‘ব্যর্থতার কষ্ট বড়জোর ছয় ঘণ্টা থাকে’

মনোজ বাজপেয়িঅভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
চলচ্চিত্রে ৩০ বছর পার করে ফেলেছেন মনোজ বাজপেয়ি। এই প্রথম অ্যাকশন তারকা হিসেবে বড় পর্দায় এলেন তিনি। গত ২৪ মে অপূর্ব সিং কার্কি পরিচালিত ‘ভাইয়া জি’ ছবিতে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক তারকা হিসেবে দেখা গেছে তাঁকে। সিনেমাটি মুক্তি উপলক্ষে অভিনেতার মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি

আলাপের শুরুতে মনোজ জানান, শুরুতে এ ছবিটি করতে মোটেও রাজি ছিলেন না তিনি। তাঁর ভাষ্যে, ‘আসলে আমি নিজেকে কোনো দিনই বাণিজ্যিক সিনেমার নায়ক হিসেবে যোগ্য করে তুলতে পারিনি। কিন্তু অপূর্ব কিছুতেই আমাকে ছাড়া ছবিটি করতে রাজি ছিলেন না। আমি তাঁর সঙ্গে এর আগে “স্রিফ এক বান্দা কাফি হ্যায়” ছবিটি করেছি। তাই তাঁর কাজের প্রতি আমার আস্থা ছিল। তাঁর জেদের কাছে আমি শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছিলাম।’

আরও পড়ুন

ওটিটিতে একের পর এক হিট প্রকল্পে কাজ করেছেন মনোজ। মনোজের কাছে সাফল্য ও ব্যর্থতার সংজ্ঞা জানতে চাইলে হেসে বলেন, ‘সফলতা বা ব্যর্থতা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। যেটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা নিয়ে আমি ভাবতে বসি না। কোনোটিই বেশি গুরুত্ব দিই না। ব্যর্থতার দুঃখ বড়জোর ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে।’

ক্যারিয়ারের শুরুতে মনোজ ভাবতেও পারেননি যে ৩০ বছরের দীর্ঘ পথ তিনি অতিক্রম করবেন। আজ তাঁর ঝুলিতে এক শ ছবি। ‘ভাইয়া জি’র মাধ্যমে সেঞ্চুরি হাঁকালেন অভিনেতা। এই দীর্ঘ পথচলার পেছনে কার কৃতিত্ব বেশি—ভাগ্য না পরিশ্রম? প্রশ্ন শুনে মনোজ কিছুক্ষণ ভাবলেন।

মনোজ বাজপেয়ি
এএনআই

বললেন, ‘নিশ্চয়ই একটা সফলতার পেছনে এই দুইয়ের কৃতিত্ব থাকে। তবে ভাগ্য আমাকে কোনো দিনই সেভাবে সহায়তা করেনি। আমার এই ভ্রমণের পেছনে অনেকেরই অবদান আছে। দারুণ দারুণ সব পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যখনই হারিয়ে যেতে বসেছি, কোনো না কোনো পরিচালক আবার আমাকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছেন। কাজের প্রতি আমার বরাবরই একাগ্রতা আছে। আমি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও জেদি। সহজে হাল ছাড়ি না।’

বলিউডের তথাকথিত নায়কোচিত চেহারা না হয়েও মনোজকে মূল নায়কের চরিত্রে দেখা গেছে।

‘ভাইয়া জি’র পোস্টার
অভিনেতার ফেসবুক থেকে

‘ভাইয়া জি’রএ প্রসঙ্গ উঠতে অভিনেতা বলেন, ‘দেখুন, ইন্ডাস্ট্রি সুদর্শন নায়ক চায় বলে আমি তো দুঃখী হয়ে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে পারি না। নানা পাটেকর, অমিতাভ বচ্চন তাঁরা কেউ-ই তথাকথিত নায়কোচিত দেখতে নন। এ রকম অনেকেই প্রথার বাইরে হেঁটে পরিশ্রম আর প্রতিভার জোরে চরম জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আর একটা প্রথা আছে, শুধু সুদর্শন দেখতে হলেই রোমান্টিক নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন। তবে এই গোঁড়ামি শুধু পরিচালকই ভাঙতে পারবেন, নায়ক নন।’
বিহারের গ্রাম থেকে উঠে এসে মনোজ আজ বলিউডে রীতিমতো রাজত্ব করছেন।

একটু আবেগপ্রবণ হয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘১৮ বছর বয়সে গ্রাম ছেড়েছিলাম। সেদিনের সেই তরুণ আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়ে। সত্যি আমার এই ভ্রমণ বিস্ময়কর।’ আজ মনোজ অনেক অভিনেতার প্রেরণা।

মনোজ বাজপেয়ি
এএনআই

মনোজের আত্মজীবনীমূলক ছবির প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, ‘আমি কখনোই চাই না নিজের জীবনের ওপর ছবি নির্মাণ করতে। তবে ১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকলে প্রতিদিন নিজের জীবন নিয়ে এক পাতা করে লিখব।’
আলাপে আলাপে মনোজ বললেন একটা অনুশোচনার কথাও। অভিনেতা একটু আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘কাজের ব্যস্ততার কারণে মা-বাবার সঙ্গে আমি সেভাবে সময় কাটাতে পারিনি। তাঁদের সঙ্গে যদি আরও সময় কাটাতে পারতাম!’