মৃত্যুর আগের রাতে কী হয়েছিল দিব্যা ভারতীর, ৩২ বছরেও অমীমাংসিত যে রহস্য
খ্যাতির শিখরে থাকা অবস্থায় দিব্যা ভারতীর আকস্মিক মৃত্যু বলিউডকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। রয়ে যায় অসংখ্য প্রশ্ন, অসমাপ্ত ছবি আর এমন এক রহস্য, যা তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়েও খোলাসা হয়নি।
বলিউড বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী। তবে দিব্যা ভারতীর গল্পের মতো শিউরে ওঠার মতো ঘটনা খুব কমই আছে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, মুম্বাই বিস্ফোরণের ধাক্কা কাটিয়ে যখন হিন্দি চলচ্চিত্রশিল্প ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তখন দিব্যার আবির্ভাব যেন এক টুকরা তাজা হাওয়া। তরুণ, নির্ভীক এবং অসম্ভব জনপ্রিয়—রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন তিনি। কেউ কল্পনাও করেনি, এত ঝলমলে যাত্রা এত দ্রুত ও মর্মান্তিকভাবে থেমে যাবে।
স্বপ্নের অভিষেক থেকে মুহূর্তে তারকাখ্যাতি
১৯৯২ সালে ‘বিশ্বত্মা’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হলেও ‘সাত সমুন্দর পার’ গানটি দিব্যা ভারতীকে ঘরে ঘরে পরিচিত করে তোলে। এরপর যা ঘটে, তা যেন রূপকথা। ‘শোলা অউর শবনম’, ‘দিওয়ানা’, ‘দিল আশনা হ্যায়’—একটির পর একটি ছবি তাঁকে সময়ের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন নায়িকায় পরিণত করে।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে, এক বছরে ১২টির বেশি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন দিব্যা—একটি রেকর্ড, যা আজও অক্ষত। প্রযোজকেরা তাঁকে চাইতেন, পরিচালকেরা বিশ্বাস রাখতেন, দর্শকেরা মুগ্ধ হতেন তাঁর নিষ্পাপ আকর্ষণে। তিনি সর্বত্র এবং মনে হচ্ছিল, তিনি দীর্ঘদিনই থাকবেন।
সবার অজানা এক গোপন বিয়ে
উজ্জ্বল হাসি আর ঠাসা শিডিউলের আড়ালে দিব্যার ব্যক্তিগত জীবন ছিল অনেক বেশি জটিল। তিনি গোপনে প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালাকে বিয়ে করেন। খবরে বলা হয়, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম বদলে রাখেন সানা। এই বিয়ে ইন্ডাস্ট্রি থেকে আড়ালেই রাখা হয়েছিল, আর অচিরেই নানা গুঞ্জন ছড়াতে থাকে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোয় দাবি করা হয়, চরম চাপের মধ্যে ছিলেন দিব্যা, একদিকে উড়ন্ত ক্যারিয়ার, অন্যদিকে গোপন দাম্পত্য আর মানসিক টানাপোড়েন।
বলা হয়, সাজিদের পরিবার নাকি সম্পর্কটি পুরোপুরি মেনে নেয়নি, যা তাঁর দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। তবে সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন।
সেই রাতে আসলে কী ঘটেছিল
৫ এপ্রিলের রাত, মুম্বাইয়ের ভার্সোভার বাড়িতে দিব্যা ছিলেন তাঁর স্বামী ও ডিজাইনার নীতালুল্লার সঙ্গে। জানা যায়, সেদিন তিনি মদ্যপান করেছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই গল্পগুজব চলছিল।
একসময় তিনি জানালার দিকে যান। ফ্ল্যাটটিতে কোনো সেফটি গ্রিল ছিল না। জানালার কার্নিশে বসতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পাঁচতলা থেকে নিচের পার্কিং এলাকায় পড়ে যান তিনি।
তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে পৌঁছানোর আগেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯।
দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা—নাকি আরও কিছু?
দিব্যার আকস্মিক মৃত্যু জন্ম দেয় অনেক তত্ত্বের। কেউ আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্রের কথা বলেন, কেউ একে আত্মহত্যা বা এমনকি হত্যাকাণ্ড বলেও দাবি করেন।
সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে, কিন্তু কোনো প্রমাণ মেলেনি। পুলিশি তদন্তে তাঁর রক্তে উচ্চমাত্রার অ্যালকোহল পাওয়া যায় এবং সিদ্ধান্তে বলা হয়, এটি একটি দুর্ঘটনাজনিত পতন।
১৯৯৮ সালে, প্রমাণের অভাবে মুম্বাই পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটি বন্ধ করে দেয়।
কেন এই রহস্য আজও তাড়া করে ফেরে
সেই রাতে উপস্থিত ব্যক্তিদের বক্তব্যে অসংগতির কারণেই প্রশ্ন থেকে যায়। দিব্যার ঘনিষ্ঠ গৃহপরিচারিকা অমৃতা, যিনি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন, পরবর্তী সময় তিনিও রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মারা যান।
দিব্যার অসমাপ্ত একাধিক ছবি পরে অন্য অভিনেত্রীদের দিয়ে শেষ করা হয়, যার মধ্যে শ্রীদেবী অভিনীত ‘লাডলা’ উল্লেখযোগ্য।
আজও দিব্যা ভারতীকে স্মরণ করা হয় শুধু তাঁর সৌন্দর্য আর প্রতিভার জন্য নয়; বরং তাঁর শেষ রাত ঘিরে থাকা শীতল করা রহস্যের জন্য।
ইন্ডিয়াডটকম অবলম্বনে