‘নিজেকে বিক্রি না করে, সততা দিয়েও সাফল্য পাওয়া যায়’

‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার পোস্টার থেকে। আইএমডিবি

‘মুন্না ভাই’ ফ্র্যাঞ্চাইজি, ‘থ্রি ইডিয়টস, ‘পিকে’ অথবা ‘সঞ্জু’ সিনেমার প্রযোজক হিসেবেই অনেকে তাঁকে চেনেন। তবে বিধু বিনোদ চোপড়া কেবল প্রযোজকই নন, ‘পারিন্দা’, ‘১৯৪২: আ লাভ স্টোরি’র মতো সিনেমার পরিচালকও বটে। নন্দিত এই নির্মাতা-প্রযোজকের নতুন সিনেমা ‘টুয়েলভথ ফেল’ মুক্তি পেয়েছে গত ২৭ অক্টোবর। মুক্তির পর থেকে সমালোচকদের প্রশংসা আর দর্শকের ভালোবাসা কুড়াচ্ছে সিনেমাটি।

আরও পড়ুন

চলতি শতকে খুব বেশি সিনেমা বানাননি বিধু বিনোদ চোপড়া, ব্যস্ত ছিলেন প্রযোজনা নিয়েই। ২০০০ সালে ‘মিশন কাশ্মীর’-এর পর ২০০৭ সালে করেন ‘একলব্য: দ্য রয়্যাল গার্ড’। ২০১৫ সালে একটি ইংরেজি সিনেমা করেন, দীর্ঘ বিরতির পর আবার হিন্দি সিনেমা করেন ২০২০ সালে।

‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

তবে ‘শিকারা’ নামে সিনেমাটি সেভাবে প্রশংসা কুড়াতে পারেনি। অনেকেই সর্বশেষ কয়েকটি সিনেমায় বিধু বিনোদন চোপড়ার ছাপ খুঁজে পাননি। তাই নতুন সিনেমা ‘টুয়েলভথ ফেল’ নিয়ে দর্শক-সমালোচকদের ব্যাপক প্রত্যাশা ছিল, সে কথা বললে ভুল হবে। কিন্তু মুক্তির পর সবাইকে চমকে দিয়েছে ‘টুয়েলভথ ফেল’।

গল্প ডাকাতের জন্য কুখ্যাত রাজস্থানের চম্বল এলাকার। নিয়মের ‘ন’ বলতে নেই সেই এলাকায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে সর্বত্রই ঘুষের কারবার। এমনকি নিশ্চিত ফেল করবে জেনে শিক্ষকেরা ‘দয়াপরবশ’ হয়ে শিক্ষার্থীদের নকল করতে সহায়তা করেন! পাস তো অন্তত করুক। এই গ্রামের ছেলে মনোজ কুমার শর্মা। তার স্বপ্ন বড়।

কিন্তু এত অনিয়ম আর অভাব-দারিদ্র্যের মধ্যে তার স্বপ্ন কি সত্যি হবে? স্বপ্নপূরণের একটা সুযোগ আসে, দাদি সারা জীবনের সঞ্চয় তুলে দেন মনোজের হাতে। নাতি রওনা হয় দিল্লিতে। স্বপ্ন, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উতরে গিয়ে পুলিশ অফিসার হবে। কিন্তু ভাগ্য যে তার জন্য এতটা পরীক্ষা লিখে রেখেছে, কে জানত। দিল্লিতে গিয়েই সব টাকা হারিয়ে ফেলে মনোজ। এরপর কী হয়? চম্বলের মনোজ কী পারে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করতে? এই নিয়েই ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার গল্প।
সিনেমাটি তৈরি হয়েছে অনুরাগ পাঠকের একই নামের বহুল পঠিত বই অবলম্বনে, যা লেখা হয়েছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে।  

‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার পোস্টার থেকে। আইএমডিবি

মুক্তির পর থেকেই সমালোচকদের প্রশংসা পাচ্ছে ‘টুয়েলভথ ফেল’। বেশির ভাগ সমালোচকই বলছেন, অনেক দিন পর এমন হিন্দি সিনেমা তৈরি হয়েছে, যা ভারতের শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। সমালোচকেরা মনোজের চরিত্রে অভিনয় করা বিক্রান্ত ম্যাসির ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তিনি যে সিনেমাটিতে ক্যারিয়ার সেরা অভিনয় করেছেন, সে বিষয়েও একমত সমালোচকেরা।

