‘আমি রাজনীতির শিকার হয়েছি’
বাঙালি কন্যা। বেড়ে ওঠা মুম্বাইয়ে। দক্ষিণ ও বলিউড—দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই সমান সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন অভিনেত্রী শ্রদ্ধা দাস। সম্প্রতি ওয়েব সিরিজ ‘সার্চ: নয়না দ্য মার্ডার কেস’-এ দুরন্ত অভিনয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। মুম্বাইয়ের এক তারকা হোটেলে এ অভিনেত্রীর নতুন কাজ, ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।
আইএমডিবির জনপ্রিয় সেলিব্রেটির তালিকায় শীর্ষস্থানে অবস্থান এবং ‘সার্চ: নয়না দ্য মার্ডার কেস’ সিরিজের সাফল্য—সব মিলিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত শ্রদ্ধা দাস। তিনি বলেন, ‘এত বছর ধরে নানা ভাষায় কাজ করেছি। ছয়টি ভাষায় অভিনয় করেছি। তাই এই স্বীকৃতি, প্রশংসা আর ভালোবাসা—সবকিছুই উপভোগ করছি।’
সৃজনশীলতার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়েছে ‘সার্চ: নয়না দ্য মার্ডার কেস’। আলাপের শুরুতেই শ্রদ্ধা জানান, কঙ্কণা সেন শর্মার মতো অভিনেত্রী এবং রোহন সিপ্পির মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে বিশেষ আনন্দের। সিরিজে তাঁর চরিত্র নিয়ে দর্শকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাঁকে আরও উচ্ছ্বসিত করেছে।
সাফল্য উদ্যাপন প্রসঙ্গে হালকা হেসে শ্রদ্ধা বলেন, ‘সিরিজ মুক্তির পর থেকেই কাজ আর ইন্টারভিউ নিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে। উদ্যাপনের সময়ই পাইনি। তবে সবকিছুর জন্য স্রষ্টার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
অভিনয়ে আসার পথে পরিবারের সমর্থন প্রসঙ্গে শ্রদ্ধা বলেন, ‘আমার বাবা খুবই “কুল”। তবে অন্য বাঙালি পরিবারের মতো তাঁরাও চাইতেন আমি পড়াশোনায় মন দিই। বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি ইঞ্জিনিয়ার হই। কিন্তু আমি গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছি। পাশাপাশি গানও শিখেছি।’
শ্রদ্ধার একটি মিউজিক অ্যালবামের ফটোশুট দেখে কিংবদন্তি দেব আনন্দ তাঁকে একটি ছবিতে অভিনয়ের কথা ভেবেছিলেন। তবে ছবিটি আর হয়নি। স্মৃতিচারণায় শ্রদ্ধা বলেন, ‘আমার বাবা-মা দেব আনন্দ স্যারের বড় ভক্ত। ওনার ছবিতে কাজের কথা শুনে তাঁরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। স্যার আমাকে জিনাত আমানের কথা মনে করিয়ে দিই—এই কথাটা বলেছিলেন। এটা আমার জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি।’
বলিউড ও দক্ষিণি ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় শ্রদ্ধার পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট। তাঁর মতে, ‘দক্ষিণের দর্শক বেশি আবেগপ্রবণ ও অনুগত। সেখানে কাকভোরে হলভর্তি দর্শক পাওয়া স্বাভাবিক। বলিউডে সেটা তুলনামূলক কম। তাই প্যান-ইন্ডিয়া ছবির প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেড়েছে।’ শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বলিউড কিছুটা অগোছালো হলেও দক্ষিণে কাজের শৃঙ্খলা বেশি। তবে “নয়না” সিরিজের শুটিংয়ে ইউনিট পুরোপুরি শৃঙ্খলা মেনেই কাজ করেছে।’
দক্ষিণি সুপারস্টার আল্লু অর্জুনের সঙ্গে আর্য ২ ছবিতে কাজ করেছেন শ্রদ্ধা। সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি জীবনের অন্যতম আনন্দের স্মৃতি বলে উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষায়, ‘আল্লু ভীষণ মজার আর তীক্ষ্ণবুদ্ধির মানুষ। তখন থেকেই উনি স্টাইল ও ফ্যাশন নিয়ে খুব সচেতন ছিলেন। কেশসজ্জা আর প্রসাধন নিয়েও আমাকে পরামর্শ দিতেন। আজ ওনার আকাশছোঁয়া সাফল্য দেখে আমি সত্যিই খুশি।’
ইচ্ছার তালিকায় কারা—এ প্রশ্নে শ্রদ্ধা বলেন, ‘শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করতে চাই। সুযোগ পেলে আবার আল্লুর সঙ্গেও। শাড়ির প্রতি আমার আলাদা টান আছে। তাই সঞ্জয় লীলা বানসালির কোনো ছবিতে শাড়ি পরে অভিনয় করাই আমার স্বপ্ন। রাজ-ডিকের মতো পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করতে চাই।’
দীর্ঘ অনিশ্চয়তার সময় পেরিয়ে এখন নিজেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে করছেন শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, ‘১৫–২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আমার পছন্দের চরিত্রগুলো পাওয়ার জন্য। অনেক সময় ছোট চরিত্রে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। রাজনীতির শিকার হয়েছি, তারকা-সন্তানের কারণে কাজও হারিয়েছি। আগে এসব নিয়ে খুব কষ্ট পেতাম। এখন আর না। আমি কিছুই থালায় সাজিয়ে পাইনি—সবকিছু অর্জন করেছি পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।’
‘নয়না’ সিরিজের জন্য তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। শ্রদ্ধার কথায়, ‘এই সিরিজে আমার কোনো দৃশ্য বা সলাপ বাদ দেওয়া হয়নি। অতীতে এমন অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে, যেখানে আমার দৃশ্য কেটে দেওয়া হয়েছে।’
বাংলা সিনেমা দেখা হয় কি না—এ প্রশ্নে শ্রদ্ধা জানান, ‘জানুয়ারির পর থেকে টানা শুটিংয়ের কারণে সময়ই পাইনি। তবে বাঙালিয়ানা ধরে রাখার চেষ্টা করি। বাঙালি খাবার আর মিষ্টি খুব পছন্দ করি। আর চিংড়ি মাছ তো আমার দুর্বলতা।’
আগামী দিনে শ্রদ্ধাকে দেখা যাবে জয়দীপ অহলাওয়াতের সঙ্গে একটি গ্ল্যামারাস চরিত্রে এবং মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে আরও একটি শক্তিশালী নারী চরিত্রে। তিনি বলেন, ‘কঙ্কণার পর জয়দীপ ও মনোজের সঙ্গে কাজ করা আমার কাছে স্বপ্নপূরণের মতো।’
অভিনয়জীবনের আক্ষেপ প্রসঙ্গে একটু থমকে শ্রদ্ধা বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে কিছু কাজ করেছি, যেগুলো করতে চাইনি। সেগুলো ভাবলে মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। তবে এখনকার আনন্দ সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় তৃপ্তি হলো—এখন নির্মাতারা আমাকে অডিশন ছাড়াই চরিত্র অফার করছেন।’