রজনীকান্ত নন, দক্ষিণের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া তারকা তাহলে কে
দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা মানেই চারটি বড় ভাষার চলচ্চিত্রশিল্প—তেলেগু, তামিল, কন্নড় ও মালয়ালম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ইন্ডাস্ট্রি অভূতপূর্ব সাফল্য ও জনপ্রিয়তার সাক্ষী হয়েছে। ‘বাহুবলী’, ‘কেজিএফ’, ‘আরআরআর’, ‘পুষ্পা’ থেকে ‘কান্তারা’—একেকটি ছবি রেকর্ড ভেঙেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা বলিউডকেও ছাপিয়ে গেছে। কেবল ঘরোয়া দর্শক নয়, বিশ্বজুড়েই এই সিনেমাগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। চিত্রনাট্যের বৈচিত্র্য, দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফি আর শক্তিশালী অভিনয়—সব মিলেই এই সাফল্য। আর সেই সাফল্যের ভাগীদার দক্ষিণের অভিনেতারা, যাঁদের পারিশ্রমিক আজ বলিউড সুপারস্টারদেরও ছাড়িয়ে গেছে। দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত দক্ষিণ ভারতীয় তারকার তালিকা।
১০. ধানুশ
আয়ের বিবেচনায় ধানুশ ১০ নম্বর অবস্থানে আছেন। তামিলের বহুমুখী অভিনেতা ধানুশ প্রতিটি ছবিতে পাচ্ছেন ৩৫ কোটি রুপি। ৫০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন, বলিউডে ‘রানাঝানা’ দিয়েও সাড়া ফেলেছেন। তাঁর গাওয়া গান ‘হোয়াই দিস কোলাভেরি ডি’ ইউটিউবে প্রথম ভারতীয় ভিডিও হিসেবে ১০ কোটির বেশি ভিউ পায়। চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটবার ফিল্মফেয়ার সাউথসহ বহু সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এখন নিয়ে অভিনয়ের সঙ্গে নির্মাণ ও প্রযোজনা নিয়েও ব্যস্ত।
৯. সুরিয়া
তামিল সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সুরিয়া একেকটি ছবির জন্য পাচ্ছেন প্রায় ৩৯ কোটি রুপি। ‘খাখা খাখা’, ‘গজনি’, ‘আয়ান’—সবই তাঁর সাফল্যের প্রমাণ। দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ছয়টি ফিল্মফেয়ার সাউথ জিতেছেন তিনি।
৮. মহেশ বাবু
তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেতা মহেশ বাবু এখন পর্যন্ত ২৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। প্রতিটি ছবির জন্য তিনি নিচ্ছেন ৮০ থেকে ১০০ কোটি রুপি। ‘ওক্কাডু’, ‘অথাডু’, ‘বিজনেসম্যান’, ‘ভরৎ আনে নেনু’ ও ‘সরকারু ভারি পাটা’ তাঁর হিট ছবি। পাঁচবার ফিল্মফেয়ার, নয়বার নান্দী ও চারবার সাইমা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
৭. রাম চরণ
‘আরআরআর’ দিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত রাম চরণ বর্তমানে নিচ্ছেন ১০০ থেকে ১৩০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক। তাঁর ঝুলিতে আছে চারটি ফিল্মফেয়ার ও দুটি নান্দী পুরস্কার।
৬. কমল হাসান
তামিল সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা কমল হাসান একাধারে হিন্দি, বাংলা, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালম—সব ভাষাতেই কাজ করেছেন। প্রতি ছবিতে তিনি পাচ্ছেন ১০০ থেকে ১৫০ কোটি রুপি। ২২০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘মুন্দ্রাম পিরাই, ‘সাগর সঙ্গম’, ‘নায়কন’, ‘পুষ্পক বিমানা’, ‘দশাবতারম’, ‘বিশ্বরূপম’, ‘কাল্কি ২৮৯৮ এডি’ তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবি।
৫. অজিত কুমার
তামিল ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় নাম অজিত কুমার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৬১টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। একেকটি ছবির জন্য তিনি নিচ্ছেন ১০৫ থেকে ১৬৫ কোটি রুপি। ‘ভারালারু’, ‘বিলা’, ‘কিরিদম’, ‘মঙ্কথা’ তাঁর জনপ্রিয় ছবি। তিনবার ফিল্মফেয়ার সাউথ ও তিনবার তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
৪. প্রভাস
‘বাহুবলী’ ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিত প্রভাস এখনো শীর্ষ পারিশ্রমিকপ্রাপ্তদের একজন। প্রতিটি ছবির জন্য পাচ্ছেন ১০০ থেকে ২০০ কোটি রুপি। তাঁর হিট ছবির তালিকায় আছে ‘ডার্লিং’, ‘মিস্টার পারফেক্ট’, ‘সালার’ ও ‘কাল্কি ২৮৯৮ এডি’। প্রভাসই একমাত্র ভারতীয় অভিনেতা, যার ছয়টি ছবি মুক্তির শুরুতেই বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটির বেশি আয় করেছে।
৩. রজনীকান্ত
দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার সর্বকালের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার রজনীকান্ত। সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও তিনি এখনো পারিশ্রমিকের দিক থেকে শীর্ষে। ১২৫ থেকে ২৭০ কোটি রুপি নিচ্ছেন তিনি প্রতিটি ছবিতে। ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৭০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন, বিভিন্ন ভাষায়। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘কুলি’ আয় করেছে ৫০০ কোটির বেশি রুপি। দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, পদ্ম বিভূষণসহ বহু সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
২. জোসেফ বিজয় (থালাপতি)
তামিলের ‘থালাপতি’ বিজয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা। একেকটি ছবির জন্য তিনি নিচ্ছেন ১৩০ থেকে ২৭৫ কোটি রুপি। বর্তমানে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত বিজয়ের প্রথম ছবি ‘ঘিল্লি’ (২০০৪) ছিল প্রথম তামিল ছবি, যা ৫০ কোটির ঘর পেরোয়। ‘থিরুপাচ্চি’, ‘পোক্কিরি’ তাঁকে শীর্ষনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। সাম্প্রতিক ব্লকবাস্টার ‘লিও’ ও ‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য।
১. আল্লু অর্জুন
তেলেগুর সুপারস্টার আল্লু অর্জুন ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ দিয়ে ঘরে ঘরে পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন। এর সিকুয়েল ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ গত বছর মাত্র ১৩ দিনে বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৪০০ কোটির বেশি আয় করেছে, শুধু ভারতে ৯৫৩ কোটি। বর্তমানে তিনি প্রতি ছবিতে পাচ্ছেন প্রায় ৩০০ কোটি রুপি, যা তাঁকে কেবল দক্ষিণ ভারত নয়, পুরো দেশের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা বানিয়েছে। ২০০৩ সালে ‘গঙ্গোত্রি’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা আল্লু অর্জুনের ঝুলিতে আছে ছয়টি ফিল্মফেয়ার, তিনটি নান্দী আর একটি জাতীয় পুরস্কার।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস ইন্ডিয়া, পিংকভিলা