মারা গেছেন ‘শোলে’র সেই জেলার

গোবর্ধন আসরানির আলোচিত চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ‘শোলে’ ছবির জেলারকোলাজ

ভারতের আনন্দের উৎসব দীপাবলির দিনে নেমে এল শোকের ছায়া। বলিউড হারাল এক কিংবদন্তি কৌতুকাভিনেতাকে, সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেল চারটার দিকে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা গোবর্ধন আসরানি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন এই প্রখ্যাত অভিনেতা। মৃত্যুসংবাদটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে অশোক আসরানি।


রাজস্থানের জয়পুরে জন্ম নেওয়া আসরানি ছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অনন্য অধ্যায়। পাঁচ দশকের বেশি সময়জুড়ে ৩৫০টির বেশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘মেরে আপনে’, ‘বাওয়ার্চি’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘অভিমান’, ‘সরগম’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’—প্রতিটি সিনেমায় তাঁর উপস্থিতি দর্শকদের মনে হাসির সঞ্চার করেছে। পরিচিত ছিলেন হাস্যরসাত্মক চরিত্রে, কিন্তু বাস্তব জীবনে ছিলেন শান্ত, সংযত ও দর্শনচিন্তায় ভরপুর মানুষ । তিনি বলতেন, ‘মানুষ হাসে বলেই আমি বাঁচি। কিন্তু পর্দার বাইরে আমি ভাবি, হাসির আড়ালে কত বেদনা থাকে!’

গোবর্ধন আসরানি

‘শোলে’র জেলার, যে চরিত্র আজও জীবন্ত
গোবর্ধন আসরানির সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ‘শোলে’ ছবির জেলার । ‘হাম আংরেজো কে জামানেকা জেলার হ্যায়’—তাঁর মুখে শোলের এই সংলাপ আজও ভুলতে পারেননি হিন্দি সিনেমাপ্রেমীরা। অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র ও আমজাদ খানের মতো তারকার ভিড়ে তাঁর জেলার চরিত্র দর্শকদের মনে অমলিন হয়ে আছে আজও। এই চরিত্রই আসরানিকে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে কৌতুকাভিনেতাদের মধ্যে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। হাস্যরস, বুদ্ধিমত্তা ও অভিনয়ের সূক্ষ্ম সমন্বয়ে তিনি প্রতিটি চরিত্রে এনে দিতেন প্রাণ।

পর্দায় গোবর্ধন আসরানি
ভিডিও থেকে

১৯৬০-এর দশকে মুম্বাইয়ে অভিনয়ের জগতে পা রাখেন আসরানি। প্রথম দিকে সহ-অভিনেতা হিসেবেই কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর তুখোড় কমেডি সেন্স ও নিখুঁত টাইমিং তাঁকে পরিণত করে বলিউডের অন্যতম সেরা কৌতুকাভিনেতায়। তিনি কেবল হিন্দি নয়, গুজরাটি ও পাঞ্জাবি সিনেমাতেও কাজ করেছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু টেলিভিশন ধারাবাহিকেও তাঁকে দেখা গেছে। আসরানি পাঁচ দশক ধরে ৩৫০টির বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। সত্তর দশক তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা সময় ছিল।

পাঁচ দশকের বেশি সময়জুড়ে ৩৫০টির বেশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন গোবর্ধন আসরানি
ফেসবুক থেকে

অভিনয়জীবনের পাশাপাশি তিনি পরিচালনাতেও হাত পাকিয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে ‘চালবাজ’ নামের একটি ছবি পরিচালনা করেন, যা বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল।

বলিউডে শোক
আসরানির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে বলিউডজুড়ে। অমিতাভ বচ্চন এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘অভিনয়ের এক যুগের অবসান। আসরানি শুধু কমেডিয়ান ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের সবার প্রিয় সহকর্মী ও বন্ধু।’ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র লিখেছেন, ‘দীপাবলির আলো নিভে গেল। বিদায় প্রিয় আসরানি, তোমার হাসি আমাদের মনে চিরকাল বাজবে।’

পরিচালনাতেও হাত পাকিয়েছিলেন গোবর্ধন আসরানি
ভিডিও থেকে

আসরানি রেখে গেলেন স্ত্রী, অভিনেত্রী মনোজনা ও এক পুত্রসন্তান। বলিউডের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাঁকে মনে রাখবে তাঁর সংলাপ, অভিব্যক্তি আর অমলিন হাসির জন্য। দীপাবলির আনন্দের মধ্যেই যেন এক প্রিয় মুখের বিদায়ে নেমে এল অন্ধকার।