অভিনেত্রী ইশা আলিয়ার মৃত্যুর রহস্য বাড়ছে, ৫ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না
ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? অভিনেত্রী ইশা আলিয়ার মৃত্যুর পর এখন এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাওড়ার পুলিশ। কারণ, পুলিশ ঘটনাস্থলে সেই অভিনেত্রীর সঙ্গে থাকা স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক প্রশ্নের উত্তরে অসংগতি পেয়েছে। এ ঘটনা বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁরা কোনোভাবেই পাঁচ প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছেন না।
গতকাল ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ছিনতাইকারীর গুলিতে মারা গেছেন ঝাড়খন্ডের অভিনেত্রী ইশা আলিয়া। স্বামী এবং তিন বছরের সন্তানের সামনে তাঁকে গুলি করা হয়। সেই ঘটনা এখন কোন দিকে মোড় নেবে বলা যাচ্ছে না। গতকাল থেকে এ অভিনেত্রীর স্বামী পরিচালক প্রকাশ কুমারকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সেখানে পুলিশের সন্দেহ হয়।
প্রকাশের বক্তব্যের অসংগতি নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা প্রথমত জানিয়েছেন, প্রকাশের বয়ান অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ছিল। সেখানে সব সময় পুলিশ অবস্থান করে। অথচ সেই সময় পুলিশের কাছে কোনো সাহায্য চাননি প্রকাশ। তিনি ঘটনাস্থলের পাশে একটি কারখানায় সাহায্য চান। কিন্তু কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। তারপরও পুলিশের কাছে সাহায্য না চাওয়ায় প্রকাশকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। এখন সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
দ্বিতীয়ত, প্রকাশের দাবি গাড়ির মধ্যে ইশা আলিয়াকে গুলি করা হয়। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, গাড়ির মধ্যে কোনো গুলির চিহ্ন নেই। কেন গাড়িতে কোনো গুলির চিহ্ন নেই, সে হিসাব মেলাতে পারছে না পুলিশ। তারা সেই গাড়ি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছে। পুলিশ মনে করে, গাড়িতে কোনো না কোনো গুলির প্রমাণ থাকার কথা। তৃতীয়ত, গতকাল হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, ঘটনার সময় রাস্তায় যথেষ্ট লোকজন ছিলেন। পুলিশের প্রশ্ন, যে সময় প্রকাশ ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন, তখন রাস্তায় লোকজন ছিলেন। এত কিছু ঘটল, অথচ কারও চোখে পড়ল না? যার উত্তর মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে।
সন্দেহের চতুর্থ কারণ হিসেবে পুলিশের সামনে রয়েছে রাস্তার পাশের দোকানদারের বক্তব্য। প্রকাশকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার সময় রাস্তার পাশের সেই দোকানদারের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন। দোকানদারের দাবি, গাড়িতে হলুদ টি-শার্ট ও নীল জিনস পরিহিত মহিলাকে সন্দেহজনক অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। তারপরই ঘটনাটি পুলিশে জানানো হয়। এ ছাড়া পুলিশের কাছে প্রকাশ জানিয়েছেন, তাঁরা নাচের পোশাক কেনার জন্য কলকাতার শ্রীরাম আর্কেড যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে তিনি টয়লেটে যাওয়ার সময় একটি সাদা গাড়ি এসে দাঁড়ায় এবং তিনজন নেমে তাঁদের গাড়ি থেকে কিছু নেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় আলিয়া চিৎকার করতে থাকেন। পরক্ষণেই প্রকাশ গিয়ে দেখেন, আলিয়া রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তখন রাস্তায় দুজন পুলিশ সদস্যের পা ধরে সাহায্য চেয়েছিলেন প্রকাশ। তাঁরা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এমন বক্তব্যে অসংগতি পেয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে তারা বিস্তারিত জানাবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে আরও জানা যায়, হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোকনন্দা ভাওয়ালের নেতৃত্বে প্রকাশকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখনো তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গতকাল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় জাতীয় সড়কের নির্জন এক স্থানে সকাল ছয়টার দিকে ইশা আলিয়াকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল থানায় অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রীর স্বামী পরিচালক প্রকাশ কুমার। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর সন্দেহ হলে প্রকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।