যৌনশিক্ষা নিয়ে যে বার্তা দিল ছবিটি

‘ওএমজি–২’–এর দৃশ্য। টুইটার
সিনেমা: ওএমজি–২
নির্মাতা: অমিত রাই
পরিচালক: অমিত রাই
অভিনয়শিল্পীরা: পঙ্কজ ত্রিপাঠি, অক্ষয় কুমার, অরুণ গোভিল, ইয়ামি গৌতম, পবন মালহোত্রা, গোবিন্দ নামদেব, ব্রিজেন্দ্র কালাসহ আরও অনেকে।
রেটিং: ৩.৫ (৫)

‘গদার–২’–এর সঙ্গে একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল ‘ওএমজি–২’। অনেকেই ভেবেছিলেন ‘গদার–২’ ঝড়ে অক্ষয় কুমারের এই ছবি ছারখার হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। গুটি গুটি পায়ে ১০০ কোটি রুপি আয়ের দিকে দিকে এগোচ্ছে ‘ওএমজি’র এই সিকুয়েলটি। অমিত রাই পরিচালিত ছবিটিতে দর্শকের জন্য ভরপুর মনোরঞ্জন রয়েছে। বিনোদনের পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকের যৌনশিক্ষার অধ্যায়কে ঘিরে নানা প্রশ্ন তুলেছে ছবিটি।

‘ওএমজি–২’–এর দৃশ্য। টুইটার

ভারতে এখনো যৌনতা ঘিরে নানা ট্যাবু আছে। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে যৌনশিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারে আলোচনা করা হয় না। এখানেও এক অদৃশ্য আবরণে ঢেকে রাখা হয়েছে যৌনশিক্ষাকে। কীভাবে বংশবৃদ্ধি হয়, তার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয় ব্যাঙের চিত্র। যৌনতা ঘিরে পড়ুয়াদের মনে জন্ম নেয় নানা প্রশ্নের। কিন্তু তাদের প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। স্কুলশিক্ষক থেকে বাবা-মা—সবাই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যৌনতাকে ঘিরে খোলামেলা আলোচনা করতে অস্বস্তিতে ভোগেন।

আরও পড়ুন

এখান থেকেই কিশোর-কিশোরীদের মনে জন্ম নেয় যৌনতাকে ঘিরে ভুল ধারণা। সেই ধারণা থেকেই তারা ভুল পথে চালিত হয়। কেউ কেউ অজান্তেই করে ফেলে জীবনের সাংঘাতিকতম ভুলটি। সেই ভুল শোধরাতে শুধু কিশোর বা কিশোরীটিকে নয়, পরিবারকেও কড়া মাশুল দিতে হয়। কিশোর বা কিশোরীকে যৌনশিক্ষায় শিক্ষিত করার দায়িত্ব স্কুলশিক্ষক তথা পরিবারেরও। এ রকমই এক গল্প তুলে ধরা হয়েছে ‘ওএমজি–২’ ছবিতে।

এমন এক গম্ভীর ও সংবেদনশীল বিষয়কে অমিত রাই বিনোদনের মোড়কে পরিবেশন করেছেন। তাই ছবিটি দেখার সময় মনে হবে না, আড়াই ঘণ্টা ধরে পরিচালক যৌনশিক্ষা নিয়ে সবাইকে শিক্ষিত করতে চেয়েছেন। ছবিকে সেন্সর বোর্ড ‘এ’ সার্টিফিকেট অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের সনদ দিয়েছে।

‘ওএমজি–২’–এর দৃশ্য। টুইটার

এ নিয়ে পঙ্কজ ত্রিপাঠি, ইয়ামি গৌতম, পরিচালক অমিত রাইসহ অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ছবিটি দেখলে বোঝা যাবে, তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ যথার্থই। কারণ, ছবিটি টিনএজদের দেখা অত্যন্ত জরুরি। বোঝা যাচ্ছে, সেন্সর বোর্ডও যৌনতাকে ঘিরে ট্যাবু এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

আরও পড়ুন

গল্প
ছবির গল্প বোনা হয়েছে উজ্জয়নের কান্তি শরণ মুদগল (পঙ্কজ ত্রিপাঠি) ও তাঁর পরিবারকে ঘিরে। ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার কান্তির। অত্যন্ত সাদাসিধে স্বভাবের এই ব্যক্তি আপাদমস্তক শিবভক্ত। উজ্জয়নের মহাকাল মন্দিরে কান্তির পুজোর সামগ্রী আর প্রসাদের দোকান আছে। কান্তির সুখের সংসারে হঠাৎই অন্ধকার নেমে আসে। তাঁর ছেলে বিবেকের এক ভিডিও ভাইরাল হয়। এই ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ধরা পড়ে স্কুলের শৌচাগারে বিবেক হস্তমৈথুন করছে। এরপর স্কুল তথা সমাজ বিবেককে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়।

