ধর্মেন্দ্র, রজনীকান্তের সঙ্গে অভিনয়, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে সেই অভিনেত্রী এখন...
দক্ষিণ ভারতীয় চার ভাষা—তামিল, তেলেগু, মালয়ালম ও কন্নড়ে যেমন দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন, তেমনি বলিউডেও নিজের ছাপ রেখেছেন। শৈশব থেকে নাচ শেখা এই নায়িকা একসময় নৃত্যেই নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু স্মৃতিভ্রংশের কারণে তিনিই শেষে নাচের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এই অভিনেত্রী আর কেউ নন, ভানুপ্রিয়া।
চলচ্চিত্রজগতে উত্থান
২০০০ সালের ‘কছু কছু সানথোসাঙ্গল’ সিনেমার আলোচিত গান ‘শিবাকারাথামারুকালায়ামায় নাদাম’ লক্ষ্মী গোপালস্বামী ও ভানুপ্রিয়ার নাচের কথা কি ভুলে যাওয়া যায়? হিন্দি ‘দেবদাস’-এর আগেই মালয়ালম সিনেমা পেয়েছিল নিজেদের সংস্করণের এমন দুর্দান্ত সেমি-ক্ল্যাসিক্যাল নাচ। ইলাইয়ারাজার অনবদ্য সংগীতের পাশাপাশি ভানুপ্রিয়ার নাচ গানটিকে কালজয়ী করে তুলেছিল।
১৯৮৩ সালে ‘মেলা পেসুনগাল’ দিয়ে অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন ভানুপ্রিয়া। চোখের ভাষা, নাচের ছন্দ, পর্দায় উপস্থিতি—সব মিলিয়ে অল্প সময়েই তিনি তামিল-তেলেগু ছবির প্রথম সারির নায়িকা হয়ে ওঠেন।
আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাও, কৃষ্ণ, চিরঞ্জীবী, নন্দামুরি বালকৃষ্ণ, ভেঙ্কটেশ, বিজয়কান্ত, কার্তিক—প্রায় সব বড় নায়কের সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি। হিন্দি ছবিতেও রেখে গেছেন চিহ্ন-জিতেন্দ্রর ‘দোস্তি দুশমনি’, ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে ‘ইনসাফ কী পুকার’, রাজকুমার-বিনোদ খান্নার ‘সুরিয়া: অ্যান অ্যাওয়াকনিং’, মিঠুনের সঙ্গে ‘গরিবো কা দাতা’ ইত্যাদি সিনেমায় ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি।
মালয়ালমেও জয়
১৯৯২ সালে ভানুপ্রিয়া মালয়ালমে অভিষেক করেন মোহনলালের বিপরীতে ‘রাজাশিল্পী’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতেই দর্শকের মন জয় করেন। এর আগে ও পরে ‘থালাপথি’-তে রজনীকান্তের বিপরীতে তাঁর অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। কেবি বালাচন্দরের ‘আঝাগন’-এ মাম্মুটির সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল বহুল আলোচিত।
ব্যক্তিজীবনের অস্থিরতা
১৯৯৮ সালে তিনি বিয়ে করেন প্রকৌশলী আদর্শ কৌশলকে। ২০০৫ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। একমাত্র মেয়ে অভিনয়াকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন। ২০১৮ সালে আদর্শ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই ঘটনাই ভানুপ্রিয়ার জীবনে নিয়ে আসে কঠিন অধ্যায়।
স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি স্মৃতিভ্রংশে ভুগতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে প্রভাব পড়ে তাঁর দৈনন্দিন জীবন ও শিল্পচর্চায়। দুই বছর আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শরীর ভালো নেই। হঠাৎ হঠাৎ স্মৃতি হারিয়ে ফেলি। শেখা জিনিস ভুলে যাই। নাচের প্রতি আর আগ্রহ পাই না। বাড়িতেও নাচ অনুশীলন করি না।’
২০২২ সালে একটি ছবির শুটিংয়ে ক্যামেরা চলার সময় সংলাপ ভুলে গেলে বিষয়টি আরও প্রকট হয়। সর্বশেষ তাঁকে দেখা গেছে শিবা কার্তিকেয়নের ‘আয়ালান’ সিনেমায়; এটি মুক্তি পেয়েছিল ২০২৪ সালে।
দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার একসময়ের উজ্জ্বল তারকার এভাবে নীরব হয়ে যাওয়া ভক্তদের জন্য নিঃসন্দেহে বেদনার। তবু তাঁর অভিনয়, নৃত্য ও পর্দার জাদু আজও দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে রয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে