কঠিন সময়ও ‘না’ বলার সাহস দেখিয়েছিলাম: আমির খান
১৪ মার্চ ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপন করবেন বলিউড সুপারস্টার আমির খান। এবারের জন্মদিনটি বিশেষভাবে উদ্যাপন করার পরিকল্পনা এই তারকার। আর তাই ১৪ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ‘আমির খান: সিনেমা কা জাদুকর’ শীর্ষক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্র উৎসবে আমির অভিনীত জনপ্রিয় ছবিগুলো প্রদর্শন করা হবে। এই আয়োজন সামনে রেখে গত রোববার ‘আমির খান: সিনেমা কা জাদুকর’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই আসরে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং আমির খান ও লেখক-গীতিকার জাভেদ আখতার। আমির ও জাভেদ সংবাদ সম্মেলনে কিছু জানা ও কিছু অজানা কথা তুলে ধরেছেন।
গত রোববার মুম্বাইয়ের এক মাল্টিপ্লেক্সে ‘আমির খান: সিনেমা কা জাদুকর’ চলচ্চিত্র উৎসবের ট্রেলার প্রকাশ করা হয়। এই চলচ্চিত্র উৎসবে আমিরের কোন কোন আইকনিক ছবি প্রদর্শিত হতে চলেছে, তা সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ভারতজুড়ে উদ্যাপিত হবে এই বিশেষ চলচ্চিত্র উৎসব। তাই দর্শক আমিরের আইকনিক কিছু ছবি আবার বড় পর্দায় দেখার আনন্দ নিতে পারবেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে আমির ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময়তেও ‘না’ বলার সাহস দেখিয়েছিলাম আমি। তাই আমি এখনো এমন ব্যবহার করতে পারছি। আমি যদি ওই সময়ে সমঝোতা করতাম, তাহলে আমার পুরো ক্যারিয়ার সমঝোতার ওপরই টিকে থাকত।’ নিজের ক্যারিয়ারের সংগ্রামের দিনগুলোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়ে মহেশ ভাটের এক ছবিতে সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার ছবিটা পছন্দ হয়নি। আমি সাহস করে মহেশ ভাটকে এ কথা বলেছিলাম।’
আসরে আমির নিজের ছেলেবেলার দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন। অভিনেতা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি কাহিনি শুনতে খুব ভালোবাসতাম। আমার যখন পাঁচ বছর বয়স ছিল, তখন আমার বাবাকে (তাহির হুসেন, পরিচালক- প্রযোজক) কেউ কাহিনি বা চিত্রনাট্য শোনাতে এলে আমি পর্দার পেছনে দাঁড়িয়ে সেসব কাহিনি শুনতাম। আমার বাবাও বুঝতে পেরেছিলেন যে আমি পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কাহিনি শুনি। কিছুদিন পর কাহিনি শোনার জন্য বাবা আমাকে সামনে বসাতেন। আর কাহিনি ঘিরে আমার কি অনুভূতি, উনি তা আমার থেকে জানতে চাইতেন। আমার মা আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন যে অমুক দিন কাহিনি শোনার জন্য আমার কাছে সময় আছে কি না। আমি কখনো নিজেকে ছবির অভিনেতা হিসেবে ভাবিনি। আমি ছবির গল্প এমনভাবে শুনতাম যে ছবি হিসেবে সেটা কেমন হবে।’
‘আমির খান: সিনেমা কা জাদুকর’-এর ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে জাভেদ আখতার আমিরকে নিয়ে বেশ প্রশংসা করেছিলেন। জাভেদের ভাষ্য, ‘আমির অভিনীত এত চরিত্রের মধ্যে আমি ভয় পাই যে কোনো চরিত্র আমি ভুলে না যাই। আমির ১৯৬৫ এ জন্মগ্রহণ করেন। আর আমিও ১৯৬৫ সালে বলিউডে আমার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। আমির তাঁর প্রথম ছবি করেছিল আমার লেখা চিত্রনাট্যে। আমি পঞ্চগনিতে বসে নাসির হুসেনের (আমিরের কাকা, পরিচালক-প্রযোজক) এক ছবির জন্য চিত্রনাট্য লিখছিলাম। আমি তখন আমিরকে দেখেছিলাম। আমিরকে দেখামাত্রই আমি নাসিরকে বলেছিলাম যে এই ছেলে একটা ‘স্টার’। আর ওর ক্যারিয়ার রোমান্টিক ছবি দিয়ে শুরু হওয়া উচিত।’ বলিউডের এই জনপ্রিয় লেখক আরও বলেন, ‘আমিরের প্রথম ছবির চিত্রনাট্য আমি লিখেছিলাম। আর আমার ছেলে ফারহানের (আখতার) প্রথম ছবি আমিরের সঙ্গে ছিল।’
আমির তাঁর ক্যারিয়ারে নানা ব্যতিক্রমী চরিত্র এবং গল্পের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরেছেন। এ প্রসঙ্গে জাভেদ বলেন, ‘একমাত্র আমিরই এমন সব চরিত্র এবং গল্পের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন। আশুতোষ গোয়ারিকরের সঙ্গে একটা ছবি ফ্লপ হওয়ার পরও আমির তাঁর সঙ্গে ‘লগান’ করেছিল। সব অভিনেতাই সেসব পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে চান, যাঁদের আগের ছবি হিট ছিল। কিন্তু আমির এমন ঝুঁকি নেন, যা আর কেউ নিতে সাহস পান না।’
ভারতীয় চলচ্চিত্রে আমির খানের অনস্বীকার্য অবদানকে সম্মান জানানোর জন্য পিভিআর সিনেমা এক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করেছে। আমিরের জন্মদিনের দিন ১৪ মার্চ এই চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হবে। ‘আমির খান: সিনেমা কা জাদুকর’ শীর্ষক চলচ্চিত্র উৎসবে আমিরের ‘লগান’, ‘থ্রি ইডিয়েটস’, ‘দঙ্গল’, ‘আন্দাজ আপনা আপনা’, ‘হাম হ্যায় রাহি প্যায়ার কে’, ‘রং দে বাসন্তী’সহ আরও কিছু ছবি প্রদর্শিত হবে।