বিয়ে করেননি, ফেসবুকে নেই, বারবার চমকে দেন তিনি

বিভিন্ন চরিত্রে অক্ষয় খান্না। কোলাজ

তিনিও তারকা পরিবারের সন্তান, বাবা বিনোদ খান্না হিন্দি সিনেমার আলোচিত অভিনেতা। কিন্তু তারকার সন্তান হিসেবে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার দুর্নাম তাঁর বিরুদ্ধে নেই। তিনি শাহরুখ খান বা সালমান খানের মতো জনপ্রিয় নন, কিন্তু তাঁর আলাদা ভক্ত-অনুসারী সব সময়ই ছিল। ইচ্ছা হলেই কাজ থেকে বিরতি নেন, যখন ফেরেন প্রবলভাবেই ফেরেন। এই অভিনেতা আর কেউ নন অক্ষয় খান্না। গত শুক্রবার আদিত্য ধরের সিনেমা ‘ধুরন্ধর’ মুক্তির পর থেকেই নতুন করে চর্চায় অক্ষয়। অন্তর্জালে তাঁর অভিনয়, ক্যারিয়ার আর ব্যক্তিজীবন নিয়ে চলছে চর্চা।

অক্ষয় খান্না নিজেকে আলাদা করেন তাঁর এক্সপ্রেশন দিয়ে। কেবল চোখ আর মুখের অভিব্যক্তি দিয়ে তিনি চরিত্রের আবেগ যেভাবে তুলে ধরেন, সেটা এই সময়ে ভারতের খুব কম অভিনেতাই করতে পারেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে নায়ক, খলনায়ক সব ধরনের চরিত্রেই তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

শুরুর গল্প

১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ মুম্বাইয়ে জন্ম অক্ষয় খান্নার। ছোটবেলায় পড়ার চেয়ে খেলায় মন ছিল বেশি। একটা সময় খেলোয়াড় হতেও হয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিনয়েও নাম লেখান। ১৯৯৭ সালে ‘হিমালয় পুত্র’ দিয়ে অভিষেক। তবে আলোচনায় আসেন ‘বর্ডার’ সিনেমা দিয়ে বহু তারকার মধ্যেও আলাদাভাবে নজর কাড়েন।

তবে সাধারণ দর্শকের কাছে অক্ষয় পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আ আব লটে চলে’ সিনেমা দিয়ে। ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে তাঁর রসায়ন প্রশংসিত হয়। এরপর একে একে ‘তাল’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘হামরাজ’, ‘হালচাল’, ‘গান্ধী, মাই ফাদার’ ইত্যাদি সিনেমা দিয়ে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

‘ছাবা’ ছবিতে আওরঙ্গজেবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় খান্না। এক্স থেকে

২০১০ সালের পর থেকে ক্যারিয়ারে খারাপ সময় পার করেছেন। এ সময় যেসব সিনেমা করেছেন, সেগুলোতে ঠিক পুরোনো অক্ষয়কে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে ভক্তরা জানতেন অক্ষয় ঠিকই ফিরবেন।

২০২৫ সালে ‘ছাবা’ আর ‘ধুরন্ধর’ মুক্তির পর অন্তর্জালে চলছে অক্ষয় খান্নার প্রশংসা। অনেকে তাঁকে চলতি বছরের সেরা পারফরমার বলেও অবিহত করেছেন।

বিরতির পর

‘ইত্তেফাক’-এর রিমেকে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন হয় অক্ষয়ের। এরপর ‘মম’, ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’, ‘দৃশ্যম ২’ ও ‘সেকশন ৩৭৫’ সিনেমায় নিজের ছাপ রাখেন।

আওরঙ্গজেব আর রেহমান ডাকাত হয়ে আলোচনায়
চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পায় লক্ষ্মণ উতেকরের সিনেমা ‘ছাবা’। এ ছবিতে আওরঙ্গজেব চরিত্রে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। তবে তখন কে জানত, চমক আরও বাকি আছে। এবার তাঁকে পাওয়া গেল আদিত্য ধরের ‘ধুরন্ধর’ সিনেমায়। এখানে তাঁকে দেখা গেছে রেহমান ডাকাতের চরিত্রে। মনে করা হয়েছে পাকিস্তানের করাচির কুখ্যাত গ্যাংস্টার রেহমান ডাকাতের প্রেরণায় নির্মিত হয়েছে তাঁর চরিত্রটি।

কী বলছেন দর্শকেরা

২০২৫ সালে ‘ছাবা’ আর ‘ধুরন্ধর’ মুক্তির পর অন্তর্জালে চলছে অক্ষয় খান্নার প্রশংসা। অনেকে তাঁকে চলতি বছরের সেরা পারফরমার বলেও অবিহত করেছেন। এক্সে এক দর্শক লিখেছেন, ‘অক্ষয় খান্না সত্যিই অন্য মাত্রায় ছিলেন। প্রতিটি দৃশ্য তিনি নিখুঁতভাবে তৈরি করেছেন!’ আরেক ভক্ত বললেন, ‘আমরা কি শুধু ২০২৫ সালকে অক্ষয় খান্নার বছর ঘোষণা করতে পারি না? “ছাবা”-তে অসাধারণ ছিলেন আর “ধুরন্ধর”-এ নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। অসাধারণ পারফরম্যান্স!’

‘থুরন্ধর’ সিনেমা অক্ষয় খান্না। এক্স থেকে

অক্ষয় কেন আলাদা
অক্ষয় খান্না নিজেকে আলাদা করেন তাঁর এক্সপ্রেশন দিয়ে। কেবল চোখ আর মুখের অভিব্যক্তি দিয়ে তিনি চরিত্রের আবেগ যেভাবে তুলে ধরেন, সেটা এই সময়ে ভারতের খুব কম অভিনেতাই করতে পারেন।

আমি জীবনে দায়িত্ব পছন্দ করি না। আমি চাই খুবই অবাধ জীবন যাপন করতে। সন্তানের কোনো বড় দায়িত্ব নেই, স্ত্রীর দায়িত্ব নেই—সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো এসব। আমি সেটা চাই না। আমি একাই সুখী।
অক্ষয় খান্না

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে নায়ক, খলনায়ক সব ধরনের চরিত্রেই তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ‘ধুরন্ধর’ সিনেমার রিভিউতে যেমন সমালোচক অনুপমা চোপড়া বলেছেন, ‘ছবির অন্য নায়কদের পারফরম্যান্সের জন্য পেশি দেখাতে হয়েছে কিন্তু অক্ষয়ের কিছুই লাগেনি। স্রেফ কেবল এক্সপ্রেশন দিয়েই অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।’

ব্যক্তিজীবনে ‘একা’

অভিনয় ছাড়াও অক্ষয় খানার ব্যক্তিজীবনও বরারই আলোচনায় থাকে। ৫০ বছর বয়সেও তিনি বিয়ে করেননি, কোনো অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনও নেই। এই সময়ে এসেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এড়িয়ে চলেন, পারতপক্ষে সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দেন না।

‘দৃশ্যম’–এ অক্ষয় খান্না। আইএমডিবি

ব্যক্তিজীবনে একা থাকা প্রসঙ্গে বলিউড হাঙ্গামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অক্ষয় বলেছিলেন, ‘আমি জীবনে দায়িত্ব পছন্দ করি না। আমি চাই খুবই অবাধ জীবন যাপন করতে। সন্তানের কোনো বড় দায়িত্ব নেই, স্ত্রীর দায়িত্ব নেই—সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো এসব। আমি সেটা চাই না। আমি একাই সুখী। কোনো দায়িত্ব নেই। কারও দেখাশোনা করতে হবে না, কারও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। শুধু নিজের দায়িত্ব নিজেই নেব। অসাধারণ জীবন পেয়েছি। দুর্দান্ত। কেন সেটা নষ্ট করব?’

হিন্দুস্তান টাইমস, ফিল্মফেয়ার, দ্য ইকোনমিক টাইমস অবলম্বনে