‘কাবিল’ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে
হৃতিক রোশনকে শেষ বড় পর্দায় দেখা গেছে ওয়ার ছবিতে। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করেছিল। এবার হৃতিক হাজির হয়েছেন ‘বিক্রম বেদা’ ছবিতে। পুষ্কর-গায়িত্রী পরিচালিত ছবিটি একই নামের তামিল ছবির হিন্দি রিমেক। তামিল ছবিটিও পরিচালনা করেছিলেন এই পরিচালক দম্পতি। ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। মুক্তির আগে মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে বলিউড তারকা হৃতিক রোশন মুখোমুখি হয়েছিলেন কয়েকজন সাংবাদিকের। ওই আড্ডায় ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধিও। আলাপের শুরুতে উঠে এলো হৃতিকের ওয়ার ছবির সাফল্যর কথা। আগে ছবির ব্যাপক সফলতার জন্য কি বিক্রম বেদা মুক্তির আগে বক্স অফিসের চাপ অনুভব করছেন? জবাবে হৃতিক বলেন, ‘ওয়ার ছবির পর থেকে বক্স অফিসের আয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি গর্বিত, বিক্রম বেদার মতো ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। প্রথমে এই ছবির চিত্রনাট্য পড়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম—এ তো ভালো চিত্রনাট্য কী করে লেখা যায়। এখনো সেই ঘোর থেকে বের হতে পারিনি।’
ছবিতে হৃতিককে দেখা যাবে ‘বেদা’ চরিত্রে। তামিল ছবিতে এই চরিত্রে দেখা গিয়েছিল দক্ষিণি তারকা বিজয় সেতুপতিকে। বিজয় সেতুপতির মতো অভিনেতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার প্রশ্নে হৃতিক বলেন, ‘আরে, আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিলেন। আমার দায়িত্ব হলো ছবির পরিচালককে খুশি করা। আমার শটের পর তাঁরা যদি খুশি হন, এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। আমি সেই সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাই, যাঁদের থেকে আমি কিছু শিখতে পারি। আর নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারি।’ বিক্রম বেদায় হৃতিককে ভারতীয় কায়দার অ্যাকশনে দেখা যাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার শরীরে অনেক চোট, আঘাত আছে। তাই এই ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো করতে বেশ সময় লেগেছিল। ছবিতে অনেক হাতাহাতির দৃশ্য আছে। এটা করা মোটেও সহজ ছিল না। প্রথম দুদিন তো বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল।’
বিক্রম বেদা ছবিতে বিক্রমের চরিত্রে আছেন বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খান। দুই দশক পর আবারও সাইফের সঙ্গে এক ছবিতে অভিনয় করলেন হৃতিক।
সাইফের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে হৃতিক বলেন, ‘এই ছবিতে আমি নিজেকে যতটা পারি নিংড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ, আমার বিপরীতে এমন এক অভিনেতা আছেন, যাঁকে (সাইফ) বিগত কয়েক দশক ধরে সম্মান করে এসেছি। আমার কাছে সাইফ দুর্ধর্ষ অভিনেতা। তাঁর অভিনয়ের ধরন অত্যন্ত বাস্তবধর্মী। ২২ বছর ধরে যে অভিনেতা আমাকে মুগ্ধ করে এসেছেন, তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করা আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। সত্যি বলতে, সাইফের সঙ্গে কাজ করার সময় আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হতো। সাইফের অভিনয় এতটা বাস্তবিক যে মনে হতো, আমি কোথাও যেন অতি অভিনয় না করে ফেলি। তাঁর জন্যই আজ আমার চরিত্রটা আরও বাস্তবিক হয়ে উঠেছে। সাইফ আমাকে সমৃদ্ধ করেছে।’
হৃতিকের ছবি সম্পর্কে তাঁর দুই ছেলের প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ছেলেদের থেকে সব সময় প্রতিক্রিয়া নিতে থাকি। তারা নানা ধরনের ছবি দেখে বড় হয়েছে। ছবি সম্পর্কে তাদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করি। আমার পুরোনো সিনেমা দেখে তারা বলে, এসব কী করেছি আমি। আমি নিশ্চিত, তারা যদি ছবি নির্মাণ করে, তাহলে তা প্রগতিশীল ছবি হবে।’
হৃতিক জানান, কোভিডের পর তার মধ্যে অনেক বদল এসেছে। এখন তাঁর জীবনের গুরুত্ব বদলে গেছে বলে জানান এই অভিনেতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই অস্থির মনের মানুষ। তাই নিয়মিত মেডিটেশন করি। বিক্রম বেদা ছবির প্রতিটা শটের আগে ভ্যানে বসে মেডিটেশন করতাম। এরপর নিজের মধ্যে এক ধরনের খুশি অনুভব করতাম। অন্তর থেকে অদ্ভুত এক শান্তি পেতাম।’
কথায় কথায় হৃতিক জানান, কাবিল ছবিটা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাবিল আমাকে পথ দেখিয়েছে। এরপর এক নতুন পথ আমি খুঁজে পাই। কাবিল-এর আগে অভিনয় খুব একটা উপভোগ করতাম না। এই ছবির পর থেকে উপভোগ করতে শুরু করি। আমার কাজ আগের থেকে আরও ভালো হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
আড্ডার শেষের দিকে উঠে আসে এই মুহূর্তের সবচেয়ে চর্চিত বিষয়—দক্ষিণ বনাম বলিউডের দ্বন্দ্ব। এ প্রসঙ্গে হৃতিক বলেন, ‘দক্ষিণ ও আমাদের ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে আমি কোনো তফাৎ দেখি না। আমার কাছে সব ছবি ভারতীয় ছবি। তবে আমাদের জাগতে হবে। দর্শকের রুচি বুঝে আমাদের ছবি নির্মাণ করতে হবে।’