যৌনতা থেকে রাজনীতি, ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছিল আলোচিত এই ১০ সিনেমা

পর্দায় কী দেখানো যাবে আর যাবে না, সেই বিতর্ক চলছে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির শুরু থেকেই। এখন দেশে দেশে সার্টিফিকেশন বোর্ড হয়েছে, কে কোন সিনেমা দেখতে পারবে, সেটার গ্রেডিং করে দেয় তারা। তবু এখনো নানা কারণে সিনেমা মুক্তি নিয়ে ঝক্কি পোহাতে হয় নির্মাতাদের। ভারতে এমন অনেক আলোচিত সিনেমা রয়েছে, যেগুলো নানা কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কোনোটি পরে মুক্তি পেয়েছে, কোনটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, আইএমডিবি অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক এমন ১০ সিনেমার কথা।

যৌনতা থেকে রাজনীতি, অনেক কারণেই ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে সিনেমা। কোলাজ

‘আঁধি’
গুলজার খুব বেশি সিনেমা বানাননি, তবে যে কয়েকটি বানিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ‘আঁধি’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ও প্রয়াত অভিনেতা সঞ্জীব কাপুর। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আঁধি’ ছিল সুচিত্রা অভিনীত শেষ হিন্দি সিনেমা।
সিনেমায় সুচিত্রা অভিনয় করেন আরতি দেবী নামের এক রাজনৈতিক নেত্রীর ভূমিকায়, যিনি একই সঙ্গে ব্যক্তিত্বময়ী, দৃঢ়, কঠোর আবার প্রেমময়ী এবং কোমল মনের। বলা হয়ে থাকে, ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া অবলম্বনে আরতি দেবীকে নির্মাণ করা হয়েছিল। সঞ্জীব কুমারের চরিত্রটি ফিরোজ গান্ধীর ছায়া অবলম্বনে নির্মিত। ইন্ধিরা গান্ধীর যখন ভারতের ক্ষমতায়, চলছে জরুরি অবস্থা, এমন সময় সিনেমাটি মুক্তির অনুমতি পায়নি। পরে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর মুক্তি পায় সিনেমাটি।

‘আঁধি’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

‘সিকিম’
সেই ১৯৭১ সালে তথ্যচিত্রটি বানিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। ভারত ও চীনের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কের খবর রাখলে তথ্যচিত্রটির নাম শুনেই অনুমান করা সহজ হয় এর সঙ্গে বিতর্ক জড়িয়ে যাবে। হয়েছিলও তা–ই। তথ্যচিত্রটি ভারতে নিষিদ্ধ হয়। তবে মজার ব্যাপার, কেবল ভারত নয়, চীনও এটি নিষিদ্ধ করে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রামাণ্যচিত্রটির ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। পরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় তথ্যচিত্রটি।

‘ব্যান্ডিট কুইন’
শেখর কাপুরকে ভারতের অন্যতম সেরা নির্মাতা মনে করা হয়। এর অন্যতম কারণ ১৯৯৪ সালের এই সিনেমা। এটি তৈরি হয়েছে ডাকুরানি ফুলন দেবীর জীবন অবলম্বনে, যে চরিত্রে অভিনয় করেন সীমা বিশ্বাস। তবে সিনেমাটির অনেক বিষয় নিয়ে আপত্তি করেন খোদ ফুলন দেবী। পরে দিল্লি হাইকোর্ট সিনেমাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।

‘ব্যান্ডিট কুইন’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

‘কাম সূত্র: আ টেল অব লাভ’
১৯৯৬ সালে এই ইরোটিক সিনেমাটি বানান মীরা নায়ার। নাভিন অ্যাড্রস, সারিতা চৌধুরী, রেখা ও ইন্দিরা ভার্মা অভিনীত ইংরেজি ভাষার সিনেমাটি বিদেশের বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শিত হয়। তবে অতিরিক্ত খোলামেলা দৃশ্য থাকায় ভারতে ছবিটি শুরুতে মুক্তি পায়নি। পরের নগ্ন দৃশ্যগুলো ফেলে দিয়ে সিনেমাটির একটি পরিমার্জিত সংস্করণ মুক্তি পায়। ছবিটির তৈরি হয়েছিল ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও জাপানের যৌথ প্রযোজনায়।

