সেদিন ‘সরি’ বললে অন্য রকম হতে পারত দিলীপ কুমারের জীবন

পাকিস্তানের পেশোয়ারে দিলীপ কুমারের জন্ম
ছবি: সংগৃহীত

কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ বলিউড। তাঁর যাপিত জীবনের নানা ঘটনা শিরোনাম হয়েছে। তেমনই কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো।

ফল ব্যবসায়ী
পাকিস্তানের পেশোয়ারে দিলীপ কুমারের জন্ম। তাঁদের ছিল ফলের ব্যবসা। সেই ব্যবসা দেখাশোনার ভার কিছুদিন পালন করেছেন দিলীপ কুমার। বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে পালান দিলীপ কুমার। ঘুরতে ঘুরতে চলে যান পুনে। তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর। পুনেতে এক রেস্তোরাঁ কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে পরিচয়। ভালো ইংরেজি জানার কারণে সহজেই সেখানে কাজের সুযোগ পান দিলীপ। পরিচয় গোপন করে ক্যানটিনে একটি স্যান্ডউইচের দোকান দেন দিলীপ। কিছুদিন কাজ করে পাঁচ হাজার রুপি আয় করেন।

ফিল্মে ক্যারিয়ার শুরু চাকরি দিয়ে
১৯৪২ সালে বোম্বে টকিজে চিত্রনাট্যকার ও গল্প লেখার কাজ শুরু করেন দিলীপ কুমার। তখনো তাঁর নাম ইউসুফ খান। ভালো উর্দু জানার কারণে সহজেই চাকরি হয়ে যায়। সেই সময় তিনি ১ হাজার ২৫০ রুপি মাসিক বেতন পেতেন। সেখানেই অভিনেত্রী দেবিকা রানীর সঙ্গে পরিচয়।

১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার–ভাটা’ ছবির শুটিংয়ের সময় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন অভিনেত্রী দেবিকা রানী
ছবি: সংগৃহীত

নামবদল
১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার–ভাটা’ ছবির শুটিংয়ের সময় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন অভিনেত্রী দেবিকা রানী। তাঁকে তিনটা নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল—বামন কুমার, উদয় কুমার আর দিলীপ কুমার। শেষটাই টিকে যায়। সেই থেকে তিনি পর্দায় দিলীপ কুমার।

দীর্ঘ অপেক্ষা
দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে ১৯৪৬ সালে শুরু হয় ‘মুঘল-ই-আজম’–এর শুটিং। পরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ নানা অস্থিরতায় বন্ধ হয়ে যায় শুটিং। দেশভাগের পরে নতুন করে শুরু হয় শুটিং। অর্থনৈতিক বাধায় কাজ শেষ করতে দীর্ঘদিন লেগে যায়। সিনেমাটির কাজ যখন শেষের পথে, তখন ১৯৫৩ সালে বলিউডে মুক্তি পায় ‘আনারকলি’। ‘আনারকলি’ ও ‘মুঘল-ই-আজম’ একই গল্প নিয়েই তৈরি বলে প্রযোজক ঝুঁকি নিতে চাননি। ফলে, আবার পিছিয়ে যায় ‘মুঘল-ই-আজম’-এর মুক্তি। এই সময়ে ‘মেলা’, ‘আন্দাজ’সহ কিছু সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তা পান দিলীপ। কিন্তু ১৯৬০ সালে ‘মুঘল-ই-আজম’ মুক্তির পরে বলিউডে প্রধান নায়কদের কাতারে চলে আসেন দিলীপ কুমার।

দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে ১৯৪৬ সালে শুরু হয় ‘মুঘল-ই-আজম’–এর শুটিং
ছবি: সংগৃহীত

হলিউড–ভাগ্য
১৯৬২ সালে ডেভিড লিনের ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’য় অভিনয়ের সুযোগ পান দিলীপ কুমার। তাঁর চরিত্রের নাম ছিল শেরিফ আলী। কিন্তু লম্বা সময় দিতে হবে বলে কাজটি নেননি। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করে বিখ্যাত হয়ে যান মিসরের ওমর শরিফ। এ ছাড়া ‘তাজমহল’ সিনেমায় এলিজাবেথ টেলরের সঙ্গে দিলীপ কুমারের অভিনয়ের কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রজেক্ট বাতিল হয়।

আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক
পঞ্চাশের দশকেই দিলীপ কুমার পারিশ্রমিক নিতেন এক লাখ রুপি। ভারতে তার আগে আর কোনো অভিনেতা লাখ টাকা পারিশ্রমিক পাননি। প্রযোজকেরা বস্তায় ভরে তার বাসায় চুক্তির টাকা নিয়ে আসতেন। ভালো অভিনয়ের জন্য সেই সময় সত্যজিৎ রায় এই অভিনেতাকে ‘আলটিমেট মেথড অ্যাক্টর’ হিসেবে অবহিত করেছিলেন। আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা অশোক কুমারের অভিনয় দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন তিনি।

পঞ্চাশের দশকেই দিলীপ কুমার পারিশ্রমিক নিতেন এক লাখ রুপি
ছবি: সংগৃহীত

সরি বললে অন্য রকম হতে পারত দিলীপের জীবন

‘তারানা’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় প্রেমে পড়েন দিলীপ কুমার-মধুবালা। তাঁদের সম্পর্ক ছিল সাত বছর। পরে মধুবালার পরিবারের বিরূপ মনোভাবের কারণে তাঁদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। মধুবালার সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মধুবালা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ডাকাতদের উৎপাতের কারণে একটি সিনেমার লোকেশন দিলীপকে বদলাতে বলেছিলেন বাবা। দিলীপ সেটা শোনেননি। দিলীপকে পরে বাবার কাছে সরি বলতে বলেন তিনি। কিন্তু দিলীপ সরি বলেননি। পরে মনোমালিন্যে শেষ হয়ে যায় তাঁদের সম্পর্ক। শেষ দিন পর্যন্তও মধুবালা দিলীপকে ভালোবাসতেন। পরে ১৯৬৬ সালে সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ।

‘তারানা’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় মধুবালার প্রেমে পড়েন দিলীপ কুমার।
ছবি: সংগৃহীত

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম

অভিনয়শিল্পীদের মধ্য সর্বোচ্চ পুরস্কার জয়ের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে দিলীপ কুমারের নাম উঠেছে। ১৯ বার ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন পান, জেতেন ১০ বার। তাঁকে ফিল্মফেয়ার থেকে আজীবন সম্মাননা জানানো হয়। এ ছাড়া পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফলকে, জাতীয় পুরস্কারসহ একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তাঁকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার নিশান–ই–ইমতিয়াজ দেওয়া হয়। অভিনেতা হিসেবে প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও তিনিই পেয়েছিলেন।

১৯৬৬ সালে সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার
ছবি: সংগৃহীত