সেই ক্যানসারই কেড়ে নিল তাঁকে!

পঙ্কজ উদাস
ইনস্টাগ্রাম থেকে

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে শেষকৃত্য হবে খ্যাতনামা গজলশিল্পী পঙ্কজ উদাসের। তাঁর প্রয়াণে শোকাবহ বলিউড সংগীত, তথা বিনোদন–দুনিয়া।
গতকাল সোমবার ‘রিস্তা তেরা মেরা’ গানের গায়ক পঙ্কজ উদাস ইহলোকের সব সম্পর্ক ছিন্ন করে সুরলোকে পাড়ি দিয়েছেন। ৭২ বছর বয়সী এই মহান সংগীতশিল্পীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন তাঁর কন্যা নায়াব উদাস। তিনি ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টের মাধ্যমে এই খবর নিশ্চিত করেছেন। নায়াব আরেক পোস্টের মাধ্যমে এই জনপ্রিয় গজলশিল্পীর শেষকৃত্য–সংক্রান্ত খবর বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি এই পোস্টে জানিয়েছেন যে আজ মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওরলির হিন্দু ক্রিমেটোরিয়ামে পঙ্কজজির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা তাঁর শেষকৃত্য হবে বলে নায়াব জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

পঙ্কজ উদাসের মৃত্যুর খবরে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। মোদি এই পোস্টে লিখেছেন, ‘পঙ্কজ উদাসের প্রয়াণে আমি শোক ব্যক্ত করছি। তাঁর গায়কির মাধ্যমে নানান অনুভূতি ফুটে উঠত। ওনার গজল সোজা আত্মার সঙ্গে কথা বলত। উনি ছিলেন ভারতীয় সংগীতের আলোকবর্তিকা। তাঁর গায়কি বিভিন্ন প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। গত কয়েক বছরে ওনার সঙ্গে বিভিন্ন সাক্ষাতের কথা মনে পড়ছে। ওনার চলে যাওয়াতে সংগীতজগতে এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। ওনার পরিবার আর অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।’

৭২ বছর বয়সী এই মহান সংগীতশিল্পীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন তাঁর কন্যা নায়াব উদাস
ইনস্টাগ্রাম থেকে

বলিউড থেকে সংগীতজগতের তারকারা পঙ্কজ উদাসকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। ক্যানসার কেড়ে নিয়েছে পঙ্কজ উদাসের প্রাণ। স্তব্ধ করেছে তাঁর গায়কি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি।

সংগীতশিল্পী অনুপ জালোটা সদ্য প্রয়াত পঙ্কজ উদাসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারে লিখেছেন, ‘আমাদের দুজনের সম্পর্ক প্রায় ৪৫ বছরের। দুজন একসঙ্গে প্রচুর কনসার্ট করেছি, শো করেছি ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছি। সেসব স্মৃতি অল্প পরিসরে বলে শেষ করতে পারব না। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, আমরা ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার খরচ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছি। সেই ক্যানসারই কেড়ে নিল তাঁকে!’

সিডনিতে পঙ্কজ উদাস,২০২২ সালে
ইনস্টাগ্রাম থেকে

অনুপ জালোটার ভাষ্য, ‘এমনিতে আমাদের কথাবার্তা হতো, যোগাযোগ ছিল। কিন্তু গত তিন মাসে তাঁর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। উনি নিজে থেকে কোনো ফোন করেননি। আমি ফোন করেছিলাম বহুবার। উনি যাতে আমাকে ফোন করেন, সে জন্য তাঁর মেয়ে নায়াবকেও বেশ কয়েকবার বলেছিলাম। কিন্তু ওদিক থেকে কোনো ফোন আসেনি। বুঝতে পারছিলাম, মানুষটা কষ্ট পাচ্ছিলেন। ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকেই নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তাঁর শেষকৃত্যে আমি উপস্থিত থাকব। কিন্তু সেটা ভেবেই মনটা আরও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে!’

সংগীতশিল্পী হরিহরণ বহুদিন ধরেই পঙ্কজ উদাসের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি এদিন তাঁর বন্ধু, তথা সহকর্মীর মৃত্যুর খবর পেয়ে আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম ইটাইমসের কাছে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের। খুব কষ্ট পেয়েছি। আমি খালি ওর স্ত্রী ও পরিবারের কথা ভাবছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চার দশক ধরে বন্ধু ছিলাম। ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে একে অন্যকে চিনি। একসঙ্গে অনেক কনসার্ট করেছি। মজা করেছি। ও খুবই মৃদুভাষী ছিল। ভীষণ মিষ্টি একজন মানুষ ছিল।’

আরও পড়ুন
পঙ্কজ উদাস
ইনস্টাগ্রাম থেকে

সোমবার মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বেলা ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় শিল্পীর। রাজকোটের কাছে অবস্থিত চারখাদি নামের একটি ছোট্ট শহরে ১৯৫১ সালের ১৭ মে পঙ্কজ উদাসের জন্ম।

বাবা কেশুভাই উদাস সরকারি চাকরিজীবী হলেও দিলরুবা বাজাতেন। ছোট থেকেই সংগীতের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা তাঁর। ১৯৮০ সালে ‘আহাত’ শিরোনামের গজল অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে তিনি তাঁর সংগীত দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বলিউডের সংগীতজগতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠেন। সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ১৯৮৬ সালের মুক্তি পাওয়া ছবি ‘নাম’-এর ‘বড়ে দিনো কে বাদ/ হাম বে বসনে কো ইয়াদ...’ সংগীতপ্রেমী অগণিত শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে, এখনো এ গানের জনপ্রিয়তা আছে। ‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিলকর রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি প্যায়ার করো’, ‘নিকলো না বেনাকাব’—পঙ্কজ উদাসের গাওয়া অসাধারণ সব গজল আজও শ্রোতাদের মনের রসদ। ‘নশা’, ‘পয়মানা’, ‘হসরত’, ‘হামসফর’-এর মতো বেশ কয়েকটি বিখ্যাত অ্যালবামও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। বাংলা ‘যায়রে চলে যায়’, ‘তুমি খাঁচা হলে আমি হব পাখি’, ‘কত স্বপ্ন দেখেছি, কত ছবি এঁকেছি’, ‘তোমার চোখেতে ধরা’ ইত্যাদি গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর সংগীতপ্রেমীদের কাছে ‘গজল কিং’ পঙ্কজ উদাস।