধুরী দীক্ষিত সফল জুটির। ‘তেজাব’-এর মুন্না চরিত্রটি অনিল কাপুরকে এনে দেয় ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় ‘রাম লক্ষ্মণ’, ‘পারিন্দা’ ও ‘ঈশ্বর’। ‘রাম লক্ষ্মণ’ ও ‘পারিন্দা’ বাণিজ্যিকভাবে দারুণ সফল ছবি। ‘বেনাম বাদশাহ’ ছবিতে মন্দ মানুষ থেকে ভালো মানুষ হয়ে যাওয়া এক যুবকের চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেন তিনি ।
১৯৯২ সালে ‘বেটা’ ছবিতে বিমাতার প্রতি নিবেদিত এক সন্তানের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য আবার ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার ঝুলিতে ভরেন তিনি।
‘ভিরাসাত’, ‘বুলান্দি, ‘রামঅবতার’, ‘বেনাম বাদশাহ’, ‘অপরাধী’, ‘বাধাই হো বাধাই’, ‘১৯৪২ : আ লাভ স্টোরি’, ‘লোফার’, ‘হামারা দিল আপকে পাস হ্যায়’, ‘আরমান’, ‘ওম জয় জগদিশ’, ‘কারোবার’ ইত্যাদি ছবিতে তাঁর অভিনয় হিন্দি ছবির দর্শকদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে ।

‘নায়ক’ ছবিতে অসামান্য অভিনয় করেন অনিল কাপুর। একজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে কীভাবে এক সৎ ও সাহসী তরুণ, টিভি সাংবাদিক থেকে জননায়ক বনে যান, সেই কাহিনি নিয়ে গড়ে ওঠে ‘নায়ক’। এখানে মূল ভূমিকায় অনিল কাপুরের অভিব্যক্তি ছিল দুর্দান্ত। পার্শ্ব-চরিত্রেও অনেক ছবিতেই তিনি দর্শকের নজর কেড়ে নিয়েছেন অসাধারণ অভিনয়গুণে। ‘বিবি নম্বর ওয়ান’, ‘মন’, ‘তাল’, ‘লজ্জা’, ‘নো এন্ট্রি’, ‘ওয়েলকাম’, ‘রেইস’, ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা’ ছবিগুলোতে তাঁর উপস্থিতি দর্শক মনে রাখবেন দীর্ঘদিন। ‘পুকার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ।
২০০৮ সালে অস্কারজয়ী হলিউডি ছবি ‘স্লামডগ মিলিওনিয়ার’-এ অভিনয় করেন তিনি। এ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে ‘স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং পারফরম্যান্স বাই আ কাস্ট ইন আ মোশন পিকচার’ জয় করেন অনিল কাপুর। মার্কিন টিভি সিরিজ ‘টোয়েন্টি ফোর’-এ তাঁর কাজ সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়।

অনিল কাপুর ১৯৮৪ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী সুনিতা কাপুর, মেয়ে সোনম কাপুর, রিয়া কাপুর ও ছেলে হর্ষবর্ধন কাপুরকে নিয়ে সুখের সংসার তাঁর। বহু সুন্দরী নায়িকার বিপরীতে পর্দায় রোমান্স করলেও ব্যক্তিগত জীবনে কখনো কোনো স্ক্যান্ডালের জন্ম দেননি তিনি।
উইকিপিডিয়া ও বলিউড লাইফ