দেব আনন্দর স্বপ্ন সেদিন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল

দেব আনন্দ। আইএমডিবি

বলিউডের স্বর্ণযুগের তারকাদের একজন দেব আনন্দ। অভিনয়, স্টাইল, ব্যক্তিত্ব—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত তারকাদের একজন। রোমান্টিক হিরো থেকে শুরু করে প্রযোজক ও পরিচালক—সব ভূমিকাতেই তিনি ছিলেন সাহসী ও নির্ভীক। তবে তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের মধ্যেও এমন এক সময় এসেছে, যখন জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের ছবি তাঁকে আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ নিঃস্ব করে দিয়েছিল।
ঘটনাটি ১৯৭৪ সালের। শাবানা আজমি, জিনাত আমান, কবির বেদি, জারিনা ওয়াহাব, জীবনসহ তারকা অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নিজের পরিচালনায় দেব আনন্দ বানালেন ‘ইশক ইশক ইশক’। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন আর ডি বর্মন। এটি ছিল দেব আনন্দের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট, যেখানে প্রযোজনার পুরো খরচই এসেছিল তাঁর নিজের পকেট থেকে। কিন্তু মুক্তির পর বক্স অফিসে ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ে।

সম্প্রতি ফিল্মফেয়ারের ইউটিউব চ্যানেলে এসে পরিচালক শেখর কাপুর, যিনি সম্পর্কে দেব আনন্দের আপন ভাগনে, স্মৃতিচারণা করলেন সেই সময়ের কথা।

দেব আনন্দ। আইএমডিবি

তিনি বললেন, ‘তাঁকে (দেব আনন্দ) কাছ থেকে দেখলেই বোঝা যেত, কীভাবে একজন মানুষ নিজের জীবনকে সামলান। “ইশক ইশক ইশক” মুক্তি পেয়েছে তখন। আমি প্রিমিয়ারে গিয়েছিলাম, কারণ ছবিতে আমারও ছোট্ট একটি চরিত্র ছিল। প্রিমিয়ার শেষে আমরা ওবেরয় হোটেলে ফিরলাম। আমি তাঁর ঘরে বসে আছি, আর উনি ইন্ডাস্ট্রির নানা মানুষের ফোন ধরছেন। সবাই প্রথমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন, বলছিলেন কী চমৎকার ছবি হয়েছে।’

কিন্তু সেই প্রশংসার ঢেউ মিলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি। শিগগিরই ফোনে কেউ তাঁকে জানালেন, দর্শকেরা নাকি সিনেমা শেষ হওয়ার আগেই হল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। শেখরের ভাষায়, ‘ওই মুহূর্তে আমি তাঁর মুখের বদলে যাওয়া অভিব্যক্তি দেখছিলাম—যেভাবে ধীরে ধীরে তাঁর মনে ঢুকে যাচ্ছিল সত্যিটা: ছবিটি ব্যর্থ, আর তাঁর বিনিয়োগ করা সব টাকা শেষ।’

দেব আনন্দ। আইএমডিবি

তবু ভেঙে পড়েননি দেব আনন্দ। শেখর কাপুর জানান, ‘তিনি বাথরুমে গেলেন, আর ফিরতে সময় লাগল সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট। ফিরে এসে হাসিমুখে বললেন, “শেখর! চল, একটা নতুন ছবি বানাই; আইডিয়াটা আমার মাথায় এসেছে।” সেই মুহূর্তে আমি বুঝলাম ক্ষতি ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কাকে বলে।’

বাইরে যা–ই হোক, দেব আনন্দ সেটা কাউকে বুঝতে দিতেন না। সব সময়ই নিরুত্তাপ থাকা ছিল তাঁর বড় গুণ। উদাহরণ দিয়ে শেখর আরও একটি ঘটনার উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন

‘একবার আমরা সকালের নাশতা খাচ্ছি, সঙ্গে ছিলেন এক প্রযোজকও। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, নতুন ছবি বানাতে কিছু বিক্রি করতে হয়েছে কি না। প্রযোজক লম্বা তালিকা শোনালেন—স্ত্রীর গয়না থেকে শুরু করে নিজের বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। দেব আনন্দ একটুও না ভেবে বললেন, “ভালোই তো, এভাবেই তো ছবি তৈরি হয়।”’
‘ইশক ইশক ইশক’-এর ব্যর্থতা দেব আনন্দকে আর্থিকভাবে বড় ধাক্কা দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মানসিকভাবে একটুও দুর্বল করেনি।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস