‘এখনো মায়ের বকা খাই’

নিজেকে নির্দিষ্ট ছকে বেঁধে রাখতে বিশ্বাসী নন অভিষেক বচ্চন। তাই নিত্যনতুন চরিত্রে নিজেকে আবিষ্কার করেন তিনি। এবার ‘ঘুমর’ ছবিতে গুরুগম্ভীর, রুক্ষ মেজাজের ক্রিকেট কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। আর বালকি পরিচালিত ছবিটি গতকাল শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে। গত সোমবার মুম্বাইয়ের জুহুতে অমিতাভ বচ্চনের বাংলো ‘জনক’-এ অভিষেক বচ্চনের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি।
ANI

‘জনক’-এ ঢুকতেই নিরাপত্তারক্ষীরা সাদর আপ্যায়নে ভেতরে নিয়ে গেলেন। রিসিপশনে ঘণ্টা দেড়েকের মতো অপেক্ষা। মন্দ লাগেনি অপেক্ষা। দেয়ালে নানা শিল্পীর আঁকা অমিতাভ বচ্চনের বিচিত্র সব ছবি। রয়েছে মেগাস্টার অভিনীত বিভিন্ন সিনেমার শুটিংয়ের দুর্লভ বেশ কিছু ছবিও, যা সচরাচর দেখা যায় না বাইরে। শোকেসে সাজানো বছরের পর বছর পাওয়া ‘বিগ বি’র অসংখ্য পদক।

আরও পড়ুন

ডাক আসে একসময়। সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাই তিনতলায়। আবারও মুগ্ধতা। তিনতলায় যেতে যেতে সিঁড়ির দেয়ালজুড়ে বচ্চন পরিবারের নানা ছবি আর চিত্রকর্ম সাজানো। ছিল অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে আঁকা কার্টুনও। তিনতলার হলঘরে সাজানো স্বর্ণযুগের সিনেমার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর হুডিওয়ালা কালো টি-শার্ট, কালো প্যান্ট আর কালো স্নিকার পায়ে এলেন অভিষেক বচ্চন। শুরু হয় আড্ডা।

আদ্যোপান্ত খেলাপাগল অভিষেক, তাই শুরুতেই উঠে আসে খেলাধুলার প্রসঙ্গ। কথায় কথায় জানাই, ‘ক্রিকেট না, আমি ফুটবলভক্ত।’ অভিষেকের সটান প্রশ্ন, মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? ‘মোহনবাগান’ বলতেই হেসে বললেন, ‘আপনি আমার প্রতিপক্ষ। আমি ইস্টবেঙ্গলের ভক্ত। তবে বাবা (অমিতাভ বচ্চন) মোহনবাগানের ভক্ত।’ এরপর শুরু হয় দীর্ঘ আলাপচারিতা। শুরুতেই অভিষেক বলেন, ‘আর বালকির সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক দীর্ঘ সময়ের। তাঁর ছবিতে আগেও কাজ করেছি। “ঘুমর ”ছবিতেও বালকির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। আমি এমন এক চরিত্রে অভিনয় করছি, যার মাধ্যমে দর্শক ছবির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন।’

‘ঘুমর’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি

পাঁচ বছর পর বড় পর্দায় অভিষেক, বক্স অফিসের চাপ কতটা অনুভব করছেন তিনি? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দেখুন, আমি শুধু একটা ভালো ছবি নির্মাণ করতে পারি মাত্র। বাকিটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আমাদের উচিত ভালো ছবি নির্মাণের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া। বাকিটা এমনি হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, ছবি ভালো হলে ঠিক চলবে।’ অভিষেক জানান, তিনি নিজের অভিনীত ছবি দেখে বুঝে যান ছবিটি চলবে কি না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। এমনকি আমাদের পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমালোচক আমি নিজেই। প্রতি সপ্তাহে আমার পুরোনো ছবিগুলো দেখি। সেই সব ছবি থেকে আমার অভিনয়ের খুঁতগুলো খুঁজে বের করে নোটবুকে লিখি। পরে তা সংশোধনের চেষ্টা করি।’

অভিষেকের ক্যারিয়ারে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও এসেছে। তিনি সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চান। তাঁর কথায়, ‘জীবনে চরম সাফল্য পেতে হলে চরম ব্যর্থতার স্বাদ অবশ্যই পেতে হবে। যাঁরা অবিশ্বাস্য সফলতা পেয়েছেন, তাঁরাই চরম ব্যর্থতা দেখেছেন। ব্যর্থতাই আমাদের শিক্ষা দেয়। আর সফলতার পথে এগোতে অনুপ্রাণিত করে।’

অভিষেক বচ্চন, অমিতাভ বচ্চন ও শ্বেতা বচ্চন

এই বলিউড তারকার কাছে সফলতার সংজ্ঞা অনেকটাই আলাদা, ‘কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় ঐশ্বরিয়া বলেছিল, “আমরা সবাই একসঙ্গে আনন্দে আছি, এটাই বড় কথা।”এটাই তাঁর কাছে সফলতা। দিন শেষে নিজের বিছানায় শান্তিতে ঘুমই হলো আমার কাছে সফলতা। কারণ, আমরা ক্রমেই বাস্তববাদী হয়ে উঠছি। সব সময় গাড়ি, বাড়ি, পোশাক, পুরস্কারের পেছনে ছুটছি। কিন্তু এর কোনো কিছুই আমাদের সঙ্গে যাবে না।’

বাবা হিসেবে কেমন? হেসে অভিষেক বলেন, ‘আরাধ্যার সঙ্গে আমার আদরের সম্পর্ক। তবে তাকে কখনো প্রশ্রয় দিই না। আমি মনে করি, সন্তানকে ভালোবাসা দেওয়ার পাশাপাশি উৎসাহ দেওয়া বেশি প্রয়োজন। মানসিকভাবে সন্তানের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বাকি সবকিছু জীবন শিখিয়ে দেয়। আমার মা-বাবা সবার আগে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার কথা বলতেন। ঐশ্বরিয়াও চায় আরাধ্যাকে পারিবারিক শিক্ষায় বড় করে তুলতে। আরাধ্যার সব বিষয় ঐশ্বরিয়া নিজে দেখভাল করে।’

আলাপের শেষের দিকে উঠে এল অভিষেকের ছোটবেলার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘মা বরাবরই একটু বেশি কঠোর। জানেন, এখনো মায়ের বকা খাই! বাবা কখনো গায়ে হাত তোলেননি। তবে বাবা যখন গম্ভীরভাবে একবার তাকাতেন, তা-ই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। মা-বাবাই আমার গুরু। তাঁরাই আমার মেন্টর। জীবনের যেকোনো কঠিন সময়ে তাঁদের পাশে পেয়েছি।’