‘হোটেলের বন্ধ ঘরে আমায় একাকিত্ব ঘিরে ধরে’

দীর্ঘদিন পর আবার রোমান্টিক চরিত্রে আর মাধবন। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘আপ জ্যায়সা কোই’-তে ফাতিমা সানা শেখের সঙ্গে রোমান্সে মেতেছেন এই অভিনেতা। বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সে নেটফ্লিক্স অফিসে স্থানীয় তিন সাংবাদিককে নিয়ে মাধবনের সঙ্গে আড্ডা দিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য
আর মাধবন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

শুরুতে জানতে চাইলাম, পর্দায় ‘শ্রীরেণু’ হয়ে ওঠা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাধবন হালকা হেসে বলেন, ‘ভীষণই চ্যালেঞ্জিং ছিল। আপ জ্যায়সা কোই-এর জন্য আমাকে রোমান্সের নতুন ভাষা শিখতে হয়েছে। র‍্যাহনা হ্যায় তেরে দিল মেঁর রোমান্স অন্য স্বাদের ছিল। চরিত্রের সঙ্গে নিজের বয়স যথাযথ দেখানোরও এক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে আমরা দুজনই (ফাতিমা) প্রায় নিজেদের বয়সের কাছাকাছি চরিত্রে অভিনয় করেছি। এটা রোমান্টিক ছবি, তাই ফাতিমার সঙ্গে আমার রসায়ন যাতে ভালো হয়, সেটা মাথায় রাখতে হয়েছিল। এ জন্য আমরা ওয়ার্কশপও করেছিলাম।’

আলোচনায় উঠে আসে মাধবনের স্ত্রী সরিতার কথা। অভিনেতা জানান, সরিতার সঙ্গে রোমান্সের কিছু অনুভূতি তিনি ‘শ্রীরেণু’র মাধ্যমে পর্দায় তুলে ধরেছেন। ‘যখন আপনি মনপ্রাণ দিয়ে কাউকে ভালোবাসেন আর তার সঙ্গে সারা জীবন কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার কাছে আত্মসমর্পণের প্রশ্ন আসে। আর তা শারীরিক ভাষা ও অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট হয়। সরিতার ক্ষেত্রে আমার তা–ই হয়েছিল। সেই অনুভূতি আমি “শ্রীরেণু”র মাধ্যমে আবার তাজা করেছি,’ বলেন মাধবন।

‘আপ জ্যায়সা কোই’ সিনেমাটির পোস্টার

বিহারের জামশেদপুরে বড় হওয়া মাধবন জানান, তিনি কখনোই অভিনেতা হতে চাননি। মাদ্রাজ আইআইটির ছাত্র ছিলেন। ‘বিহারের পরিবেশ থ্রি ইডিয়েটস ছবির মতো, মানে আপনাকে যেনতেন প্রকারে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। না হলে বিয়ের যোগ্য নন। এমন আবহে বড় হওয়ার কারণে সিনেমার প্রতি কোনো টান আমার ছিল না। আমি মোটেও সিনেমার ভক্ত নই। কাকতালীয়ভাবে এ জগতে আসা। ছোট পর্দা দিয়েই শুরু করেছিলাম। দিনে তখন তিন হাজার টাকা পেতাম। অনেকে সুযোগের জন্য মরিয়া হয়ে যেত। তাদের চোখেমুখে ব্যাকুলতার ছাপ স্পষ্ট ছিল। কিন্তু আমি কখনো ব্যাকুল ছিলাম না। তাই হয়তো আমাকে সহজে গ্রহণ করত সবাই। অভিনয়ের প্রশিক্ষণও নিইনি, যা আমার সবচেয়ে বড় শক্তি,’ বললেন থ্রি ইডিয়টস-এর ফারহান কুরেশি।

৩২ বছর বয়সে রোমান্টিক হিরো হিসেবে র‍্যাহনা হ্যায় তেরে দিল মেঁ-তে এসেছিলেন মাধবন। এর পর থেকে তরুণীদের হৃদয়ে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন। ‘আমি তাড়াতাড়ি বুঝেছিলাম, রোমান্টিক চরিত্রে বারবার এলে একই ইমেজে বেঁধে ফেলা হবে। তাই অন্য কিছু খুঁজে বেড়াতাম। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ছবি ছিল মণিরত্নম, কমল হাসান, আর বালা চন্দর স্যারের মতো মহানদের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে কাজ করার পর অন্য পরিচালকেরা আমাকে তাদের ছবিতে নিতে চাইত না। তবে তখন অনেক তামিল কমার্শিয়াল হিট ছবি দিয়েছি। একবার সুইজারল্যান্ডে গেরুয়া প্যান্ট আর সবুজ শার্ট পরে তামিল ছবির নাচের দৃশ্য শুট করার সময় মনে হয়েছিল, “আরে, আমি কী করছি!” নিজেকে যেন কোথাও পাচ্ছিলাম না। তাই মাঝখানে সিনেমা থেকে দূরে ছিলাম। এখন বলতে পারি, আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময় চলছে।’

আর মাধবন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

শয়তান ও কেশরী ২-এ খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাধবন। নতুন নতুন চরিত্রে নিজেকে অন্বেষণ করতে ভালোবাসেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘এখানে আমার কৃতিত্ব কম, পরিচালকদের কৃতিত্ব বেশি। কারণ, আমি সিনেমা খুব ভালো বুঝি না। বিবেক সোনি আমাকে “শ্রীরেণু” চরিত্রের জন্য ভেবেছেন, তাই তাঁরই কৃতিত্ব। তনু ওয়েডস মনুর “মনু”–কে “শয়তান” হিসেবে ভাবার কৃতিত্ব অবশ্য বিকাশ বহেলকে দিতে হয়। আমি সব সময় পরিচালকদের ওপর আস্থা রাখি।’

আর মাধবন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আপ জ্যায়সা কোই-এর ‘শ্রীরেণু’কে অনেক সময় নিঃসঙ্গ মনে হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে মাধবন একাকিত্বে ভোগেন? ‘ভিড়ের মধ্যেও মানুষ আজ বরং একা। আমাদের দুনিয়া এখন ডিজিটাল দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ। আমরা আমাদের “ইমোশন”–কে “ইমোজি” বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করি। আমি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব, এমন স্বপ্নে বাঁচি। কিন্তু মাসের পর মাস পরিবার থেকে দূরে থাকি। সরিতা ছেলেকে নিয়ে ছুটছে, আমি শুটিংয়ে ব্যস্ত। আমাদের সাজানো সংসার একা পড়ে আছে। শুটিংয়ে থাকলে ভালো লাগে, কিন্তু হোটেলের বন্ধ ঘরে একাকিত্ব ঘিরে ধরে। তখন নিজেকে প্রশ্ন করি, এই বয়সে কি আমি ঠিক পথেই আছি?’ একটু উদাস হয়েই বললেন মাধবন।

আপ জ্যায়সা কোই-এর অনেক অংশ কলকাতায় শুট হয়েছে। কলকাতার প্রসঙ্গ উঠতেই মাধবন বলেন, ‘কলকাতা শুনলেই সবার প্রথমে খাবারের কথা আসে। শর্ষের তেল ছড়িয়ে ঝালমুড়ি, রোল এসব কোথাও পাওয়া যায় না। কলকাতার মানুষ খুব আন্তরিক। এই শহর আমার কাছে খুবই কাছের।’

আরও পড়ুন