সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কারগিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এই বলিউড তারকা

আজ নানা পাটেকরের জন্মদিনকোলাজ

তিনি জীবনের শুরুর দিকে উপার্জনের জন্য রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং আঁকতেন। আট কিলোমিটার হেঁটে কাজে যেতেন। প্রয়োজনে বলিউডের ছবির পোস্টার এঁকেও উপার্জনের চেষ্টা করেছেন তিনি। এসব করে মাস গেলে হাতে আসত মেরেকেটে ৩৫ টাকা!
আসল নাম বিশ্বনাথ পাটেকর। ১৯৭৮ সালে ‘গমন’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন নানা। ‘সালাম বম্বে’, ‘অঙ্গার’, ‘পারিন্দা’, ‘প্রহার’-এর মতো ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছেন তিনি। তিন দশক ধরে বলিউড তাঁর নানা ধরনের অভিনয় দেখে আসছে। কখনো তিনি তাঁর অভিনয়ে মানুষকে হাসিয়েছেন, কখনো কাঁদিয়েছেন, কখনোবা ভাবতে বাধ্য করেছেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক অবহেলিত বিষয় নিয়ে। আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও তিনি কিন্তু বদলে যাননি। তিনি আজও সেই মাটির মানুষ।
তাঁর বাস্তব জীবনটা আর সব তারকার তুলনায় আলাদা। পোশাক থেকে বাসস্থান—তাঁর জীবনযাত্রায় বিলাসিতা নেই এতটুকু। যাকে বলে একেবারে নিপাট সাদামাটা জীবন কাটাতেই ভালোবাসেন নানা। মুম্বাইয়ের একটা সাধারণ ছোট অ্যাপার্টমেন্টে মায়ের সঙ্গে থাকেন তিনি, যার বেডরুমের সংখ্যা মাত্র একটি।

ভারতের অগণিত আমজনতার পাশে তিনি রয়েছেন বছরের পর বছর ধরেই। গত ৩০ বছরে প্রতি মাসে নিজের উপার্জনের ৯০ শতাংশ মহারাষ্ট্রের গরিব মানুষকে দান করে চলেছেন নানা পাটেকর! মহারাষ্ট্র যে সময় খরার কবলে পড়ে এবং একের পর এক কৃষকের আত্মহত্যার খবর উঠে আসতে থাকে শিরোনামে, তখনো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নানা। মারাঠাওয়াড়ায় গিয়ে ১১২টি কৃষক পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে প্রতিটি পরিবারের হাতে তুলে দেন নগদ টাকা।

নানা পাটেকর। এএনআই

শুধু এখানে নয়, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে আরও ৭০০টি কৃষক পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন নানা। তাঁদের অর্থনৈতিক সংকট মেটানোর চেষ্টা করেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী। যেসব কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের স্বনির্ভর করে তুলতে বিভিন্নভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নানা। এসব কাজ দেখভালের জন্য তাঁর একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও রয়েছে। এই সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন কৃষকদের সাহায্যের জন্য।

ক্যারিয়ারে চূড়ান্ত সফল এবং স্বকীয় অভিনয়ের কারণে আলাদা পরিচিতি পেলেও, সাফল্যের স্বাদ পেলেও শৈশবে কঠিন সময় পার করেছেন নানা। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নানার বাবা। কিন্তু সেই ব্যবসা লোকসানের মুখ দেখে। নানার বাবা তাঁর বন্ধুর সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই বন্ধুই টাকাপয়সা নয়ছয় করেন। নানার বাবার ব্যবসায় ভরাডুবি হলে তাঁদের সংসারেও অর্থাভাব দেখা দেয়। স্কুলে পড়াকালীন অবস্থায় সংসারের খরচের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে নানার ওপরেও। নিজেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে আবার কাজ করতে যেতেন তিনি। সামান্য কিছু অর্থপ্রাপ্তির আশায় জেব্রা ক্রসিং আঁকার কাজও করেছেন তিনি। সিনেমার পোস্টারও বানাতেন নানা। স্কুল থেকে ফিরে আট কিলোমিটার হেঁটে পোস্টার বানাতে যেতেন তিনি। এভাবে প্রতিদিন ৩৫ টাকা রোজগার করতেন এই অভিনেতা। পোস্টার তৈরির জন্য টাকার পাশাপাশি এক বেলার খাবারও বিনা মূল্যে পেতেন নানা। খাবার নিয়ে আবার আট কিলোমিটার হেঁটে বাড়িতে ফিরে যেতেন তিনি। ২৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন নানা। সেই বছরেই বলিউডে নানার প্রথম ছবি মুক্তি পায়। নতুন পেশা, নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নানা।

নানা পাটেকর। এএনআই

‘প্রহার’ ছবির জন্য তিন বছর সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নানা। সেনাবাহিনী থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ‘ক্যাপ্টেন’ পদমর্যাদা দেওয়া হয়। জেনারেল বিজয়কুমার সিংয়ের সঙ্গে কাজ করেছিলেন নানা।

‘প্রহার’ ছবিতে বিজয়কুমারকেও অভিনয়ের সুযোগ দেন নানা। শুধু নিজের ছবির প্রয়োজনে যে সেনাবাহিনীতে নানা প্রশিক্ষণ নেননি, তার প্রমাণ দিয়েছিলেন এই অভিনেতা। ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর নানা আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কারগিল যুদ্ধের সময় দেশের সেবায় নিযুক্ত হন। বলিউডের অনেক সমালোচকের মতে, দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেই নানার হাবভাব গুরুগম্ভীর প্রকৃতির। নিয়মনিষ্ঠ চলার নেপথ্য কারণও একই বলে মনে করেন অনেকে।

মায়ের সঙ্গে নানা পাটেকর
ফেসবুক পেজ থেকে

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রান্না করতে ভালবাসেন নানা। মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধবকে নিজের হাতের রান্নাও খাওয়ান তিনি। নানার পুত্র মালহার পাটেকরও অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু নানা কখনো মালহারের ক্যারিয়ার তৈরিতে তাঁর প্রভাব খাটাননি। এক পুরোনো সাক্ষাৎকারে নানা বলেছিলেন, ‘আমি ওকে ইচ্ছা করেই কোনো সাহায্য করিনি। আমি চাই, ও নিজের চেষ্টায় ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা তৈরি করুক।’

আরও পড়ুন