সাধারণ দর্শকও লুফে নিয়েছেন সিনেমাটি। প্রত্যন্ত এক গ্রামের প্রায় নিঃস্ব এক তরুণের আইপিএস অফিসার হওয়ার গল্প সাধারণ মানুষকেও ছুঁয়ে গেছে। ফল, তেমন কোনো প্রচার ছাড়াই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে ‘টুয়েলভথ ফেল’-এর গল্প। তাই বক্স অফিসে একসঙ্গে মুক্তি পাওয়া অন্য সিনেমাগুলোকে টেক্কা দিয়েছে বিধু বিনোদ চোপড়ার সিনেমাটি। ২৭ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া কঙ্গনা রনৌত অভিনীত ‘তেজস’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু ‘টুয়েলভথ ফেল’ মাত্র ৫ দিনে প্রায় ১০ কোটি রুপি আয় করেছে মাত্র ২৫ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি।  

‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

বক্স অফিস বিশ্লেষকেরা বলছেন, হৃদয়ছোঁয়া গল্প, দুর্দান্ত নির্মাণ আর অভিনয়ের গুণে ছবিটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা অনুভব করেছেন দর্শকেরা। ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়ার গল্পের সঙ্গে মানুষ খুব সহজেই সম্পৃক্ত হয়ে যায়, এ ছবির ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। যে কারণে বড় কোনো তারকা ছাড়াই আলোচনায় চলে এসেছে ‘টুয়েলভথ ফেল’।

‘গালাটা প্লাস’-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্মাতা বলেন, এই সিনেমা বৃহৎ অর্থে আসলে তাঁর জীবনেরই গল্প। তিনি কাশ্মীর থেকে বোম্বে এসেছিলেন, অচেনা শহরে অনেক সংগ্রাম করে নিজের জায়গা করে নেন; পান অস্কারে মনোনয়ন। ফলে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা করতে গিয়ে ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সিনেমাটিতে আছে, মনোজ দিল্লিতে এসে তার ব্যাগ হারিয়ে ফেলে। বাস্তবেও প্রথমবার মুম্বাই এসে নিজের সুটকেস হারিয়েছিলেন নির্মাতা।

২০২২ সালে সিনেমাটির ঘোষণা আসে। পরিচালক জানান, ‘টুয়েলভথ ফেল’-এর মূল চরিত্রে দেখা যাবে বিক্রান্ত ম্যাসিকে। এরপর গত বছরই ভারতের আগ্রা, চম্বল, দিল্লি, মুসৌরি, মুম্বাইসহ বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং হয়।

সিনেমাটিতে সুযোগ পাওয়া নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম লালানটপ সিনেমাকে বিক্রান্ত ম্যাসি বলেন, বিধু বিনোদ চোপড়ার মতো পরিচালক যে সিনেমায় তাঁকে মূল চরিত্রে ভেবেছেন, বিশ্বাসই করতে পারেননি। বিক্রান্ত বলেন, ‘বিধু বিনোদ চোপড়া আমার কোনো কাজ সেভাবে দেখেননি। তাঁর স্ত্রী (সমালোচক অনুপমা চোপড়া) বারবার আমার প্রশংসা করেন। এরপরই তিনি অফিসে ডেকে পাঠান।’

‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

সিনেমাটি নিয়ে সম্প্রতি ভারতের সমালোচক ভারদ্বাজ রঙ্গনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বিধু বিনোদ চোপড়া। ইউটিউব চ্যানেল ‘গালাটা প্লাস’-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্মাতা বলেন, এই সিনেমা বৃহৎ অর্থে আসলে তাঁর জীবনেরই গল্প। তিনি কাশ্মীর থেকে বোম্বে এসেছিলেন, অচেনা শহরে অনেক সংগ্রাম করে নিজের জায়গা করে নেন; পান অস্কারে মনোনয়ন। ফলে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা করতে গিয়ে ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সিনেমাটিতে আছে, মনোজ দিল্লিতে এসে তার ব্যাগ হারিয়ে ফেলে। বাস্তবেও প্রথমবার মুম্বাই এসে নিজের সুটকেস হারিয়েছিলেন নির্মাতা।

সিনেমাটি ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে বানাননি বলে জানান বিধু বিনোদ চোপড়া। ভারদ্বাজ রঙ্গনকে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে কখনো বিক্রি করিনি। সিনেমাতেও সেটাই দেখাতে চেয়েছি—নিজেকে বিক্রি না করে, সততা দিয়েও সাফল্য পাওয়া যায়।’