জেলে সেদিন নাগিন ড্যান্স...
২০২০ সালে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর মাদক-কাণ্ডে গ্রেপ্তার করা হয় অভিনেতার প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যম—সব জায়গাতেই নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হন তিনি। এবার এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলজীবনের স্মৃতিচারণা করলেন অভিনেত্রী।
এই সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেন, ওই ঘটনা কীভাবে তাঁর পুরো জীবন বদলে দিয়েছে। রিয়া বলেন, ‘সিবিআইয়ের কাছ থেকে ক্লিনচিট পাওয়ার পরও আমি পুরোপুরি খুশি হতে পারিনি। সেদিন পুরো পরিবার কেঁদে ফেলেছিল। আমি ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, মা–বাবার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, আমরা আর আগের মতো নেই। পরিবারের সেই পরিবেশ আর হয়তো কখনোই ফিরে আসবে না।’
জেলের দিনগুলো
রিয়া ২৮ দিন ছিলেন কারাগারে। অভিনেত্রীর ভাষায়, ‘জেলে গেলে মানুষ বদলে যায়। জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। তখন আর কারও কথায় কান দিয়ো না, নাহলে ডিপ্রেশনে চলে যাবে। খাবারকে নতুন করে মূল্য দিতে শেখে। ঘরের ডাল-ভাতও পিৎজার মতো আনন্দ দেয়। বোঝা যায়, জীবনে আসলে তিন-চারজনই সত্যিকারের বন্ধু।’
জামিনের দিন বন্দী সহকর্মীদের অনুরোধে রিয়া নাচও করেছিলেন। ‘ওরা আমাকে নাচতে বলেছিল। আমি নাগিন নাচ করেছি। ভেবেছিলাম, কবে আবার দেখা হবে কে জানে। যদি সামান্য খুশি দিতে পারি, দোষ কী? বেশির ভাগ নারীই সেখানে নির্দোষ অথচ অসহায়,’ বলেন রিয়া।
জেলের অভিজ্ঞতা লিখতে রিয়া একটি ডায়েরিও রাখতেন। প্রথম লাইন ছিল—‘জেলের ভেতরের মানুষ বাইরের মানুষদের চেয়ে ভালো।’ তাঁর মতে, বাইরে সমাজ আছে, নিয়ম আছে, বিচার আছে; ভেতরে শুধু দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষ। ‘একটা সমুচাও ওখানে কারও কাছে কোটি টাকার চেকের মতো মনে হয়,’ যোগ করেন অভিনেত্রী।
সুশান্ত প্রসঙ্গ
ক্লিনচিট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রিয়া বললেন, ‘সেদিন খুশি ছিলাম শুধু মা–বাবার জন্য। তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন; তাঁদের জন্য জীবন কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমি জানতাম, আমি কিছুই করিনি। মানুষ বলত, ও আমার কারণে যায়নি। কিন্তু যাকে আমি সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করতাম, সে তো নেই। তাই আনন্দ আসেনি।’
রিয়া আরও বলেন, ‘আমি শোক প্রকাশের স্বাভাবিক সুযোগই পাইনি। সবাই ভেবেছিল কেবল তারাই কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু আমার মতো কাছের মানুষ সবচেয়ে বড় ক্ষতি ভোগ করেছে। এখনো প্রতিদিন মনে হয়, আমি শোকের প্রক্রিয়ার বাইরে নই। প্রথমে রাগ হতো, মানুষ কেন এত সাধারণ একটি আবেগ বুঝতে পারল না। পরে বুঝলাম, শোক ব্যক্তিগত।’
২০২০ সালের ১৪ জুন মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়। তাঁর মৃত্যু ঘিরে ভারতজুড়ে শুরু হয় চাঞ্চল্য আর গুজব। ৮ সেপ্টেম্বর রিয়াকে গ্রেপ্তার করে এনসিবি, অভিযোগ ছিল সুশান্তকে মাদক সরবরাহের। এক মাস হেফাজতে থাকার পর জামিন পান তিনি। পরে সিবিআই সব অভিযোগ থেকে তাঁকে নিষ্কৃতি দিয়ে ঘোষণা করে, সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন।