শিল্পা–রাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, জন্মদিনেই পুলিশের জেরা

শিল্পা শেঠি ও রাজ কুন্দ্রাঅভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

আবারও বড় বিপদের মুখে পড়লেন বলিউড তারকা শিল্পা শেঠি ও তাঁর স্বামী ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রা। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮১ কোটি টাকা আর্থিক প্রতারণার মামলায় অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা সমন পাঠিয়েছে এই দম্পতিকে।
প্রথমে তাঁদের ১০ সেপ্টেম্বর হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ কুন্দ্রা সময় চাইলে ইওডব্লিউ নতুন করে তাঁকে গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক দিয়েছে। বিশেষ দিনও বটে; কারণ, ওই দিনই রাজ কুন্দ্রার ৫০তম জন্মদিন। তবে জন্মদিনের আনন্দের বদলে তাঁর ‘জুটেছে’ পুলিশি জেরার চাপ।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ ও শিল্পা যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নোটিশ জারি করা হয়েছে। শুধু তাঁদেরই নয়, ভারতের জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইব্যুনালের (এনসিএলটি) অডিটরকেও তলব করা হয়েছে। এ মামলার শুরুতে রাজ ও শিল্পা—দুজনকেই অন্তত তিনবার তলব করা হয়েছিল। তখন তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে তাঁরা লন্ডনে থাকেন, তাই তাঁদের হয়ে আইনজীবী হাজির হবেন। কিন্তু অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা জানিয়েছে, আইনজীবীর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অসম্পূর্ণ ও অস্পষ্ট। এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক এফআইআর করা হয়।

অভিযোগের বিস্তারিত
মুম্বাইয়ের জুহু থানায় করা এফআইআর অনুযায়ী, লোটাস ক্যাপিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক দীপক কোঠারি অভিযোগ করেছেন যে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি শিল্পা ও রাজের কোম্পানি ‘বেস্ট ডিল টিভি প্রাইভেট লিমিটেড’-এ ৬০ দশমিক ৪৮ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছিলেন।

আরও পড়ুন
রাজ কুন্দ্রার সঙ্গে শিল্পা শেঠি
অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

তাঁর দাবি, ওই অর্থ ব্যবসায়িক কাজে না লাগিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন শিল্পা ও রাজ। দীপক কোঠারির আইনজীবী জৈন শ্রফ জানান, তাঁর মক্কেল যথাযথ নথি ও প্রমাণসহকারে এই বিনিয়োগ করেছিলেন। অভিযোগ হলো, কোম্পানি তাঁকে বিভ্রান্ত করেছে এবং প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে।

শিল্পার পক্ষের বক্তব্য

অন্যদিকে শিল্পা শেঠির আইনজীবী প্রশান্ত পাটিল সব অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, অভিযোগকারী নিজে ওই কোম্পানির অংশীদার ছিলেন এবং তাঁর ছেলে পরিচালকের পদে ছিলেন। এমনকি শিল্পা ও অভিযোগকারীর মধ্যে একটি ইকুইটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর মানে হলো কোম্পানি লাভ করলে তা ভাগ হবে দুই পক্ষের মধ্যে আর লোকসান হলে সেটিও ভাগাভাগি হবে। তাই শিল্পা-রাজকে দায়ী করার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন
শিল্পা শেঠি
অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

রাজ-শিল্পার পুরোনো বিতর্ক

এমন অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও রাজ কুন্দ্রা ও শিল্পা শেঠির বিরুদ্ধে একাধিকবার আর্থিক তছরুপ, কর ফাঁকি ও বিনিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল। কয়েক বছর আগে পর্নোগ্রাফি-সংক্রান্ত একটি মামলায়ও রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সামনে কী অপেক্ষা করছেবর্তমানে রাজ-শিল্পা দম্পতিকে ঘিরে বলিউডে চলছে জোর আলোচনা। তাঁদের ভক্তরা হতাশ আর বিনিয়োগকারী মহল চোখ রাখছে আদালতের রায়ের দিকে। এখন দেখার বিষয়, ইওডব্লিউর তদন্তে নতুন কী বেরিয়ে আসে। আইনবিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, যদি দীপক কোঠারির আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এই দম্পতির বিরুদ্ধে বড় ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আর যদি শিল্পা-রাজের যুক্তি টেকে, তবে অভিযোগকারীকেই বিপদে পড়তে হবে।সব মিলিয়ে, রাজ কুন্দ্রার জীবনের অর্ধশতকের জন্মদিনে উপহার এসেছে নতুন বিতর্ক। আর শিল্পা শেঠির জন্যও এ যেন এক নতুন ঝড়ের শুরু।