বোনের মৃত্যুশোক বয়ে বেড়ানো জুবিনও প্রাণ হারালেন দুর্ঘটনায়

বোন জনকি বোরঠাকুর ও জুবিনছবি: জুবিনের ফেসবুক

সিঙ্গাপুরে এক স্কুবা ডাইভিং ‘দুর্ঘটনায়’ মারা গেছেন ভারতীয় গায়ক জুবিন গার্গ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, শুক্রবার দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর পুলিশ তাঁকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে আর বাঁচাতে পারেননি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।

জুবিন গার্গ
ছবি: ফেসবুক

১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন। বিখ্যাত সংগীত পরিচালক জুবিন মেহতার নাম অনুসারে তাঁর নাম রাখা হয়। তাঁর পরিবার ছিল সাহিত্য ও সংগীতচর্চায় সমৃদ্ধ। তাঁর বাবা মোহিনী মোহন বোরঠাকুর ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি কবিতা ও গান লিখতেন। জুবিনের মা ইলি বোরঠাকুরও ছিলেন সংগীতশিল্পী।
জুবিনের বোন জনকি বোরঠাকুরও আসামের জনপ্রিয় গায়িকা ছিলেন, পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন। ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি আসামের সোনিতপুর জেলায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। স্থানীয় গণমাধ্যম তখন জানায়, ভাই জুবিনের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে বালিপাড়া এলাকায় তাঁর গাড়ির সঙ্গে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। যে গাড়িতে জনকি ভ্রমণ করছিলেন, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই জুবিন গার্গও সেই গাড়িতে ছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগে তিনি গাড়ি বদল করেন। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বোনের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন জুবিন। সেই শোকে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন

বোনের মৃত্যুশোক সব সময় তাড়িয়ে বেড়াত জুবিনকে। বিষয়টি আনন্দ বাজারকে জানিয়েছেন টালিউড অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। এ অভিনেতার প্রথম সফল ছবি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ ছিল জুবিনের গান—‘পিয়া রে পিয়া রে’। সেই গানটি বিপুল সাফল্য পায়। অভিনেতা বলেন, ‘এ এক অদ্ভুত সমাপতন। জুবিন বলেছিলেন, ওর বোনও অভিনেত্রী ও গায়িকা ছিলেন। একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। দুই ভাইবোনকেই দুর্ঘটনা কেড়ে নিল। বোনের মৃত্যুর পর অনেকটা ভেঙে পড়েন জুবিন।’
১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত যুব মহোৎসব পাশ্চাত্য একক পরিবেশনায় স্বর্ণপদক লাভ করার পর জুবিনের জীবনের মোড় পাল্টে যায়। ১৯৯২ সালে অসমিয়া অ্যালবাম ‘অনামিকা’ মুক্তির মাধ্যমে জুবিন পেশাদার সংগীতজগতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে অনুরাগ বসুর ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমার ‘ইয়া আলী’ গানে কণ্ঠ দিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন জুবিন। টালিউড সিনেমায়ও দারুণ সফল ছিলেন জুবিন। বিশেষ করে অভিনেতা দেবের জনপ্রিয় ছবির বেশির ভাগ গানই জুবিন গেয়েছেন। এর মধ্যে ‘মন মানে না’, ‘আয়না মন ভাঙা আয়না’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘পরান যায় জ্বলিয়া যায়’ উল্লেখযোগ্য।

জন্মসূত্রে আসামের হলেও সারা ভারত, এমনকি বাংলাদেশেও জনপ্রিয় ছিলেন জুবিন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে বিনোদনজগৎসহ সর্বস্তরে। এক্স হ্যান্ডলে আসামের ক্যাবিনেট মন্ত্রী অশোক সিংঘল লেখেন, ‘আমাদের প্রিয় জুবিন গর্গের অকালমৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত আমরা। আসাম শুধু একটা কণ্ঠস্বর নয়, হারালো নিজের হৃৎস্পন্দন। জুবিন শুধু একজন গায়ক ছিলেন না, গোটা অসমের গর্ব ছিলেন তিনি। তাঁর গানের মাধ্যমে বারবার গর্বিত হয়েছে আসাম। এই ক্ষতি সত্যি অপূরণীয়।’