সাইফ আলী খানের ওপর হামলা, যা হলো গতকাল সারা দিন

সাইফ আলী খান। এএনআই

গভীর রাত। মুম্বাইয়ের পশ্চিম বান্দ্রার খান পরিবারের সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তখন এক বা একাধিক দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়ে সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুর খানের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। সাইফকে ছুরি দিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ করে তারা। মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে দীর্ঘ সময় অস্ত্রোপচারের পর এখন তিনি বিপদমুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

গত বৃহস্পতিবার কাকভোরে সাইফের ছুরিকাঘাতের খবর হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। বলিউডের ‘ছোট নবাব’-এর ওপর এ হামলার খবরে উদ্বিগ্ন পুরো চলচ্চিত্রজগৎ ও তাঁর ভক্তকুল। বড় তারকা দম্পতির বাড়িতেই এ হামলা মুম্বাইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

আরও পড়ুন

একজন, নাকি একাধিক দুর্বৃত্ত এদিন সাইফ–কারিনার অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করেছিল, এখনো তা জানা যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ চেঁচামেচিতে সাইফের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখেন, কাউকে দেখে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন বাড়ির পরিচারিকা। সাইফকে দেখে তখন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি হামলা চালায়। সাইফের সঙ্গে দুর্বৃত্তের ধস্তাধস্তি হয়। সে সময় ধারালো ছুরি দিয়ে সাইফের শরীরে একাধিক কোপ বসায় সেই দুর্বৃত্ত।

আরও পড়ুন
সাইফ আলী খান। এএফপি ফাইল ছবি

রক্তাক্ত অবস্থায় সাইফকে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, সাইফ ও কারিনার এদিন কোনো শুটিং ছিল না। তাই ওই সময় তাঁদের নিরাপত্তারক্ষীরা বাসায় ছিলেন না। এমনকি বাসায় গাড়ির কোনো চালকও ছিলেন না। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে সাইফের শারীরিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হচ্ছিল। কারিনা তাই একমুহূর্ত সময় নষ্ট করতে চাননি। বড় ছেলে ইব্রাহিম বাবা সাইফকে অটোরিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।

সাইফের ওপর যখন হামলা করা হয়, তখন কারিনা এবং দুই ছেলে তৈমুর আর জেহ বাসায় ছিল। তাঁদের বাড়ির সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে, অনুপ্রবেশকারী তৈমুর আর জেহর ঘরেও প্রবেশ করেছিল। কারিনা এ হামলার সত্যতা স্বীকার করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, ‘সাইফ হাতে আঘাত পেয়েছেন।

আরও পড়ুন
সাইফ আলী খানকে হাসপাতালে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন ইব্রাহিম আলী খান ও সারা আলী খান। এএনআই

তাই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো আছেন। পুলিশ এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। আমরা মিডিয়া আর ভক্তদের ধৈর্য ধরার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। অনুগ্রহ করে এ নিয়ে কেউ কোনো গুজব ছড়াবেন না। এ ঘটনায় আপনারা সবাই যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দুশ্চিন্তায় আছেন, এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’

সাইফের ওপর হামলার সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই পুলিশ জোর তদন্তে নেমে পড়েছে। জানা গেছে, এ মামলায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে বান্দ্রা পুলিশ। বাসার পরিচারিকার ওপর সন্দেহ প্রকাশ করছে তারা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফ-কারিনার বাসার পরিচারিকাকে পুলিশ স্টেশনে তলব করা হয়েছিল। মুম্বাইয়ের দুঁদে পুলিশ কর্মকর্তাদের এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা সাইফের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে হাতের ছাপ এবং নানা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। মুম্বাই পুলিশ খতিয়ে দেখছে যে শুধু চুরি বা লুটপাটের উদ্দেশ্যেই কি সাইফ-কারিনার বাসায় এসেছিল দুর্বৃত্তরা, নাকি এর পেছনে গভীর কোনো চক্রান্ত আছে। পুলিশ জানিয়েছে যে এ মামলার তদন্তের জন্য ১০টি টিম বানানো হয়েছে। ‘ফায়ারস্পেস’ দিয়ে হামলাকারী সাইফ-কারিনার বাসায় ঢুকেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালটির প্রধান নির্বাহী নীরজ উত্তমনি জানিয়েছিলেন যে সাইফ শরীরে ছয়টি আঘাত পেয়েছেন। তাঁর মেরুদণ্ডের কাছে গভীর ক্ষত আছে। সাইফের অস্ত্রোপচার করেছেন নিউরোসার্জন নিতিন ডাঙ্গে। অস্ত্রোপচারের পর নিতিন ডাঙ্গে জানিয়েছেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর পর্যবেক্ষণের জন্য সাইফ আলী খানকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। অভিনেতার শরীরে থাকা ছুরির টুকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

সাইফ আলী খানকে হাসপাতালে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন স্ত্রী কারিনা কাপুর খান, বোন সোহা আলী খান, কন্যা সারা আলী খান; রণবীর কাপুর, আলিয়া ভাট, পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ।