আবার ক্যাফেতে গুলি! সালমানের পর কপিল শর্মাই কি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নিশানায়

কপিল শর্মার রেস্তোরাঁয় পরপর তিনবার হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, ‘সালমানের ঘনিষ্ঠ বলেই কি কপিল শর্মা এখন বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নিশানায়?কোলাজ

ভারতের জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী কপিল শর্মার কানাডার রেস্তোরাঁয় আবার গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত চার মাসে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কপিলের রেস্তোরাঁ ‘ক্যাপস ক্যাফে’ টার্গেট করল দুষ্কৃতকারীরা। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে শহরে অবস্থিত এই ক্যাফেতে বুধবার স্থানীয় সময় রাতে হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অন্তত তিনটি গুলি ছোড়া হয় ক্যাফের বাইরে। সৌভাগ্যবশত কেউ আহত হননি। হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় একজন সশস্ত্র ব্যক্তি কপিলের ক্যাফে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন।

লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের দায় স্বীকার
গোল্ডি ধিলন ও কুলবীর সিধু (নেপালি) নামের দুই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে এই হামলার দায় স্বীকার করেছেন। তাঁরা দুজনই ভারতের কুখ্যাত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য। হামলার পর বিষ্ণোই গোষ্ঠী নামের একটি পেজ থেকে লেখা হয়, ‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। যাদের সঙ্গে আমাদের ঝগড়া, তারা দূরে থাকুক। যারা বেআইনি কাজ করে আর টাকা দেয় না, তারাও প্রস্তুত থাকুক। বলিউডে কেউ যদি ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে, তার জন্যও শাস্তি আসবে। বুলেট যেকোনো দিক থেকেই আসতে পারে।’ এ নিয়ে গত চার মাসে তৃতীয়বার কপিল শর্মার রেস্তোরাঁয় গুলি চালাল একই গোষ্ঠী।

আগেও ছিল হামলা ও হুমকি ফোন
এর আগে চলতি বছরের ৮ আগস্ট কপিলের ক্যাফেতে একবারে ২৫টি গুলি চালানো হয়। তখনো কেউ হতাহত না হলেও ক্যাফেটির দেয়াল ও জানালায় গুলির চিহ্ন দেখা যায়।  গত ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর কপিল শর্মার কাছে একাধিক হুমকি ফোন আসে। তাঁর কাছ থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। ফোনে হুমকি দেওয়া হয়, ‘টাকা না দিলে ভয়ংকর পরিণতি হবে।’ এ ঘটনায় কলকাতা থেকে দিলীপ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি নাকি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হয়ে চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন।

আরও পড়ুন

সালমান খানের পর
লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের দ্বন্দ্ব বহুদিনের পুরোনো। ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার মামলার পর থেকেই বিষ্ণোই সম্প্রদায় সালমানকে টার্গেট করে আসছে।
এখন কপিল শর্মা—যিনি সালমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাঁর রেস্তোরাঁয় পরপর তিনবার হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, ‘সালমানের ঘনিষ্ঠ বলেই কি কপিল শর্মা এখন বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নিশানায়?’ পুলিশ এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি, তবে তদন্তে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন
নয়াদিল্লির একটি আদালতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিবেষ্টিত লরেন্স বিষ্ণোই। ১৮ এপ্রিল ২০২৩
এক্স থেকে

কারাগারে বসেই সাম্রাজ্য চালান লরেন্স বিষ্ণোই
লরেন্স বিষ্ণোই ভারতের অন্যতম ভয়ংকর গ্যাং লিডার। তিনি বর্তমানে গুজরাটের সবরমতী কারাগারে বন্দী, তবু অভিযোগ—কারাগারের ভেতর থেকেই তিনি পরিচালনা করছেন সাত শতাধিক সদস্যের নেটওয়ার্ক। ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) বলছে, তাঁর গ্যাং চাঁদাবাজি, হত্যা, সন্ত্রাস ও আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত। বিষ্ণোইয়ের নাম এসেছে পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালা হত্যাকাণ্ডেও।
কানাডা সরকার সম্প্রতি লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই গোষ্ঠী কানাডায় প্রবাসী সম্প্রদায়ের ওপর ভয় ও সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রভাবশালীদের লক্ষ্য করে চাঁদাবাজি ও হামলা চালাচ্ছে। কানাডার জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী গ্যারি আনান্দাসাঙ্গারি বলেন, ‘বিষ্ণোই গ্যাং নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আমরা এই সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

আরও পড়ুন
কপিল শর্মা
ইনস্টাগ্রাম

কপিলের ক্যাফে এখন কঠোর নিরাপত্তায়
গুলিবর্ষণের পর কানাডার স্থানীয় পুলিশ ক্যাপস ক্যাফের সামনে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ক্যাফের চারপাশে নজরদারি ক্যামেরা ও অতিরিক্ত টহল বসানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কপিল শর্মা কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি, তবে ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, অভিনেতা–কমেডিয়ান এ ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর পরিবার ও ম্যানেজমেন্ট টিম এখন কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।