সাহসী দৃশ্যে তোলপাড়, দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে প্রেম, এরপর আড়ালে
‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’, মন্দাকিনীকে মনে রাখার জন্য বোধ হয় এক সিনেমাই যথেষ্ট। ১৯৮৫ সালে মুক্তির পর চার দশক পেরিয়ে গেছে। তবে সিনেমাটিতে মন্দাকিনীর আবেদনময়ী উপস্থিতি কে ভুলতে পারে। এই সিনেমায় সাহসী দৃশ্যে হাজির হয়ে হাজারো তরুণের ঘুম কেড়ে নেওয়া মন্দাকিনীর নিজের জীবনও কম বৈচিত্র্যময় নয়। সম্প্রতি নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে মন্দাকিনীর সঙ্গে মুম্বাইয়ের অপরাধজগতের ডন দাউদ ইব্রাহিমের সম্পর্ক।
বলিউডে অভিষেক
রাজ কাপুরের হাত ধরে বলিউডে এসেছিলেন অনেক তারকা। যাঁদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে নিজেদের কাজের মাধ্যমে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। মন্দাকিনীও রাজ কাপুরের হাত ধরে পা রেখেছিলেন বলিউডে।
মন্দাকিনীর জন্ম ১৯৬৩ সালের ৩০ জুলাই উত্তর প্রদেশের মিরাটে। মন্দাকিনী নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম কিন্তু ইয়াসমিন জোসেফ। তবে এ নামে তাঁকে চেনেন খুব কম লোকই। মাত্র ১৬ বছর বয়সে রাজ কাপুরের চোখে পড়েন। পরে রাজ কাপুরই তাঁর নাম বদলে মন্দাকিনী রাখেন।
প্রথম ছবি ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ যখন মুক্তি পায়, তখন মন্দাকিনীর বয়স ২২ বছর। এ ছবিতে তাঁকে দেখা যায় রাজীব কাপুরের বিপরীতে অভিনয়ে। মন্দাকিনী গঙ্গার ভূমিকায় অভিনয় করেন, আর রাজীব কাপুরের চরিত্রের নাম ছিল নরেন্দ্র।
সিনেমা মুক্তির পর তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। সে সিনেমার কয়েকটি দৃশ্যে খোলামেলা অভিনয় করে রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন মন্দাকিনী। সত্তর-আশির দশকের দর্শকমাত্রই জানেন, এ নাম বলিউডে তখন কেমন আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। তবে এ সিনেমায় দারুণ অভিনয় করেন বলিউডে সদ্য অভিষেক হওয়া মন্দাকিনী। এ সিনেমার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়নও পেয়েছিলেন। তবে শুরুতে রাজ কাপুর এই ছবিতে পদ্মিনী কোলহাপুরেকে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে রাজি হননি পদ্মিনী।
আরও সিনেমা
পরে তিনি আরও কয়েকটি ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেন। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘ড্যান্স ড্যান্স’, আদিত্য পাঞ্চোলিতের সঙ্গে ‘কাহা হ্যায় কানুন’ এবং গোবিন্দর সঙ্গে ‘পেয়ার কারকে দেখো’ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু তাঁর প্রথম ছবির মতো বাকিগুলো এত আলোচিত ছিল না।
বহুল চর্চিত ব্যক্তিজীবন
মন্দাকিনী তাঁর সিনেমার চেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে। কুখ্যাত গ্যাংস্টার ও আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তিনি নানা সময়ে হয়েছেন আলোচনার মধ্যমণি। বলিউডপাড়ার জোর গুঞ্জন, তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একটি ক্রিকেট ম্যাচে তাঁদের দুজনকে একসঙ্গে দেখা গেলে সেই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলে। সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ না খুললেও এটা ছিল অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’।
মন্দাকিনী-দাউদের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে একবার একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে এক রোমহর্ষক সংবাদ। প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্দাকিনীকে প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্রে না নেওয়ায় দাউদ ইব্রাহিম এক চলচ্চিত্র নির্মাতাকে হত্যা করেন!
মুম্বাই হামলায় দৃশ্যপট বদল
তবে এ পটভূমি বদলে যায় ১৯৯৩ সালে। মুম্বাইয়ে বোমা বিস্ফোরণে দাউদ ইব্রাহিম মূল সন্দেহভাজনের তালিকায় ছিলেন। এ কারণে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে মন্দাকিনীকেও খুঁজতে থাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এ ঘটনার পর মন্দাকিনী আত্মগোপনে চলে যান। পরে দাউদের সঙ্গে তাঁর কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার ব্যাপার অস্বীকার করেন।
কয়েক বছর পর মন্দাকিনী সব ছেড়ে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী হয়ে যান। তিনি দালাই লামার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি বৌদ্ধধর্মের এক প্রাক্তন সন্ন্যাসীকে বিয়ে করেন। তাঁর নাম কাগিউর টি রিনপোচ ঠাকুর। স্বামীর পদবি অনুসরণ করে তিনি তাঁর নামের শেষে ঠাকুর পদবি যোগ করেন। তিনি নিজেকে এখন ইয়াসমিন জোসেফ ঠাকুর নামেই পরিচয় দিয়ে থাকেন। বিয়ের পর তাঁদের একটি পুত্র ও কন্যাসন্তান হয়। তাঁর ছেলের নাম রাব্বিল, মেয়ের নাম রাব্বে ইয়ান্না।
৩০ বছর নেই অভিনয়ে
১৯৯৬ সালে ‘জোরদার’ ছবির পর আর সিনেমা করেননি মন্দাকিনী। চলচ্চিত্র অঙ্গনকে বিদায় জানানোর পর কেটে গেছে দীর্ঘ ২৯ বছর। তবে গত বছর এ অভিনেত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি আবার অভিনয়ে ফিরতে চান। তিনি সে সময় বেশ কিছু সিরিজ নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন শোনা যায়। চলতি বছরের শুরুতে চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য একটি পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাঁকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
উধাও পরিচালক
বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে নানা কথা ভাগ করে নেন অভিনেত্রী মন্দাকিনী। জানান, তাঁর স্বামী কাগিউর টি রিনপোচ ঠাকুর ছিলেন হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা। প্রথম যখন দেখা হয় তাঁদের, হিন্দি একেবারেই বলতে পারতেন না হবু বর। কীভাবে তাহলে পরস্পরকে মনের কথা বোঝাতেন তাঁরা?
মন্দাকিনী জানান, তাঁর হবু শাশুড়ি হিন্দি জানতেন। তাঁদের কথোপকথনের সময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকতেন তিনিই। এই সাক্ষাৎকারে তাঁর পেশাগত জীবন সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণাও ভেঙে দেন অভিনেত্রী। ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবির বিপুল সাফল্যের পরও কেন তিনি আরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেননি, সে কথাও জানান মন্দাকিনী। তিনি বলেন, অনেক প্রস্তাবে তিনি প্রাথমিকভাবে রাজি হয়েছিলেন। একটি ছবির কাজ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ১০ দিনের মধ্যে পরিচালক রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যান। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি আর। সৌভাগ্যক্রমে ছবির জন্য কিছু টাকা অগ্রিম পেয়েছিলেন তিনি। সেটি ভাগ্য বলেই মানেন মন্দাকিনী।