‘খান’ পদবির চাপ নেন না আমির খান-পুত্র জুনাইদ
নেটফ্লিক্সের ‘মহারাজ’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রেখেছিলেন আমির খান-পুত্র জুনাইদ খান। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকের মন জয় করেছিল বললে বাড়াবাড়ি হবে না। সম্প্রতি ‘লাভইয়াপা’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে এই তারকা পুত্রের। এই রোমান্টিক কমেডি ছবিতে জুনাইদের নায়িকা ছিলেন শ্রীদেবী ও বনি কাপুরের মেয়ে খুশি কাপুর। এ সূত্রে মুম্বাইয়ের সান্তাক্রজে আমির খানের প্রযোজনা সংস্থার অফিসে জুনায়েদের সঙ্গে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির কথা হয়। তবে আলাপচারিতার শুরুতে উঠে আসে তাঁর প্রথম ছবি ‘মহারাজ’ প্রসঙ্গ।
অনেকের মতে, জুনাইদ প্রথার বাইরে হেঁটে অভিনয়জগতে পা রেখেছিলেন। এ প্রসঙ্গে আমির-পুত্রের ভাষ্য, ‘সত্যি বলতে, আমার মনে হয় না যে আমি প্রথার বাইরে হেঁটেছি। এটা ঠিক যে ছবির কাহিনিতে বেশ নাটকীয়তা ছিল। আর এই ছবির আগে আমি একাধিক ছবির জন্য অডিশন দিয়েছিলাম। সব জায়গায় আমি প্রত্যাখ্যানই পেয়েছিলাম। অবশেষে ‘মহারাজ’ ছবির জন্য আমাকে নির্বাচন করা হয়েছিল।’
দক্ষিণি ছবি লাভ টুডের হিন্দি রিমেক ‘লাভইয়াপা’। ‘লাভ টুডে’ ছবিটি দেখে দারুণ লেগেছিল জুনাইদের। আর তাই তিনি হিন্দি রিমেক করতে আগ্রহী ছিলেন বলে জানান। তবে এই ছবির চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে কোনোভাবেই মেলাতে পারেননি জুনাইদ। তাঁর কথায়, ‘আমি নিজেকে কখনো এই ছবির জন্য কাস্ট করতাম না। কারণ, এই ছবির চরিত্রটি আমার একদম বিপরীত ব্যক্তিত্ব। তবে মহারাজ ছবির চরিত্রের সঙ্গে নিজের কিছুটা মিল খুঁজে পাই।’
আমির খানকে অনেক রোমান্টিক ছবিতে দেখা গেছে। কিন্তু জুনায়েদের প্রিয় রোমান্টিক ছবির তালিকায় আমিরের ছবি নয়, অন্য নায়কের ছবির নাম আছে। ‘হৃতিক রোশনের “কহো না প্যায়ার হ্যায়” আমার সব সময়ের প্রিয় রোমান্টিক ছবি। আব্বার রোমান্টিক ছবির মধ্যে আমার “গজনি” সবচেয়ে প্রিয়,’ হাসতে হাসতে বললেন জুনায়েদ।
বড় পর্দায় অভিষেকের সময় তারকা সন্তানদের ওপর আলাদা এক চাপ থাকে। ‘খান’ পদবি হওয়ার চাপ কি তিনি অনুভব করেন, একটু ভেবে বলেন, ‘আব্বার পদবির চাপ আমি এখন পর্যন্ত অনুভব করিনি। আগামী দিনের কথা এখন বলতে পারব না। আমি মনে করি প্রত্যেকেরই একটা নিজস্ব ভ্রমণ আছে। আমি আমার ভ্রমণ সবে শুরু করেছি। আর চাপ তখনই অনুভব করবেন, যখন ঐতিহ্যের কথা ভাববেন। আব্বার ঐতিহ্য আব্বাকেই সামলাতে হবে। উনিই এটা যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারবেন। ওনার হাতেই এটা সুরক্ষিত।’
আমির খান হাজার হাজার তরুণ অভিনেতার ‘মেন্টর’। কিন্তু আমির একাধিক সময় মজার সুরে বলেছেন যে জুনায়েদ তাঁর থেকে কোনো পরামর্শ নেন না। এ কথা শুনে আবারও হাসলেন জুনাইদ, বলেন, ‘সে রকম কিছু নয়। বিশেষ কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমি ওনার কাছেই যাই। এখন আমি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আর এই সময় ওনার থেকে ভালো আর কে-ই বা আমাকে গাইড করতে পারবেন। প্রযুক্তিগত বিষয়ে ওনার জ্ঞান ভরপুর। তবে আমি আমার ছবির বিষয়ে ওনার সঙ্গে আলোচনা করি না।’
আমিরের গলায় অনেক সময় আক্ষেপ শোনা যায় যে কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন তিনি তাঁর সন্তান এবং পরিবারকে যথাযথ সময় দিতে পারেননি। জুনাইদ বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক সাপোর্ট খুবই শক্তিশালী। এক শ মিটারের মধ্যে আমরা সবাই থাকি। তবে আব্বা ইদানীং নিজের ব্যাপারে বেশি কঠোর হচ্ছেন। উনি আমাদের পাশে সব সময় ছিলেন। আমার আম্মা ও আব্বাকে অভিভাবক হিসেবে অত্যন্ত খোলামনের মনে হয়। সব ব্যাপারে আমি ওনাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করতে পারি। তবে আব্বার থেকে আম্মা বেশি কঠোর। আর ইরা (বোন) আমার সবচেয়ে বড় “চিয়ার লিডার”।’
তারকা-পুত্র হয়েও সাধারণ জীবন যাপন করেন জুনাইদ। আক্ষরিক অর্থে এখনো অটোরিকশায় করে যাতায়াত করেন তিনি। বড় পর্দায় অভিষেক হওয়ার পর কি এটা তাঁর জন্য সম্ভব হবে? ‘নিশ্চয় সম্ভব। আসলে আব্বার মতো ‘স্টারডম’ তিন-চার বছরেও সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ধরে ভালো কাজ করলে হয়তোবা ওনার মতো উচ্চতায় পৌঁছানো সম্ভব। আমি বাস্তববাদী মানুষ। নিজের মতো করে চলতে আমি ভালোবাসি।’ বাবার মতো করেই বললেন আমির–পুত্র।