শুটিং সেটে লাইভ কিচেন, তারকাদের ধুয়ে দিলেন আমির খান
বলিউডে এখন এক অদ্ভুত ট্রেন্ড চলছে। তারকারা কোটি কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন, আবার নিজেদের ব্যক্তিগত খরচও চাপিয়ে দিচ্ছেন প্রযোজকের ওপর। কারও জন্য আলাদা ভ্যানিটি ভ্যান, কারও জন্য সেটে জিম আর লাইভ কিচেন—সব মিলিয়ে প্রযোজকদের ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার সেই সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করলেন আমির খান।
এর আগে নানা সময়ে একই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ। এবার গেম চেঞ্জার্স ইউটিউব চ্যানেলে কোমল নাহতাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেন, ‘তারকাদের সম্মান দেওয়া উচিত, কিন্তু সেটা এমন পর্যায়ে যাওয়া উচিত নয় যে প্রযোজকেরাই সমস্যায় পড়ে যান।’
আমির জানান, প্রায় ৩৭ বছর আগে যখন তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন, তখনো প্রচলন ছিল প্রযোজক তারকার গাড়িচালক ও সহকারীদের বেতন দিতেন। আমিরের চোখে বিষয়টি ছিল অদ্ভুত, ‘গাড়িচালক আমার হয়ে কাজ করছে, প্রযোজক কেন তার বেতন দেবেন? যদি প্রযোজক আমার স্টাফদের খরচ দেন, তাহলে কি তিনি আমার সন্তানদের স্কুল ফিও দেবেন? কোথায় গিয়ে থামবে এটা?’
তিনি পরিষ্কার করে বলেন, ‘প্রযোজককে সেই খরচই বহন করা উচিত, যা সরাসরি ছবির সঙ্গে যুক্ত—মেকআপ, হেয়ার, কস্টিউম। কিন্তু গাড়িচালক, গাড়িচালকের সহকারী বা পার্সোনাল স্টাফ তো আমার কাজ করছে, তাদের বেতন দেওয়া আমার দায়িত্ব। প্রথম দিন থেকেই আমি এই নিয়মে অটল। গত ৩৭ বছরে কোনো প্রযোজককে আমি কখনো এসব খরচ বহন করতে দিইনি।’
কিন্তু বর্তমান সময়ের চিত্র দেখে বিস্মিত আমির। ‘আজকের তারকারা নাকি নিজের গাড়িচালকের বেতন পর্যন্ত দেন না, প্রযোজককে দিতে হয়। শুধু তা–ই নয়, স্পটবয়, ট্রেইনার, কুক, এমনকি সেটে লাইভ কিচেনের খরচও চাপিয়ে দেন প্রযোজকের ওপর। একাধিক ভ্যানিটি ভ্যান চাওয়া হয়, কারও জন্য জিম, কারও জন্য রান্নাঘর,’ বিরক্তি নিয়ে বলেন অভিনেতা।
তবে তিনি এটাও জানান, তারকারা চাইলে এসব সুবিধা নিতে পারেন, সমস্যা হলো, সেটা প্রযোজকের ঘাড়ে চাপানো। আমিরের ভাষ্যে, ‘তোমরা কোটি কোটি টাকা আয় করছ, অথচ নিজের খরচ দাও না? এটা খুবই দুঃখজনক। শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। আমি স্পষ্ট বলছি, এটা লজ্জাজনক।’
আমিরের মতে, একজন অভিনেতার প্রথম দায়িত্ব হলো প্রযোজকের ওপর বাড়তি বোঝা না চাপানো। ‘আমরা সবাই একসঙ্গে ছবির জন্য কাজ করি। টিম প্লেয়ার হিসেবে সবারই এই সচেতনতা থাকা উচিত,’ বলেন তিনি।
তবে ব্যতিক্রমও আছে, আমির স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কখনো ছবির প্রয়োজনে যদি বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার হয়, তখন অবশ্যই সেটা প্রযোজকের খরচে হবে। যেমন “দঙ্গল”-এ কুস্তির প্রশিক্ষণ। কিন্তু রান্নার খরচ প্রযোজক বহন করবেন, এটা একেবারেই অযৌক্তিক। এরপর হয়তো নতুন ফ্ল্যাট কেনার খরচও প্রযোজকের ওপর চাপানো হবে!’
শেষে তিনি যোগ করেন, ‘আজও আমি যখন পরিবার নিয়ে আউটডোর শুটে যাই, সব খরচ নিজের পকেট থেকে দিই। প্রযোজককে কখনোই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে বলিনি। আজকের তারকারা নিজের অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছেন, যা তাঁদের ভাবমূর্তিকেই নেতিবাচক করছে।’