‘আমু’
১৯৮৪ সালের শিখবিরোধী দাঙ্গা অবলম্বনে ইংরেজি ভাষায় সিনেমাটি নির্মাণ করেন সোনালি বোস। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন কঙ্কণা সেনশর্মা। ছবিটি বার্লিন উৎসবে প্রিমিয়ার হয়, দেখানো হয় টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবেও। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় শুরুতে ছবিটি মুক্তির অনুমতি পায়নি। টিভিতে প্রদর্শনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে ১০ মিনিটের বেশি দৃশ্য কর্তন ও কিছু সংলাপ পরিমার্জনের পর মুক্তির অনুমতি পায়।

‘পাঁচ’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি

‘পাঁচ’
অনুরাগ কাশ্যপের সিনেমা, সুতরাং এটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, সে কথা তাঁর সিনেমার দর্শকমাত্রই জানেন। ২০০৩ সালের এই ক্রাইম ড্রামা তৈরি হয় ১৯৭৬-৭৭ সালে পুনের একটি ক্রমিক খুনের ঘটনা নিয়ে। সহিংসতা, অশালীন ভাষা, যৌনতাসহ নানা কারণে ভারতের সার্টিফিকেশন বোর্ড ছবিটির মুক্তির অনুমতি দেয়নি। পরে বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শিত হলেও ছবিটি আজও ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি।

‘ইন্ডিয়াজ ডটার’
ব্রিটিশ নির্মাতা লেসলি অডউইনের তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয় বিবিসির উদ্যোগে। বিষয়বস্তু ২০১২ সালে দিল্লির বহুল আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে বিবিসি ৪-এ তথ্যচিত্রটি মুক্তি পায়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পায় তথ্যচিত্রটি, কিন্তু ভারত সরকার এটির মুক্তির অনুমতি দেয়নি। অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপসহ সমালোচকেরা তথ্যচিত্রটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

‘ইন্ডিয়াজ ডটার’–এর পোস্টার। আইএমডিবি

‘দ্য পেইন্টেড হাউস’
২০১৫ সালের মালয়ালম সিনেমাটি বানিয়েছেন সন্তোষ ও সতীশ ভ্রাতাদ্বয়। নেহা মহাজন ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির প্রধান অভিনেত্রীর নগ্ন দৃশ্য থাকায় ছবিটি মুক্তির অনুমতি দেয়নি সার্টিফিকেশন বোর্ড। তারা পরিচালককে কয়েকটি দৃশ্য ছেঁটে ফেলতে বলে। তবে নির্মাতাদ্বয় রাজি হননি, পরে তাঁরা ছবিটি ইউটিউবে মুক্তি দেন।

‘নীলম’
তামিল সিনেমাটি তৈরি হয়েছে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। ভারত সরকার মনে করেছে, সিনেমাটি মুক্তি পেলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। ফলে ছবিটি মুক্তির অনুমতি পায়নি।

আরও পড়ুন

‘সন্তোষ’
গত বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সন্ধ্যা সুরি পরিচালিত সিনেমা ‘সন্তোষ’ প্রিমিয়ারের পর প্রশংসিত হয়। ৯৮ মিনিটের ক্রাইম ড্রামা ঘরানার সিনেমাটি তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্য, ভারত, জার্মানি ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনায়। পরে যুক্তরাজ্য থেকে অস্কারেও মনোনীত হয়েছিল সিনেমাটি। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত সিনেমাটি ভারতে মুক্তি পায়নি। পর্দায় পুলিশি নৃশংসতা দেখানো হয়েছে, তাই ছবিটি আটকে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সার্টিফিকেশন বোর্ড। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন সাহানা গোস্বামী।