গডফাদার নয়, স্বপ্ন হুমার গাইড

হুমা কুরেশিঅভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘আমি গ্ল্যামার ভালোবাসি, লালগালিচার জন্য তৈরি হতে পছন্দ করি। কিন্তু তাই বলে সৌন্দর্য দেখাতে আমি এখানে আসিনি।’ কথাগুলো অভিনেত্রী হুমা কুরেশির। যাঁর জন্ম ১৯৮৬ সালের ২৮ জুলাই, দিল্লিতে। আজ তাঁর জন্মদিন।
বলিউডে তিনি তারকা-সন্তান নন, নামজাদা পরিবারের কেউ নন, কোনো প্রভাবশালী গডফাদারও ছিলেন না পাশে। ছিল কেবল নিজের ওপর অগাধ বিশ্বাস, অদম্য পরিশ্রম আর একরাশ স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন নিয়ে পকেটে মাত্র এক হাজার টাকা নিয়ে দিল্লি থেকে মুম্বাইয়ে চলে এসেছিলেন হুমা। আর এখন? নিজের প্রতিভা আর অধ্যবসায়ে আজ তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক, বলিউডে প্রতিষ্ঠিত এক নাম।

হুমা কুরেশি
অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

থিয়েটার থেকে পর্দায়

হুমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা দিল্লিতে। তাঁর বাবা একাধিক রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন হুমা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে স্নাতক হওয়ার পর বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করে তিনি মন দেন অভিনয়ে। তখন থেকেই যুক্ত হন থিয়েটারে, কাজ করেন নানা নাট্যদলের সঙ্গে। এই সময়েই তিনি অভিনয়ের দীক্ষা নেন তাঁর মেন্টর এন কে শর্মার কাছ থেকে। হুমা বলেন, ‘উনিই আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন।’

২০০৮ সালে অভিনয়ের নেশায় পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২২। সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, পকেটে সামান্য কিছু টাকা। তবু মনে মনে জেদ, তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে যে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল

তিনি তারকা-সন্তান নন, নামজাদা পরিবারের কেউ নন, কোনো প্রভাবশালী গডফাদারও ছিলেন না পাশে। ছিল কেবল নিজের ওপর অগাধ বিশ্বাস, অদম্য পরিশ্রম আর একরাশ স্বপ্ন।
হুমা কুরেশি
অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

শুরুটা সহজ ছিল না
বলিউডে যাঁরা বাইরের কেউ, তাঁদের জন্য টিকে থাকা যেমন কঠিন, তেমনি নারী হলে সেই পথ আরও দুর্গম হয়ে ওঠে। হুমা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আজও এমন অনেক চরিত্র আছে, যেগুলো আমি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি, তবু আমাকে ডাকা হয় না। কিন্তু আমি কি বসে থাকব? কাঁদব? না, আমি নিজের শর্তেই কাজ করছি।’
সেই ‘শর্তের’ পথ পেরিয়েই হুমা পেয়েছিলেন অনুরাগ কশ্যপের ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ ছবিতে সুযোগ। ২০০ জনের বেশি প্রতিযোগীর সঙ্গে অডিশনে অংশ নিয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। সেই ছবির পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনয়ের বৈচিত্র্য আর সাহসিকতায় একের পর এক চরিত্রে তিনি বাজিমাত করেছেন।

‘এক থি ডাইন’, ‘বদলাপুর’, ‘জলি এলএলবি টু’, ‘ডাবল এক্সএল’, ‘ডেড অন দ্য নাইট’, ‘মনিকা ও মাই ডার্লিং’—প্রতিটি ছবিতেই তাঁর অভিনয় পেয়েছে সমালোচকদের প্রশংসা। কাজ করেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ, মাধুরী দীক্ষিত, আরশাদ ওয়ার্সির মতো গুণী শিল্পীদের সঙ্গে।

আজও এমন অনেক চরিত্র আছে, যেগুলো আমি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি, তবু আমাকে ডাকা হয় না। কিন্তু আমি কি বসে থাকব? কাঁদব? না, আমি নিজের শর্তেই কাজ করছি।
হুমা কুরেশি
হুমা কুরেশি
অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

ওয়েব সিরিজেও প্রশংসা
সিনেমার পাশাপাশি হুমা মনোযোগ দিয়েছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও। ‘লীলা’ (২০১৯) ও ‘মহারানি’ (২০২১, ২০২৩) সিরিজে তাঁর চরিত্র দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে। বিশেষ করে ‘মহারানি’ সিরিজে মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় তাঁকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।

শুধু অভিনয় নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতায়ও হুমা এগিয়ে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ছড়ানো হোক কিংবা করোনা মহামারির সময় ১০০ বেডের অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা—সবখানেই ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভালোবাসেন হুমা।

হুমা কুরেশি
অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

আজ ৩৯ বছরে পা দিলেন এই অভিনেত্রী। বর্ণিল ক্যারিয়ার, ঝলমলে উপস্থিতি আর স্পষ্টভাষী মনোভাব তাঁকে করে তুলেছে বলিউডের ব্যতিক্রমী এক মুখ। হুমা সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন ‘ডাবল এক্সএল’ সিনেমায়। এ সিনেমায় সোনাক্ষী সিনহার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এবার আবার বড় পর্দায় আসতে চলেছেন হুমা একেবারে অন্য রকম একটি চরিত্র নিয়ে। সম্প্রতি তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ‘খোসলা কা ঘোসলা’র প্রিকুয়েলে, যেখানে তাঁকে দেখা যাবে বোমান ইরানি ও অনুপম খেরের মতো অভিজ্ঞ অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে।