বলিউডের তুমুল প্রতিযোগিতার বাইরে ১০ বন্ধুত্বের গল্প
পেশাগত প্রতিযোগিতার মধ্যে থেকেও বলিউডের অনেক তারকার মধ্যে গড়ে উঠেছে দারুণ বন্ধুত্ব। এই তারকারা প্রমাণ করেছেন, বলিউডের তথাকথিত ইঁদুর দৌড়ের মধ্যেও সত্যিকারের সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে। চলুন জেনে নিই এমন কিছু বন্ধুত্বের গল্প।
কারিনা কাপুরের ‘গার্ল গ্রুপ’
‘কফি উইথ করণ’ অনুষ্ঠানে কারিনা কাপুর তাঁর ‘গার্ল গ্রুপ’-এর কথা প্রথমে জানান। তাঁর বোন কারিশমা কাপুরের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব অটুট। প্রায়ই তা ধরা পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একসঙ্গে খাওয়া, ঘোরাঘুরি করার ছবিতে। তবে সে গ্রুপে আরও আছেন মালাইকা আরোরা ও অমৃতা অরোরা।
বিশেষত অমৃতার সঙ্গে কারিনার বন্ধুত্ব শুধু ফটোশুট বা পার্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তাঁরা একে অপরের পরিবারকেও আপন করে নিয়েছেন। কারিনা ও অমৃতা যখন প্রথম বন্ধু হন, তখন যেমন ছিলেন, আজও তেমনই রয়েছেন—এটাই কারিনার কাছে অমূল্য। অমৃতা যেভাবে জীবন উপভোগ করেন এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি দায়বদ্ধ, তা কারিনার দৃষ্টিতে প্রেরণাদায়ক। অমৃতা বলেন, ‘কারিনার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে হাসি, কান্না, রাগ, ঝগড়া, সবই থাকে। কিন্তু দিন শেষে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।’
তিন দশকের বেশি সময় ধরে টিকে থাকা বন্ধুত্ব
বাবার ব্যবসাসূত্রে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব সিকান্দার খেরের। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে ফাটল ধরেনি, বরং আরও মজবুত হয়েছে। অভিষেকের পরিবারকে নিজের পরিবারের মতোই মনে করেন সিকান্দার খের। অভিষেক বচ্চনও তাঁকে নিজের ছোট ভাই ভাবেন।
সিকান্দারের ৪০তম জন্মদিনে অভিষেক লেখেন, ‘তুই সব সময়ই আমার ছোট ভাই হয়ে থাকবি। আমাদের বন্ধুত্ব আমার জীবনের এক অমূল্য উপহার। তুই পাগল, বিরক্তিকর, এলোমেলো—তবু তোর জন্যই ভালোবাসা। তুই একই সঙ্গে সবচেয়ে আন্তরিক, হাস্যরসপূর্ণ আর ভালো মনের মানুষ। ৪০ বছরের স্মৃতি জমা হয়েছে, আর সামনে আরও অনেক স্মৃতি তৈরি হবে।’
রণবীর সিং ও অর্জুন কাপুর
রণবীর আর অর্জুনের বন্ধুত্ব একটু পাগলাটে, কিন্তু দুজনের সম্পর্কের হৃদ্যতার। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গুন্ডে’ ছবির শুটিং সেটে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব। তখন থেকে রণবীর সিং ও অর্জুন কাপুরের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা এখনো চলমান। অর্জুন তো নিজেকে ‘দীপিকার সতীন’ বলে পরিচয় দিয়েছেন, দীপিকা একটি শোতে তা স্বীকারও করেন। রণবীর একবার বলেছিলেন, ‘অর্জুন হচ্ছে আমার জীবনের সেই মানুষ, যাকে আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি। ওর সঙ্গে থাকলে আমি নিজের মতো করে থাকতে পারি। অর্জুনও রণবীরের প্রশংসা করে বলেন, ‘রণবীরের সাফল্য আমাকে গর্বিত করে। কারণ আমি জানি, ও কতটা পরিশ্রম করে।’
সুহানা খান, অনন্যা পান্ডে ও শনায়া কাপুর
বলিউডের নতুন প্রজন্মের তিন তারকা সুহানা, অনন্যা ও শানায়া। তাঁদের বন্ধুত্বটা ছোটবেলা থেকেই। শাহরুখ খান, চাঙ্কি পান্ডে ও সঞ্জয় কাপুরের এই সন্তানেরা একসঙ্গে বড় হয়েছেন।
তাঁরা প্রায়ই ইনস্টাগ্রামে পুরোনো ছবি পোস্ট করেন, সমর্থন করেন; নিজেদের ‘সোলমেটস’ হিসেবে পরিচয় দেন। অনন্যা পান্ডে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার ২’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছেন। সুহানার প্রথম সিনেমা জোয়া আখতারের ‘দ্য আর্চিস’। শায়ানার প্রথম সিনেমা ‘আখোঁ কি গুস্তাকিয়া’ মুক্তি পেল কিছুদিন আগেই।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও প্রীতি জিনতা
এই দুই বলিউড সুন্দরীর বন্ধুত্ব বহু পুরোনো। যদিও এই জুটিকে আজকাল খুব বেশি ক্যামেরার সামনে একসঙ্গে দেখা যায় না। কিন্তু তাঁদের বন্ধুত্বে কোনো ফাটল পড়েনি। প্রীতি জিনতা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও মুম্বাইয়ে আসা-যাওয়া করেন। তবে মুম্বাইয়ে এলে তিনি ঐশ্বর্যর সঙ্গে দেখা করেন ও সময় কাটান। এমনকি ২০০০-এর দশকের পুরোনো ছবি পোস্ট করেও বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণা করেন। ঐশ্বরিয়া প্রীতি জিনতাকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রীতি এমন একজন বন্ধু, যার হাসি সংক্রমিত। ওর পাশে থাকলে মন ভালো হয়ে যায়।’
পেশা ছাড়িয়েও যে বন্ধুত্ব
বলিউডের ইতিহাসে যদি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী, গভীর ও প্রভাবশালী বন্ধুত্বের কথা বলা হয়, তাহলে শাহরুখ খান ও করণ জোহরের কথা বলতেই হবে। ১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ ছবিতে করণ জোহর সহকারী পরিচালক ছিলেন আর শাহরুখ ছিলেন প্রধান চরিত্রে। তখন থেকেই তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের শুরু। করণের প্রথম ছবি ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’তেও শাহরুখ অভিনয় করেন। তবে তাঁদের বন্ধুত্বে মাঝেমধ্যে ফাটল দেখা গেছে বলে নানা সময়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে।
বিশেষত শাহরুখ খানের ‘মাই নেম ইজ খান’ সিনেমা মুক্তির পর এবং শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের মাদক ইস্যুতে মামলা হওয়ার পর। তবে করণ এসব গুজবে কখনো নিজের প্রতিক্রিয়া জানাননি। তিনি বলেন, ‘শাহরুখ সব সময়ই আমার পরিবার থাকবে। সবকিছু সব সময় প্রকাশ্যে বলার প্রয়োজন পড়ে না।’
যেখানে সময় থেমে থাকে না
পাঁচ-ছয়ের দশকের একচ্ছত্র নায়িকা—হেলেন, ওয়াহিদা রহমান আর আশা পরেখ। সাদা–কালো পর্দা কাঁপানো এই তিন তারকা আজও ঠিক ততটাই প্রাণবন্ত, যেমনটা ছিলেন তাঁদের সোনালি সময়ে।
একসঙ্গে সিনেমা, তুমুল প্রতিযোগিতা, তারপরও বন্ধুত্ব—বয়স তাঁদের আলাদা করেনি; বরং আজকের ওটিটির যুগেও তাঁরা একসঙ্গে ছুটি কাটান, আড্ডা দেন, বন্ধুত্ব উপভোগ করেন নির্লিপ্তভাবে। ২০২১ সালে আন্দামানে তাঁদের ছুটি কাটানোর ছবি অন্তর্জাল মাতিয়ে দেয়।
সেই নব্বই থেকে শুরু
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবির সেটে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সালমান খান ও অজয় দেবগনের মধ্যে। সঞ্জয় লীলা বানসালির ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাই ছিলেন কেন্দ্রে, কিন্তু পেছনে জন্ম নেয় এই দুই তারকার ভিন্ন এক সম্পর্ক।
সময়ের আবর্তে বন্ধুত্ব কিছুটা ধূসর হলেও হারায়নি। ‘রেডি’ ছবিতে অজয়ের অতিথি চরিত্র আর ‘সন অব সরদার’-এ সালমানের অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সেটা আবারও স্পষ্ট হয়।
হরিহর আত্মা
‘রানঝানা ’ ছবির সেটে পরিচয়, তারপর ‘ভিরে দ্য ওয়েডিং’-এ আরও গভীর সম্পর্ক—সোনম কাপুর আর স্বরা ভাস্করের বন্ধুত্ব যেন বলিউডে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
একবার স্বরার জন্মদিনে সোনম লিখেছিলেন, ‘প্রিয় বন্ধু, আমরা আগের দিনই কথা বলেছি, আর তখনই মনে হলো—এই বন্ধুত্ব আসলেই ঈশ্বরপ্রদত্ত। তুমি যে চরিত্রই অভিনয় করো না কেন, আমার প্রিয় চিরকাল তুমি, বাস্তবের স্বরা।’
তিন কন্যা
বলিউডে প্রায় একই সময়ে পা রেখেছিলেন আলিয়া ভাট, পরিণীতি চোপড়া ও শ্রদ্ধা কাপুর। এর পর থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা ক্যামেরার সামনে যখন এই তিন গ্ল্যামার-কন্যা একসঙ্গে পোজ দেন, তা যেন চোখের আরাম হয়ে ওঠে ভক্তদের কাছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের ছবি মানেই ভাইরাল।
একসঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া, ছুটি কাটানো কিংবা ফটোশুট—যেখানেই যান, তাঁদের উপস্থিতি হয়ে ওঠে আলোচনার বিষয়। শুধু তা-ই নয়, ইনস্টাগ্রামে একে অপরের ছবিতে যে খুনসুটি আর স্নেহমাখা মন্তব্য করেন তাঁরা, তা থেকেই স্পষ্ট—এই সম্পর্ক শুধুই পেশাগত সৌজন্য নয়; বরং হৃদয়ের বন্ধন।
তথ্যসূত্র: মিড ডে, বলিউড বাবল