কান্তির সুখের পরিবার নিমেষের মধ্যে ছারখার হয়ে যায়। সমাজের পাশাপাশি কান্তিও নিজের ছেলেকে অপরাধী বলে মনে করেন। আর তাই সমাজের চাপে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে শহর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কান্তি। পরম ভক্তকে কষ্টে দেখে ঈশ্বর আর স্থির থাকতে পারেননি। তাই কান্তিকে এই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে ভগবান শিব তাঁর এক দূতকে পাঠান। কান্তির মধ্যে চেতনা জাগরিত হয়।

‘ওএমজি–২’–এর দৃশ্য। টুইটার

কান্তি উপলব্ধি করেন, তাঁর ছেলে ভুল শিক্ষাব্যবস্থার শিকার মাত্র। তাই এই শিবভক্ত পালিয়ে না গিয়ে ছেলের হয়ে আইনি লড়াইয়ে নামেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ, কেমিস্ট, শিকড়বাকড়ের দোকানি, চিকিৎসকসহ আরও অনেককে কাঠগড়ায় দাঁড় করান কান্তি। সবার বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলা করেন। আদালতে আইনজীবী কামিনী মহেশ্বরী (ইয়ামি গৌতম) কান্তির বিপক্ষে লড়াইয়ে নামেন। তাঁদের সওয়াল-জবাবে রীতিমতো জমে ওঠে আদালতকক্ষ। এই আইনি যুদ্ধে কার হার, কার জিত হয়, সেটাই দেখার।

ভালো-মন্দ
যৌনশিক্ষার মতো সংবেদনশীল বিষয়ের সঙ্গে হাস্যরস মিলিয়ে পরিবেশনের জন্য সবার আগে বাহবা দিতে হয় লেখক-পরিচালক অমিত রাইকে। তবে তার আগে এই প্রশংসার দাবিদার ছবির অভিনেতা অক্ষয় কুমার। তিনি এমন এক বিষয়কে পর্দায় তুলে ধরার সাহস দেখিয়েছেন। ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ওহ মাই গড’ ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল। এর সিকুয়েল ছবিটিও দারুণভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। এই দুই ছবির মধ্যে মিল বলতে ঈশ্বর আর কোর্ট রুম ড্রামা। সিকুয়েল ছবিতে সম্পূর্ণ নতুন গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

‘ওএমজি–২’–এর দৃশ্য। টুইটার

অমিত রাইয়ের পরিচালনা সত্যি প্রশংসনীয়। কারণ, যৌনশিক্ষা নিয়ে এর আগে অনেক ছবি নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু এই ছবিতে অমিত যৌনশিক্ষাকে ব্যতিক্রমভাবে তুলে ধরেছেন। এখানেই তাঁর মুনশিয়ানা। ছবিতে যৌনশিক্ষাকে ভারতীয় সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলা হয়েছে।

এবার আসতে হয় এই ছবির অন্যতম মূল সম্পদ অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠির প্রসঙ্গে। এমন এক চরিত্রের জন্য তিনিই যে যথার্থ, এ ছবি দেখার পর কারও মনে এ নিয়ে আর সংশয় থাকবে বলে মনে হয় না। পঙ্কজের জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। বলতে গেলে, এই ছবির নায়ক তিনিই। তবে অক্ষয় কুমারের আলাদা প্রশংসা প্রাপ্য। কারণ, তিনি এই ছবিতে পঙ্কজকে তাঁর চেয়েও বেশি জায়গা দিয়েছেন। তবে শিব-দূতরূপী অক্ষয়ের উপস্থিতি ছবিতে সব সময় এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। বিরোধীপক্ষের আইনজীবীর ভূমিকার সঙ্গে অভিনেত্রী ইয়ামি গৌতম পুরোপুরি নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। তাঁর চরিত্রের ধূসর রংটি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবেশন করেছেন ইয়ামি।  ছবির অন্যান্য সব চরিত্র–অভিনেতারাও ভালো করেছেন।

এবার এই ছবির ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরা যাক। অমিত রাইয়ের এই ছবির বিরতির পরের অংশ একটু দুর্বল বলে মনে হয়েছে। কোর্টরুম ড্রামাতে ‘ড্রামা’ অপেক্ষাকৃত কম ছিল। এখানে দুই আইনজীবীর মধ্যে আরও একটু বেশি তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন ছিল। ‘ওএমজি–২’–এর সংগীত কাহিনির সঙ্গে যথাযথ। কিন্তু কোনো গানই সেভাবে মনে ছাপ ফেলতে পারেনি।