পরিবারের প্রত্যেকের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখেছেন খুশি

খুশি কাপুর। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

শ্রীদেবীর কন্যা হয়েও বলিউডে পথচলা সহজ হয়নি। প্রতিটি পদক্ষেপেই কখনো মা, কখনোবা বোন জাহ্নবী কাপুরের সঙ্গে তুলনা টানা হয়েছে। নেটিজেনদের নানা সমালোচনা, কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে। তবু থেমে থাকেননি খুশি কাপুর। নিজের মতো করে এগিয়ে চলেছেন, খুঁজে নিচ্ছেন নিজের আলো। সম্প্রতি ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার, পরিবার ও জীবনের নানা শিক্ষার বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এই তারকাকন্যা।

মায়ের কাছ থেকে কত কিছু শিখেছি, বলে শেষ করতে পারব না। দেখেছি মা কীভাবে কাজ করতেন, আবার পরিবারেরও খেয়াল রাখতেন। আমাদের বড় করার জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করেননি। পরিবারের জন্য তাঁর সেই ত্যাগ আমার কাছে অমূল্য শিক্ষা।
খুশি কাপুর

ভিন্ন অভিজ্ঞতা
নেটফ্লিক্সের ‘দ্য আর্চিজ’ দিয়ে শুরু হয়েছিল খুশির অভিনয়যাত্রা। ছবিটি মুক্তির পর প্রশংসার চেয়ে সমালোচনাই বেশি পেয়েছিলেন। তবে খুশির জন্য এ কাজটা ছিল একেবারেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ‘আমি যখন “দ্য আর্চিজ” করেছিলাম, তখন একদমই নতুন। খুব ভীত ছিলাম, উদ্বিগ্নও। মাথায় অনেক ভাবনা আসত, কিন্তু তা প্রকাশ করার সাহস ছিল না,’ বললেন খুশি।

এরপর আমির খানের ছেলে জুনাইদ খানের সঙ্গে ‘লাভইয়াপা’ ছবিতে সুযোগ পান। এটিই ছিল তাঁর বড় পর্দায় আনুষ্ঠানিক অভিষেক। তৃতীয় ছবি ‘নাদানিয়াঁ’–তে সাইফ আলী খানের ছেলে ইব্রাহিম আলী খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। নেটফ্লিক্সের এ ছবি মুক্তির পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। অভিনয়, গল্প, নির্মাণ—সবকিছু নিয়েই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন খুশি।

খুশি কাপুর। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

তবু তিনি এটাকে শেখার অভিজ্ঞতা হিসেবেই নিয়েছেন। খুশির ভাষায়, ‘প্রতিটি ছবিই আমাকে আলাদা অভিজ্ঞতা দিয়েছে। প্রত্যেক পরিচালক, প্রতিটি সেটের আবহ, এমনকি ওয়ার্কশপ পর্যন্ত ভিন্ন ছিল। তাই মনে করি, প্রতিটি প্রজেক্ট আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। আমার একটা ছবিকে আরেকটা ছবির সঙ্গে মেলানো যায় না। প্রতিটি কাজ আমাকে নতুন কিছু দিয়েছে।’

জুনাইদ ও ইব্রাহিমের সঙ্গে
একই প্রজন্মের অভিনেতা জুনাইদ ও ইব্রাহিমের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে খুশি বলেন, ‘ওদের দুজনের সঙ্গেই দারুণ সময় কেটেছে। কাজের পরিবেশ ভালো থাকলেই ভালো ফল আসে। “লাভইয়াপা” ছবিটি মূলত আমার আর জুনাইদকে ঘিরে। মজার বিষয় হলো আমরা একসঙ্গে খুব কম সময় শুটিং করেছি। কারণ, গল্পের বড় অংশজুড়ে আমরা মোবাইলে আলাপ করেছি, ঝগড়া করেছি। ফলে সরাসরি একসঙ্গে বেশি কাজ হয়নি। তবু জুনাইদের উপস্থিতি কাজকে সহজ করে দিয়েছিল।’ ইব্রাহিম আলী খানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও তাঁর জন্য ইতিবাচক ছিল, ‘ইব্রাহিম খুব সহজ-সরল মানুষ। ওর সঙ্গে কাজ করার সময় সেটে একটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।’

খুশি কাপুর। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

পরিবারের শিক্ষা
ক্যারিয়ারের চেয়ে পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়েই বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন খুশি। তাঁর বড় বোন জাহ্নবী কাপুর বলিউডে এখন প্রতিষ্ঠিত নায়িকা। খুশি বলেন, ‘জাহ্নবীর মতো সৎ আর দৃঢ় মানুষ কমই দেখেছি। সে অন্যকে ভালোবাসতে জানে, অন্যের জন্য লড়াই করতেও জানে। সে তার প্রিয় মানুষদের সব সময় রক্ষা করে। আমি শুধু ওকে ভালোবাসি না, ওকে সম্মানও করি।’

খুশি কাপুর। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

ভাই অর্জুন কাপুরের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন খুশি। ‘অর্জুন আমাকে সহনশীলতা আর মানসিক শক্তি অর্জন করতে শিখিয়েছেন। আমি যখন বিষণ্ন থাকি, তখনই তাঁকে মেসেজ করি। সব সময় সঠিক পরামর্শ পাই। তিনি আমাকে সঠিক পথে চালিত করেন,’ বললেন খুশি। অংশুলা কাপুরের কথা ভুলে যাননি তিনি। অংশুলার মধ্যে খুশি দেখেন একজন অভিভাবকের মতো যত্নশীলতা। ‘অংশুলা সব সময় সবার খেয়াল রাখে। যার যা প্রয়োজন, অংশুলার কাছ থেকে পাওয়া যায়,’ জানালেন খুশি।

আরও পড়ুন

সবশেষে খুশির সবচেয়ে বড় প্রেরণা তাঁর মা প্রয়াত অভিনেত্রী শ্রীদেবী। ‘মায়ের কাছ থেকে কত কিছু শিখেছি, বলে শেষ করতে পারব না। দেখেছি মা কীভাবে কাজ করতেন, আবার পরিবারেরও খেয়াল রাখতেন। আমাদের বড় করার জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করেননি। পরিবারের জন্য তাঁর সেই ত্যাগ আমার কাছে অমূল্য শিক্ষা।’

খুশি কাপুর। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

ভবিষ্যতের স্বপ্ন
খুশির লক্ষ্য স্পষ্ট—ভালো গল্পের ছবির অংশ হতে চান। তাঁর ভাষায়, ‘সৃজনশীলতাকে আমি উদ্‌যাপন করতে চাই। আমি চাই আমার চরিত্রগুলোর মাধ্যমে একজন অভিনেত্রী হিসেবে আত্মতৃপ্তি পেতে। দর্শকের স্বীকৃতি পেতে মুখিয়ে আছি।’
মা শ্রীদেবীর নামের ভার, বোন জাহ্নবীর সাফল্য আর সমালোচনার চাপ—সবকিছুর মাঝেই ধীরে ধীরে নিজের জায়গা করে নিতে চাইছেন খুশি কাপুর। পথ যত কঠিনই হোক, তিনি যে দৃঢ় মনোবল নিয়েই এগোচ্ছেন, সাক্ষাৎকারেই সেটি পরিষ্কার।