ভারতের প্রথম নারী ‘সুপারস্টার’, ‘জুবিলি গার্ল’ মমতাজকে চেনেন কি
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস অনেক পুরোনো। উনিশ শতকের শুরুর দিকে দাদাসাহেব ফালকের হাত ধরে মোশন পিকচারের যাত্রা শুরু হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্রে এই ধারার পথপ্রদর্শক মনে করা হয় তাঁকে। দাদাসাহেবের এই নতুন পথের যাত্রা চলচ্চিত্র ইতিহাসের বাঁক বদলে দিয়েছিল। ওই সময়ের তারকাদের মধ্যে ছিলেন কে এল সায়গল, করণ দেওয়ান, অশোক কুমার প্রমুখ। জেনে আশ্চর্য হতে হয়, তাঁদের বিপরীতে ছিলেন একজন কিশোরী। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন তিনি। পরপর তাঁর চারটি ছবি জুবিলি হিট হয়। চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর সাফল্যে রীতিমতো সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ২৬ বছর বয়সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আকাশছোঁয়া খ্যাতি, স্বর্ণখচিত ক্যারিয়ারকে ‘বাই’ বলে দেন তিনি। চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে গুটিয়ে নেন নিজেকে। নাম তাঁর মমতাজ, পুরো নাম মমতাজ শান্তি।
বলা হয়ে থাকে, ১৬ বছর বয়সে তিনি অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু এটা ছিল প্রধান চরিত্রে অর্থাৎ নায়িকা হিসেবে। এর আগে পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রে ১৯৩৭ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৪২ সালে। তখন তাঁর বয়স ১৬ বছর। রূপ কে. সরি পরিচালিত সিনেমাটির নাম ‘মাংতি’ (পাঞ্জাবি সিনেমা)।
এই সিনেমায় মমতাজের সহশিল্পী ছিলেন মাসুদ পারভেজ। হিন্দি সিনেমায়ও তাঁর পথ চলার শুরু ১৯৪২ সালে। সিনেমার নাম ‘বসন্ত’। সিনেমাটি ওই সময়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। জানা যায়, ৭৬ সপ্তাহ ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলেছিল ‘বসন্ত’। পাশাপাশি স্থান করে নিয়েছিল সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমার তালিকাতেও।
পরের বছর আবারও তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মমতাজ। তাঁর অভিনীত ‘কিসমেত’ সে বছর ১ কোটি রুপি আয় করে। যা ভারতীয় সিনেমায় ছিল প্রথমবার কোটি টাকা আয়ের মাইলফলক। পরের কয়েক বছরে ‘ঘর কি ইজ্জত’, ‘আহুতি’র মতো হিট ছবিতে অভিনয় করেন মমতাজ। ওই সময়ের প্রায় সব শীর্ষ তারকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি।
হঠাৎ সিনেমা থেকে অবসর নিলেন কেন? ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চল্লিশ দশকের শেষ দিকে চলচ্চিত্র নির্মাতা উয়ালী সাহাবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মমতাজ। পরে পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। তবে তাঁকে নিয়ে এখনো কথা হয়। মমতাজ অভিনীত ‘কিসমেত’ ও ‘বসন্ত’ মুক্তির প্রায় আট দশক পরে ২০২১ সাল পর্যন্ত সর্বাধিক দেখা শীর্ষ ৫০টি চলচ্চিত্রের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছে।
মমতাজ শান্তি ১৯৮৯ সালে ৬৩ বছর বয়সে না–ফেরার দেশে পাড়ি দেন।