চিকিৎসকের নিষেধে পানি দিতে পারেননি, সেই রাতেই মা মারা যান

আরশাদ ওয়ার্সি। ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘জলি এলএলবি ৩’ সিনেমা দিয়ে এখন আলোচনায় আরশাদ ওয়ার্সি। অভিনেতা পর্দায় নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সাক্ষাৎকারে বেশির ভাগ সময় কথা বলেন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে। তবে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরশাদ ওয়ার্সি কথা বলেছেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে।
আরশাদ ওয়ার্সি জানান, যখন তাঁর মাত্র ১৪ বছর বয়স, নিজের দুই অভিভাবককেই হারিয়েছিলেন।
সম্প্রতি রাজ শামানির পডকাস্টে অরশাদ উল্লেখ করেন, পরিবার নিয়ে তাঁর খুব বেশি স্মৃতি নেই। কারণ, শৈশবের বেশির ভাগ সময়ই তিনি বোর্ডিং স্কুলে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব নিয়ে বলতে গেলে আমার স্কুলের স্মৃতি আমার পরিবারের স্মৃতির চেয়ে বেশি মনে আছে। আমি মাত্র আট বছর বয়সে বোর্ডিং স্কুলে গিয়েছিলাম।’

মাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আরশাদ বলেন, তাঁর মায়ের শেষ স্মৃতি ভয়ংকর; আজও তাঁকে তাড়া করে। তিনি স্মরণ করেন, বাবার মৃত্যুর পরে তাঁর মায়ের কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং তিনি ডায়ালাইসিসে ছিলেন, ‘আমার মা একজন সাধারণ গৃহিণী ছিলেন। দারুণ রান্না করতেন। তাঁর কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা আমাদের বলেছিলেন, তাঁকে পানি দেবেন না। কিন্তু তিনি বারবার পানি চাইছিলেন। আমি “না” বলেই যাচ্ছিলাম। তিনি মারা যাওয়ার আগে রাতে আমাকে ডাকলেন। আবার পানি চাইতে শুরু করলেন। সেই রাতে তিনি মারা যান, আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়ি।’
আরশাদ আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, যদি তাঁকে পানি দিতাম; তারপরও মারা যেতেন। তবে সারা জীবন ভাবতাম, তিনি আমার কারণেই মারা গেলেন।’

আরশাদ ওয়ার্সি। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে

তবে এটা নিয়ে  আরশাদ ওয়ার্সির ভিন্ন উপলব্ধিও আছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমি মনে করি, তাঁকে পানি দিতে পারতাম। তখন আমি শুধু চিকিৎসকের কথা শুনেছিলাম।’
অভিনেতা জানান, কৈশোরে মা-বাবাকে হারিয়ে তিনি একা হয়ে যান। নিজে নিজেই সব শিখতে হয়েছে। আরশাদ ওয়ার্সির ভাষ্যে, ‘আমি বয়সের চেয়ে অনেক পরিপক্ব ছিলাম। কারণ, চোখের সামনে অনেক কিছু দেখেছি। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। আমরা ছোটবেলায় অনেক বড় বাড়িতে থাকতাম, এরপর বাড়ি ছোট হতে থাকে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে আমি সেভাবে কাঁদিনি। কারণ, নিজেকে পরিণত দেখাতে চেয়েছি। কয়েক সপ্তাহ পরে যখন বুঝলাম কী ঘটেছে, তখন কাঁদি।’

আরও পড়ুন

আরশাদ স্মরণ করেন, তিনি বিভিন্ন জায়গায় গানের শো করতেন; প্রতি শো থেকে তিনি ১৭৫ রুপি পেতেন। বাড়ির খরচ, বিল আর মায়ের চিকিৎসা মিলিয়ে জীবন ছিল অনেক কঠিন।

আরশাদ ওয়ার্সি। আইএমডিবি

আরশাদ ওয়ার্সি বলেন, ‘আমি সাহসী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু জীবন খুব কঠিন ছিল। একটা সময়ের পর যত চেষ্টাই করি না কেন, সব ভেঙে পড়ে। এটি খুব ভয়ংকর সময় ছিল। আমি সপ্তাহে কয়েক শ রুপি উপার্জন করতাম, আর মায়ের সাপ্তাহিক ডায়ালাইসিস খরচ ছিল ৮০০ রুপি। সেই সময় আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকে অনেক টাকা উপার্জন করতে হবে।’

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে