‘কান্নাটা যেন খাঁটি হয়, সেটাই আসল কথা’
অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী পরিচালিত ‘পিংক’ ছবি দিয়ে নজর কেড়েছিলেন কীর্তি কুলহারি। এ ছাড়া তাঁর অভিনীত একাধিক সিনেমা ও সিরিজ প্রশংসিত হয়েছে। তবে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর সিরিজ ‘ফোর মোর শটস প্লিজ’ তাঁকে দিয়েছে স্বতন্ত্র পরিচিতি। আসতে চলেছে এই সিরিজের চতুর্থ ও শেষ মৌসুম। সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই সিরিজসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেত্রী।
রোমাঞ্চিত কীর্তি
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই কীর্তি জানান যে ‘ফোর মোর শটস প্লিজ’ নতুন মৌসুম নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত তিনি। তাঁর ভাষ্যে, ‘সিরিজটি যে এত আলোচিত, সেটা আমি মাঝেমধ্যে ভুলেই যাই। কিন্তু ভক্তরাই বারবার সে কথা মনে করিয়ে দেন। নতুন মৌসুম নিয়ে আমি রোমাঞ্চিত। তিন মৌসুমের পর একটা চরিত্রে ক্লান্তি আসতে পারে, কিন্তু সেটা হয়নি। আমি প্রথম মৌসুমের মতোই সতেজ মন নিয়ে কাজ করেছি। এবারও আনন্দ ও মজা সবকিছু আছে। চরিত্রগুলো ভুল থেকে শিখেছে, আবার জীবনের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। আমি নিশ্চিত যে নতুন মৌসুমে দর্শকেরা আরও ভালো কিছু দেখতে পাবেন।’
আলোচনায় ‘ফুল প্লেট’
কীর্তির অভিনীত ছবি ‘ফুল প্লেট’ সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারের পর সিডনিতে ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী ছবিও ছিল এটি। এবার সিনেমাটি জায়গা করে নিয়েছে ধর্মশালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবিতে কীর্তিকে দেখা গেছে এক গৃহিণীর ভূমিকায়। স্বামীর দুর্ঘটনার পর তিনি অন্যের বাড়িতে রান্না করে সংসার চালাতে শুরু করেন।
ছবিটির কোন দিক কীর্তিকে আকৃষ্ট করেছিল?
অভিনেত্রীর জবাব, ‘আমি এর আগেও তন্নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। তাই আমরা অনেক দিন ধরেই একে অপরকে চিনি। একবার তাঁর পরিচালনায় একটি কাজ করার কথা ছিল, কিন্তু কোভিডের কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। আমি তাঁর কাজের বড় ভক্ত। তন্নিষ্ঠা অভিনয়ের সূক্ষ্মতা ও চরিত্রের খুঁটিনাটি যেভাবে তুলে ধরেন, সেটা অসাধারণ।’ কীর্তি আরও জানান, ‘এই ছবিতে নির্মাতা আমার কাছে এক রাঁধুনির চরিত্র নিয়ে এসেছিলেন, যা আমার জন্য খুব বড় ব্যাপার ছিল। সাধারণত মানুষ আমাকে এ ধরনের চরিত্রে কল্পনাই করেন না। কিন্তু তন্নিষ্ঠা শুরু থেকেই বিশ্বাস করেছিলেন যে আমি এটা করতে পারব। তাঁর এই বিশ্বাসটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি টেনেছিল।’
নারী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কীর্তি বলেন, ‘নারীরা একে অপরের অন্তর্নিহিত জীবন, অভ্যাস ও সমাজ দেখার দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা বেশি বুঝতে পারে। নারী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সময় একটা অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়। নিজের মনের কথা বলা তখন সহজ হয়। তন্নিষ্ঠা ও আমি আগে একসঙ্গে কাজ করেছি, এ পরিচিতিটা আমাকে একজন অভিনেতা হিসেবে আরও সহজ হতে সাহায্য করেছে।’
ছবিতে নিজের অভিনীত চরিত্রের প্রসঙ্গে কীর্তি কি বাস্তবে কোথাও নিজের মিল খুঁজে পেয়েছেন? কীর্তির জবাব, ‘আমরা প্রায় সবাই কোনো না কোনো স্তরে এই চরিত্রের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। এই চরিত্রের সামাজিক বাস্তবতা আর আমার বড় হয়ে ওঠা সম্পূর্ণ আলাদা। তবে আমাদের পরিচারিকা বা রাঁধুনিদের সঙ্গে ছোটবেলার যে সম্পর্কগুলো দেখেছি, সেগুলো আমাকে অন্য দিকটা বুঝতে ও সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করেছে।’
তন্নিষ্ঠার অন্য লড়াই
তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন। কীর্তি দুই বছর ধরে তাঁর এই লড়াই খুব কাছ থেকে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। অভিনেত্রী বলেন, ‘ছবির কাজ শুরুর ঠিক আগে তিনি তাঁর বাবাকেও হারিয়েছিলেন। এত বড় ব্যক্তিগত ক্ষতি ও শারীরিক লড়াইয়ের মধ্যেও একমুহূর্তের জন্য মনোযোগ হারাননি। তন্নিষ্ঠা নিজের কাজের প্রতি এতটাই নিবেদিত ছিলেন, এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এই ছবিতে কাজ করার পর তাঁর প্রতি সম্মান আরও বেড়েছে।’
জীবনদর্শন
অভিনয়জীবনের পথ চলতে চলতে কীর্তির জীবনদর্শন ও মনন বদলে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ‘আমি হৃদয় দিয়ে কাজ করি। কাজকে আমি নিজের ঘর ভেবে নিয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বুঝেছি, সবাই বিষয়টা এভাবে দেখে না। এখন আমি ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। মানুষ আর তার মনন চিনতে শিখেছি। যাঁরা হৃদয় দিয়ে কাজ করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে আমিও তখন হৃদয় নয়, বাস্তবতা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিই।’
নিজের অভিনয়ের জন্য বারবার প্রশংসিত হয়েছেন কীর্তি। তবে কিছু প্রশংসা তাঁর হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জানান, ‘অনেকেই আমার অভিনয়ের সূক্ষ্মতা বা গভীরতা বুঝতে পেরে প্রশংসা করেন, এ বিষয়টা আমাকে সব সময় অবাক করে। তবে একটি প্রশংসা বিশেষভাবে মনে আছে, অনেকে বলেছেন যে পর্দায় কান্নার সময় আমাকে সুন্দর দেখায়। এটা আমি সত্যিকারের প্রশংসা হিসেবে নিই। কারণ, কাঁদতে কাঁদতে সুন্দর দেখানো সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। কান্নাটা যেন খাঁটি হয়, সেটাই আসল কথা।’