‘টাইপকাস্ট ভাঙতে হয়’

ত্রিধা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

বাংলা সিনেমার গণ্ডি পেরিয়ে ত্রিধা চৌধুরী এখন ভারতীয় বিনোদন দুনিয়ার বৃহত্তর পরিসরেও পরিচিত মুখ। শুরুটা হয়েছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘মিশর রহস্য’ দিয়ে। তখনই তাঁর সাবলীল অভিনয় আর সহজ উপস্থিতি পরিচালক, দর্শক ও সমালোচকদের নজর কাড়ে। এরপর তেলেগু সিনেমা, হিন্দি ধারাবাহিক, ওয়েব সিরিজ—ধীরে ধীরে নিজের পরিসর বাড়িয়েছেন ত্রিধা। বিশেষ করে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ ঝার পরিচালনায় ‘আশ্রম’ সিরিজে অভিনয় করে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত পরিচিতি অর্জন করেন তিনি। সেই সিরিজে সাহসী ও দৃঢ়চেতা এক নারীর চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

ত্রিধা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

আবারও নতুনভাবে পর্দায় ফিরছেন ত্রিধা, এবার বড় পর্দায় একেবারে আলাদা এক রূপে। ‘সো লং ভ্যালি’ নামের হিন্দি ছবিতে তাঁকে একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা যাবে। নাম সুমন নেগী। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মান সিং। একটি অপরাধের তদন্ত ঘিরে থ্রিলার সিনেমাটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে, যেখানে ত্রিধার চরিত্রটি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।

এই চরিত্রের জন্য নিজেকে একেবারে নতুনভাবে প্রস্তুত করতে হয়েছে। প্রথমবার পুলিশের উর্দি গায়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতা ত্রিধার কাছে ছিল অস্বস্তিকর, আবার চ্যালেঞ্জেরও। সম্প্রতি সিনেবাস্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘উর্দি পরা খুব সহজ নয়। সেটা শুধু শরীরী নয়, মানসিকভাবেও একরকম দায় তৈরি করে। প্রথম দিকে একটু ভয়ও লাগছিল। শুটিংয়ের মধ্য দিয়ে বুঝেছি, পুলিশের পেশাটা আসলে কতটা কষ্টের, কতটা ত্যাগের। তারা আমাদের নিরাপত্তা দেয়, সমাজের ভার বহন করে, অথচ নিজেরা খুব কম কিছু পায়।’

ত্রিধা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

চরিত্রের ভেতরে ঢুকে অভিনয় করাটাই ত্রিধার কাছে সবচেয়ে জরুরি। নতুন কোনো কাজ হাতে এলেই একধরনের রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠেন তিনি। বলেন, ‘আমার কাছে অভিনয় কেবল কাজ নয়, এটা আমার আবেগ, আমার দায়। দর্শক শুধু বিনোদন চান না, তাঁরা অনেক সময় আমাদের চরিত্রের মধ্যে নিজেদের বাস্তবতা খুঁজে ফেরেন। আমি সব সময় চাই, আমার অভিনীত চরিত্র যেন দর্শকের মনে দাগ কাটে, ভাবায়, স্পর্শ করে।’

‘আশ্রম’ সিরিজের সাফল্যের পর একটা সময় ত্রিধা একধরনের ঘরানাভুক্ত চরিত্রে আটকে যাচ্ছিলেন। বারবার একই ধরনের চরিত্রে তাঁর ডাক আসছিল। তখন নিজেই উপলব্ধি করেন, এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বলেন, ‘আমি তো অভিনেত্রী—আমার কাজ তো নিজেকে ভাঙা, গড়া ও নতুন করে উপস্থাপন করা। সেই চিন্তা থেকেই টাইপকাস্টিং থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করি। সব সময় বিশ্বাস করি, টাইপকাস্ট ভাঙতে হয়।’

ত্রিধা চৌধুরী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও আত্মতুষ্ট নন ত্রিধা। তাঁর ভাষায়, ‘প্রতিটা চরিত্র আমার কাছে একটা নতুন পরীক্ষা। ‘সো লং ভ্যালি’ তেও এমন কিছু শিখেছি, যা আগে কখনো বুঝিনি। আমি চাই, আমার চরিত্রগুলো শুধু পর্দায় না থেকে দর্শকের মনের মধ্যে জায়গা করে নিক।’

ত্রিধা এখন একসঙ্গে কাজ করছেন বলিউড, দক্ষিণ ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং ওয়েব সিরিজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে। ভাষা বা ইন্ডাস্ট্রির সীমা নয়, তিনি বিশ্বাস করেন নিজেকে চরিত্র দিয়ে আলাদা করে তোলাই একজন শিল্পীর প্রকৃত সাফল্য। বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, একজন শিল্পীর কোনো গণ্ডি থাকতে পারে না। ভাষা বা সংস্কৃতির সীমানা পেরিয়ে যদি একজন শিল্পী মানুষের হৃদয় ছুঁতে পারেন, সেটাই তাঁর আসল জয়।’
এই বিশ্বাস আর নিষ্ঠাই ত্রিধাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর তিনি যেন প্রতি কাজেই সেই বিশ্বাসকে সত্যি করে ফিরছেন নতুন কোনো চরিত্রে, নতুন এক আবিষ্কারে।

আরও পড়ুন