আমি নেপোটিজমের ফল: রণবীর কাপুর
বলিউডে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নতুন নয়। তারকা পরিবারের কাউকে সামনে পেলেই গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটাক্ষ করেন অনেকে। তবে এক সাক্ষাৎকারে রাখঢাক না রেখে রণবীর কাপুর স্বীকার করে নিয়েছেন—তারকা পরিবারের সদস্য হিসেবেই তিনি বলিউডে এসেছেন। তবে অভিনেতা এ–ও মনে করিয়ে দেন, নিজের জায়গা ধরে রাখতে তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে।
নির্মাতা সুভাষ ঘাইয়ের ফিল্ম ইনস্টিটিউট হুইসলিং উডস মুম্বাইয়ে আয়োজন করেছে ‘সেলিব্রেট সিনেমা ২০২৫’ উৎসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে হয় রাজ কাপুর ও গুরু দত্তকে নিয়ে বিশেষ একটি আলোচনা। সেখানে হাজির হয়ে রণবীর কাপুর নানা বিষয়ে কথা বলেন।
‘আমার জীবন সহজ ছিল’
‘আমি নেপোটিজমের ফলেই এসেছি, এটা সত্য। আমার জীবনটা অনেক সহজ ছিল, তবে আমাকে সব সময় কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কারণ, আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি এমন একটি পরিবারের সন্তান; যদি আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি না থাকে, নিজের নামে পরিচিত না হই, তবে চলচ্চিত্র সফল হতে পারব না’, বলেন রণবীর।
অনুষ্ঠানে রণবীর আরও বলেন, ‘আপনারা আমার পরিবারের অনেক সাফল্য উদ্যাপন করেন, তবে অনেক ব্যর্থতাও আছে। যেমনটা সাফল্য থেকে শিখি, ব্যর্থতা থেকেও শেখার আছে।’
শৈশব ও চলচ্চিত্র পরিবারের প্রভাব
অনুষ্ঠানে ৪৩ বছর বয়সী অভিনেতা রণবীর জানান, ‘কাপুর পরিবারের সন্তান হওয়ার বিষয়টি আমার জন্য অন্য কোনো সাধারণ পরিবারের মতোই ছিল। আমি কোনো বিশেষ সুবিধার কথা জানতাম না।’ রণবীর বলেন, তিনি শৈশবে দেখেছেন কীভাবে সংগীত পরিচালক, গায়ক ও গীতিকাররা তার দাদু রাজ কাপুরের সিনেমার জন্য গান তৈরিতে তাঁর বাড়িতে আসতেন।
‘অনেক বিতর্ক হতো, তবে ঘরোয়া রকমের নয়। তারা একটি দৃশ্য বা গানের জন্য কোন শব্দটি ঠিক, সেটি নিয়ে তর্ক করতেন’, বলেন রণবীর।
চলচ্চিত্রকে দলগত প্রচেষ্টা হিসেবে শেখা
রণবীর, যিনি ‘ওয়েক আপ সিড’, ‘রকস্টার’, ‘বরফি’, ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ও ‘অ্যানিমেল’ সিনেমার জন্য পরিচিত; বললেন তিনি শৈশব থেকেই বুঝতে পেরেছেন যে চলচ্চিত্র তৈরি একটি দলগত প্রচেষ্টা।
‘চলচ্চিত্র পরিচালনা কোনো একক কাজ নয়, এটি অনেক মানুষ ও শিল্পীর মিলিত প্রচেষ্টা। একটি কল্পনা বিশ্বাস করা এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করা। আমার দাদু বলতেন, “যা করতে পারো তা করো, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়। যদি সেটি করতে পারো, তবে এর চেয়ে বড় কিছু নেই।”’
অভিনয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি
অনুষ্ঠানে রণবীর আরও বলেন, তাঁর অভিনয়ের পদ্ধতি সিনেমা এবং পরিচালকের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। ২০০৫ সালে পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালির সিনেমা ‘ব্ল্যাক’-এ সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তিনি উল্লেখ করেন।
রণবীর জানালেন, ‘বানসালি যখন দৃশ্য লিখতেন এবং অভিনেতারা কীভাবে অভিনয় করেন, তা পর্যবেক্ষণ করতাম। আমি তাঁদের অনুকরণ করছিলাম না; বরং ভাবতাম, আমি কীভাবে দৃশ্যটি পরিচালনা করব? কিন্তু যখন পেশাদার হয়ে কাজ শুরু করলাম, তখন বুঝেছি প্রতিটি সিনেমা আলাদা। কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই।’
রণবীর যোগ করেন, ‘অভিনেতা হিসেবে নমনীয় হতে হবে। একটিই পদ্ধতিতে কাজ করার কথা ভাবা যাবে না। প্রত্যেক পরিচালক গল্প বলার ভিন্ন উপায় ব্যবহার করেন। যদি পরিচালক কোনো দৃশ্য বিশেষভাবে চান, তা পূরণ করাই অভিনেতার দায়িত্ব।’
বিনোদনের গুরুত্ব ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি
রণবীর অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের অভিনেতা ও পরিচালকদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘ফিল্ম ইনস্টিটিউট সব সময় এমন জায়গা, যেখানে স্বপ্ন ও প্রতিভার উদ্যম ছড়িয়ে থাকে। আমার স্বপ্ন হলো কোনো সময় আমি অভিনয় প্রশিক্ষক হতে পারব, অভিনয়ের টিপস দিতে পারব এবং আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারব।’
রণবীর আরও বলেন, ‘এটি কেবল অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার জন্য নয়; বরং আমি এমন পর্যায়ে আছি যেখানে নতুন প্রজন্মের উদ্যম থেকে আমি অনেক শক্তি পাব। আমার ক্যারিয়ারের এই পর্যায়টি উপভোগ করছি।’
রণবীরকে সামনে সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘লাভ অ্যান্ড ওয়ার’ ও নিতেশ তিওয়ারির ‘রামায়ণ’ সিনেমায় দেখা যাবে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি