জিতেন্দ্র কুমার থেকে আজ তিনি ‘জিতু ভাইয়া’
আসল জিতেন্দ্র কুমার আড়ালে পড়ে গেছেন কবেই, এখন তিনি সবার কাছে আদরের ‘জিতু ভাইয়া’। ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ ওয়েব সিরিজের পর থেকে ‘জিতু ভাইয়া’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তবে অ্যামাজন প্রথম ভিডিওর সিরিজ পঞ্চায়েত তাঁকে খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছে। গত ২৮ মে মুক্তি পেয়েছে আলোচিত সিরিজটির তৃতীয় কিস্তি। মুক্তির পর দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসায় ভাসছেন এই তরুণ অভিনেতা।
জিতেন্দ্র কুমারের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় হাজার হাজার মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। কিন্তু অনেক জানলে চমকে যেতে পারেন, একটা সময়ে অভিনয়ের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না। রাজস্থানের খৈরথলের এই তরুণ ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন। পড়তেন প্রকৌশলবিদ্যায়।
ভারতের আইআইটি খড়গপুর থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করেছিলেন। তবে এখানে পড়ার সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান অনুভব করেন জিতেন্দ্র। কলেজের নাটকে অংশগ্রহণ করতেন। আর সেই সূত্রে দ্য ভাইরাল ফিভার-এর (টিভিএফ) নির্বাহী সৃজনশীল পরিচালক (এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর) এবং লেখক বিশ্বপতি সরকারের সঙ্গে পরিচয়। ২০১২ সালে বিশ্বপতি তাঁকে টিভিএফ-এ কাজের প্রস্তাব দেন। এখান থেকেই তাঁর অভিনয় শুরু। টিভিএফ-এর একাধিক প্রকল্পে দেখা গেছে জিতেন্দ্রকে। তবে কোটা ফ্যাক্টরি তাঁকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল।
২০২০ সালে ‘পঞ্চায়েত’ মুক্তির পর জিতু ভাইয়ার আরও জয়জয়কার। দীপক কুমার মিশ্রা পরিচালিত এই কমেডি-ড্রামা সিরিজটিতে সচিবের চরিত্রে অভিনয় করে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। ওটিটিতে কেবল থ্রিলার আর ক্রাইম ড্রামা বেশি চলে—প্রচলিত এই সত্য ভুল প্রমাণ করে পঞ্চায়েত। প্রথম দুই কিস্তির ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর তৃতীয়টিও হাঁটছে একই পথে।
‘পঞ্চায়েত ৩’-এর সাফল্যে খুশিতে আত্মহারা জিতেন্দ্র কুমার। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সিরিজটি তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, ‘“পঞ্চায়েত”, “শুভ মঙ্গল জ্যায়দা সাবধান”-এর পর আমার পেশাগত জীবনে অনেক বদল এসেছে। আমি যে ধরনের চিত্রনাট্যে কাজ করার স্বপ্ন দেখতাম, এখন সে ধরনের কাজের প্রস্তাব আসছে। আগে আমি সবার নজরে পড়ার জন্য বেশি করে স্ক্রিন টেস্ট দিতাম। এখন আর তা দিতে হয় না। এখন আমাকে ভালো ভালো কাজের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। পছন্দমতো কাজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পাচ্ছি।’
ব্যাপক জনপ্রিয়তার পরও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন আজও একই রকম আছে বলে জানিয়েছেন ‘জিতু ভাইয়া’। ১০ বছর আগের সেই পুরোনো আবাসনই আজও তাঁর ঠিকানা। শুধু বদলের মধ্যে একটাই হয়েছে, বড়সড় টিভি কিনেছেন জিতেন্দ্র।
‘পঞ্চায়েত’ সিরিজে ফুলেরা গ্রামের সচিব ‘অভিষেক ত্রিপাঠি’র সঙ্গে বাস্তবে তাঁর কোনো মিল নেই বলে জানিয়েছেন জিতেন্দ্র কুমার। তিনি বলেন, ‘বাস্তবে আমি এমন কাউকে দেখিনি। আর আমি নিজেও আমার অভিনীত চরিত্রের মতো নই। আর আমাকে সহজে বোকা বানানো যায় না।’
জিতেন্দ্র নিজের অভিনীত চরিত্রের মতো না হলেও ফুলেরা গ্রামের মাটির গন্ধ তাঁকে সব সময় টানে। এই গ্রামেই যেন তিনি তাঁর কৈশোরের দিনগুলো খুঁজে পান। রাজস্থানের গ্রাম থেকে উঠে আসা এই তরুণ অভিনেতা জানিয়েছেন, ‘এক সাধারণ গ্রামে আমার বেড়ে ওঠা। তাই গ্রামীণ জীবন আমার খুব শান্তিপূর্ণ লাগে। এই সিরিজের শুটিং সেরে বাড়ি ফেরার পর সেই সাদাসিধা জীবনের কথা মনে পড়ে। পুরোনো সব স্মৃতি তাজা হয়ে ওঠে। ফুলেরা গ্রামকে আমি দারুণ উপভোগ করি।’
‘পঞ্চায়েত ৩’-এর চূড়ান্ত সাফল্যের পর সবাই অপেক্ষায় চতুর্থ মৌসুমের। তবে জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। কারণ এতে এর গুণগত মান প্রভাবিত হতে পারে। তাঁর ভাষ্যে, ‘নতুন কিস্তির জন্য আটটা পর্ব লেখা, টিমের সঙ্গে আলোচনা করা, শুটিংয়ের জন্য সবার ডেট পাওয়া, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
তাই আবার হয়তো এক লম্বা অপেক্ষা। আবার পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠবে ফুলেরা গ্রামের সেই চেনা মুখগুলো। আবার জিতেন্দ্র কুমার, রঘুবীর যাদব, নীনা গুপ্তা, চন্দন রায়, ফয়জল মালিকের অভিনয় মন ভরিয়ে দেবে।