কী আছে এই কোরীয় সিরিজে

‘ট্রিগার’–এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স

পুলিশ কর্মকর্তা লি দো (কিম নাম-গিল) এককালে ছিলেন সেনাসদস্য। অতীতে অস্ত্র ব্যবহারের কারণে মনে তাঁর কষ্ট আছে। ফলে পুলিশের চাকরিতে থেকেও তিনি সচরাচর অস্ত্র ব্যবহার করেন না। কিন্তু চোরাচালানের অস্ত্রে সয়লাব দেশ। তাই বাধ্য হয়ে আবার অস্ত্র হাতে তুলে নেন লি দো। এই অস্ত্র পাচারের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানকারী গোষ্ঠী ‘ইন্টারন্যাশনাল রাইফেল ইউনিয়ন’। সংগঠনটির হয়ে কাজ করেন মুন বেক (কিম ইয়ং-কোয়াং), শৈশবে যিনি অঙ্গ পাচারের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়েছিলেন। প্রতিশোধ নিতে ফিরেছে তিনি, তাঁর হাত দিয়েই কোরিয়ার রাস্তায় বইছে অস্ত্রের বন্যা। মুখোমুখি হন লি দো আর মুন বেক। এ–ই হলো ১০ পর্বের সিরিজ ‘ট্রিগার’-এর গল্প। ২৫ জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর থেকেই নতুন এ সিরিজে মজেছেন তরুণেরা।

সিরিজটি বানিয়েছেন কেওন ওহ-সেউং। পর্দায় নায়ক-খলনায়ক থাকলেও সিরিজটিতে কেউ পুরোপুরি সাদা বা কালো নন। সবাই ধূসর। কে ভালো আর কে খারাপ, সেটা বিচারের ভার দর্শকের হাতেই তুলে দিয়েছেন নির্মাতা। আপাতদৃষ্টে নায়ক লি দো নিজেও ভালো নন। পরিবারে এক ডাকাতির ঘটনায় যখন আত্মীয় খুন হন, যখন তিনি শিশু। তখনই তিনি অস্ত্র তুলে নিয়ে খুনিকে হত্যা করতে চান। আবার মুন বেক ছোটবেলায় পাচার হন, ফলে তাঁরও প্রতিশোধ নেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

‘ট্রিগার’–এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স

কোরিয়ায় অস্ত্র আইন খুব কড়া। তাই সিরিজে যেভাবে দেশটিতে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখানো হয়েছে, সেটাকে ‘বাস্তবতাবিবর্জিত’ বলছেন অনেক সমালোচক। কিন্তু কিছুদিন আগেই দেশটিতে ঘটেছে বন্দুক হামলার ঘটনা।

মুক্তির আগে সংবাদ সম্মেলনে সিউলে সে প্রসঙ্গ টেনে নির্মাতা কেওন ওহ-সেউং বলেন, ‘বন্দুক হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমার মন ভেঙে গেছে। চাই না এমন কিছু আর কখনো ঘটুক। আমার সিরিজটি পুরোপুরি কাল্পনিক। নির্মাতা হিসেবে আমরা নানা রকম গল্প বলতে চাই। কিন্তু অনেক সময়ই বাস্তবের সঙ্গে সেটার তুলনা করে অতি সরলীকরণ করা হয়। এই সিরিজের সঙ্গে হামলার ঘটনার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। সিরিজে যেসব চরিত্র অস্ত্র ধরে, তাদের গল্প ও পরিণতি একেবারেই আলাদা।’

‘ট্রিগার’–এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স

কেওন ওহ-সেউং আরও বলেন, ‘এই সিরিজের মূল বার্তা হলো—আমরা যেন আমাদের চারপাশের মানুষদের বোঝার চেষ্টা করি। এখানে অপরাধকে কখনোই গৌরবান্বিত করে দেখানো হয়নি। বরং এই সিরিজের শেষ পর্বে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—অপরাধের প্রতি সহানুভূতি নয়; বরং সতর্কতা ও মানবিক উপলব্ধি জরুরি।’

সিরিজটি নিয়ে এর প্রধান অভিনেতা কিম নাম-গিল বলেন, ‘গল্পটির পটভূমি আমার কাছে একেবারেই নতুন মনে হয়েছে। এখানে বন্দুককে হালকাভাবে নেওয়া হয়নি; বরং তা ব্যবহার করা হয়েছে সমাজ ও মানুষের অন্তর্গত স্বভাব বিশ্লেষণের প্রতীক হিসেবে। এটা নিছক অ্যাকশন সিরিজ নয়, এতে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারও আছে।’

আরও পড়ুন

এই অভিনেতা বলেন, তিনি অ্যাকশন সিরিজ পছন্দ করেন, কিন্তু অ্যাকশনের আড়ালে যদি সামাজিক বার্তা থাকে, তবে সেটা আরও প্রিয় হয়ে ওঠে। ‘ট্রিগার’-এ সেটা আছে বলেই অভিনয় করতে রাজি হয়েছেন।

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, টাইম