কঙ্গনার এই অবস্থা কেন

কঙ্গনা রনৌত। ইনস্টাগ্রাম থেকে

আমির খান, শাহরুখ খান, হৃতিক রোশান, আলিয়া ভাট, রণবীর সিং থেকে রণবীর কাপুর—কার সঙ্গে বিতর্কে জড়াননি তিনি। করণ জোহরের সঙ্গে তাঁর বিবাদ নিয়ে লিখতে গেলে তো রীতিমতো মহাকাব্য হয়ে যাবে। হিন্দি সিনেমার খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এর মধ্যেই বুঝে গেছেন হচ্ছিল কঙ্গনা রনৌতের কথা। তবে গত আট বছরে নানা আলটপকা মন্তব্য করে খবরের শিরোনাম হলেও ‘কাজের কাজ’ করতে পারেননি অভিনেত্রী। এই ‘কাজের কাজ’ হলো অভিনয়। ২০১৫ সালের পর থেকে তাঁর টানা ১১টি সিনেমা ফ্লপ হয়েছে। কিন্তু কেন এমনটা হলো? টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস নাউ অবলম্বনে সেটাই জানার চেষ্টা করা যাক।

আরও পড়ুন

কঙ্গনা রনৌতকে নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। অনেকেই মনে করেন, তিনি যেভাবে সহকর্মীদের সঙ্গে গায়ে পড়ে ঝগড়া করেছেন, সেটা একেবারেই কাম্য ছিল না। কিন্তু ব্যক্তি কঙ্গনাকে নিয়ে যত সমালোচনা থাকুক, তিনি যে অভিনেত্রী হিসেবে দুর্দান্ত—এ কথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন। ‘গ্যাংস্টার’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বাই’, ‘তনু ওয়েডস মনু’, ‘কৃশ ৩’, ‘কুইন’ যদি দেখে থাকেন, তাহলে আপনিও অভিনেত্রী কঙ্গনার তারিফ করবেন।

সেই কঙ্গনার নতুন সিনেমা ‘তেজস’ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। মুক্তির প্রথম দিন মাত্র ১ কোটি ২৫ লাখ রুপি ব্যবসা করেছে ছবিটি। কঙ্গনার এই ছবির শুধু বক্স অফিসে হাল খারাপ নয়, চিত্র সমালোচকেরা কম রেটিং দিয়েছেন ছবিটিকে। তবে কঙ্গনার আগের দুই ছবি ‘ধাকড়’ ও ‘থালাইভি’র হাল আরও খারাপ ছিল। এই দুই ছবি মুক্তির প্রথম দিন এক কোটির নিচে ব্যবসা করেছিল।

‘তেজস’–এ কঙ্গনা রনৌত। ইনস্টাগ্রাম থেকে

কেবল এ সিনেমাগুলোই নয়, গত আট বছরে মুক্তি পাওয়া ‘আই লাভ এনওয়াই’, ‘কাট্টি বাট্টি’, ‘রেঙ্গুন’, ‘সিমরান’, ‘মণিকর্ণিকা’, ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’, ‘পাঙ্গা’ বা চলতি বছর মুক্তি পাওয়া আরেকটি সিনেমা ‘চন্দ্রমুখী ২’-এরও একই হাল। এর মধ্যে মন্দের ভালো বলতে কেবল ‘মণিকর্ণিকা’।

কিন্তু কঙ্গনা রনৌতের মতো অভিনেত্রীর কেন এমন অবস্থা হলো? বলিউড তারকাদের সঙ্গে বিবাদই কি তাঁকে পিছিয়ে দিয়েছে? গত ৮ বছরে মুক্তি পাওয়া তাঁর ১১টি সিনেমা বিশ্লেষণ করলে অভিনেত্রীর সিনেমাগুলো বক্স অফিসে ব্যর্থ হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।

কঙ্গনা রনৌত। ইনস্টাগ্রাম থেকে

প্রথমত, এই সময়ে মুক্তি পাওয়া ১১টি সিনেমার বেশির ভাগই ছিল দুর্বল চিত্রনাট্যের। ২০১৫ সালের পর থেকে বলিউডে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ সিনেমার চেয়ে গল্পনির্ভর সিনেমা জনপ্রিয়তা পায়। এই সময়েই আয়ুষ্মান খুরানা, রাজকুমার রাওদের মতো অভিনেতাদের উত্থান হয়। কঙ্গনা সু–অভিনেত্রী হয়েও এই সুযোগটা কাজে লাগতে পারেননি। তাঁর পছন্দ করা চিত্রনাট্যগুলোর বেশির ভাগই ছিল গড়পড়তা।

অভিনেত্রীর ব্যর্থতার আরেকটি বড় কারণ প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বা নামী পরিচালকের সঙ্গে কাজ না করা। নিশ্চিতভাবেই বিতর্ক এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই ১১ সিনেমার মধ্যে নামীদামি পরিচালক বলতে ছিলেন বিশাল ভারদ্বাজ, হংসল মেহতা আর অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি। বড় পরিচালকের ছবিতে সুযোগ না পাওয়া কঙ্গনার জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নানা ইস্যুতে কথা বললেও নিজের সিনেমার ব্যর্থতা নিয়ে খুব একটা মুখ খোলেননি কঙ্গনা। ব্যতিক্রম বলতে ‘ধাকড়’। এই সিনেমার বক্স অফিসে ভরাডুবির কারণ হিসেবে কঙ্গনা বলেন, ‘সিনেমাটিকে পশ্চিমাকরণের চেষ্টার কারণেই ভারতীয় দর্শকেরা এর সঙ্গে একাত্ম হতে পারেননি।’

কঙ্গনা রনৌত। ইনস্টাগ্রাম থেকে

তবে কঙ্গনা সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন বলিউড সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর বিবাদে জড়ানো উচিত হয়নি। তাই কিছুদিন ধরেই নিজের মুখ বন্ধ রেখেছেন। এ–ও হয়তো দেখেছেন, যে আলিয়া ভাট, রণবীর কাপুর, করণ জোহরদের তিনি ধুয়ে দিয়েছিলেন; দর্শকেরা তাঁদের সিনেমা লুফে নিচ্ছেন।

‘তেজস’ মুক্তির পর বক্স অফিসের দুরবস্থা ভীষণ ভাবিয়েছে কঙ্গনাকে। তাই তো নিজের ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিও বার্তায় দর্শকের কাছে ছবিটি দেখার আরজি জানিয়েছেন অভিনেত্রী। দর্শকেরা তাঁর কথায় সাড়া দেবেন কি না, বলা মুশকিল। তবে বলিউডের প্রায় বন্ধুহীন হয়ে পড়া অভিনেত্রী যদি আবার নিজের পুরোনো ফর্মে ফিরতে চান, তবে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।