এত কিছু করেও কেন ব্যর্থ হয়েছেন দেব আনন্দর ছেলে

বাবার সাফল্য এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি সুনীল আনন্দ। কোলাজ

হিন্দি সিনেমার ১০০ বছরের ইতিহাসে যে কয়েকজন তারকার নাম আপনাকে মনে রাখতে হবে, দেব আনন্দ তাঁদেরই একজন। ১৯৪৬ সালে ‘হাম এক হি’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা এই কিংবদন্তি অভিনেতা প্রায় ৬৫ বছর ধরে পর্দায় ছিলেন। ৮৮ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে, কিন্তু সিনেমার প্রতি তাঁর আবেগ, নবকেতন ফিল্মস এবং চলচ্চিত্রের স্বপ্নগুলো আজও জীবন্ত। কিন্তু বাবার এই সাফল্য এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি সুনীল আনন্দ।

সুনীল আনন্দ। আইএমডিবি

১৯৫৬ সালে জন্ম নেওয়া সুনীল চলচ্চিত্রজগতে ছোটবেলাতেই পরিচিত। জন্মেছিলেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখে, দেব-কল্পনা জুটি তখন একটি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ের সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিনিধি হিসেবে সুনীল উৎসবে উপস্থিত ছিলেন।

বাবার ছায়া ও প্রথম অভিজ্ঞতা
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ব্যবসায় প্রশাসনে ডিগ্রি শেষ করার পর সুনীল বাবার পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭০ ও ’৮০-এর দশকে তিনি দেব আনন্দর পরিচালনায় সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ সালে দেব নিজেই ‘আনন্দ অউর আনন্দ’ ছবিতে সুনীলকে সুযোগ দেন। দেব ছিলেন প্রধান চরিত্রে, রাখি গুলজার ও স্মিতা পাতিলের বিপরীতে, আর সুনীল ছিলেন পার্শ্বচরিত্রে।

সুনীল ও দেব আনন্দ। আইএমডিবি

তবে বক্স অফিসে ছবি ব্যর্থ হয়। তারপর সুনীলের হাতে আসে ১৯৮৬ সালের সমীর মালকানের ‘কার থিফ’-এ প্রধান চরিত্রের সুযোগ। তবু ছবিটি বক্স অফিসে কিছু করতে পারেনি। ১৯৮৯ সালে সুনীল অভিনয় করেন দেব আনন্দর প্রোডাকশন হাউস নবকেতন ফিল্মসের ব্যানারে বিজয় আনন্দর ‘ম্যায় তেরে লিয়ে’ সিনেমায়। এ ছবিতে রাজেন্দ্র কুমার, আশা পারেখ ও মীনাক্ষীও ছিলেন। কিন্তু সফলতা এল না। আশা পরে স্বীকার করেছিলেন, ছবিটি মূলত দেব আনন্দর ইচ্ছায় তৈরি হয়েছিল। ছেলেকে সিনেমায় প্রতিষ্ঠিত করতে আরও একবার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

পরিচালনা ও মার্শাল আর্টসের চেষ্টাও ব্যর্থ
দীর্ঘ বিরতির পর ২০০১ সালে সুনীল পরিচালনা করেন মার্শাল আর্টস ছবি ‘মাস্টার’। হংকংয়ের উইং চুনে প্রশিক্ষণ নেন তিনি, কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়নি। এরপর তাঁর পরিচালনা ও অভিনয়জীবন থেমে যায়।

আরও পড়ুন

নবকেতন ফিল্মসের নেতৃত্ব
দেব আনন্দর মৃত্যুর পর ২০১১ সালে সুনীল নবকেতন ফিল্মসের দায়িত্ব নেন। তিনি ‘ভাগাটর মিক্সার’ নামে একটি হলিউড যৌথ প্রোডাকশন ঘোষণা করেন, যা তৈরি হওয়ার কথা ছিল গোয়ার মাদক–বাণিজ্যকে ঘিরে। ছবিটি বাবার হলিউড স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি করা হলেও প্রযোজকদের আইনি জটিলতার কারণে মুক্তি পায়নি।

বিশ্বমঞ্চে নবকেতন
সুনীল নবকেতন ফিল্মসকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরেন ২০০৮ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে; বাবার কালজয়ী সিনেমা ‘গাইড’-এর প্রদর্শনী হয়েছিল তখন। বর্তমানে তিনি সিনেমার বাইরে নিরুত্তাপ জীবন কাটাচ্ছেন। শেষবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল ২০২৩ সালে, দেব আনন্দর শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে এক চলচ্চিত্র উৎসবে।
সুনীল নির্মাতা শেখর কাপুরের চাচাতো ভাই, যিনি বেশ কয়েকটি আলোচিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ভারতের সর্বকালের সেরা নির্মাতাদের একজন মনে করা হয় শেখর কাপুরকে। তবে নির্মাতা হিসেবে সুনীল চাচাতো ভাইয়ের মতো খ্যাতি পাননি, দেব আনন্দর হলিউড–স্বপ্ন তাই আজও অধরাই রয়ে গেছে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস