কেন ২৮ বছর অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন এই দক্ষিণি অভিনেত্রী

শান্তিপ্রিয়া
ইনস্টাগ্রাম

ওটিটি যেন নতুন জন্ম দিয়েছে হারিয়ে যাওয়া তারকাদের। একসময় এ তারকারা রীতিমতো ছবির জগতে রাজত্ব করতেন। এ রকমই এক উধাও হয়ে যাওয়া তারা হলেন দক্ষিণের শান্তিপ্রিয়া। একসময় মিঠুন চক্রবর্তী ও অক্ষয় কুমারের সঙ্গে তাঁর জুটি দর্শক পছন্দ করেছিলেন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ওটিটির হাত ধরে শান্তিপ্রিয়া আবার ফিরেছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে।

শান্তিপ্রিয়াকে সম্প্রতি সুনীল শেঠির সঙ্গে ‘ধরাবি ব্যাংক’ ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে। সাক্ষাৎকারের শুরুতেই উঠে আসে তাঁর এই প্রত্যাবর্তনের কথা। তিনি বলেন, ‘ওটিটি সত্যি সত্যি বিনোদন–দুনিয়ায় সবার জন্য এক নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় পর কাজ করে দারুণ মজা পেয়েছি। এখন সবকিছু অনেক সংগঠিত। তবে বিরতির মধ্যে টুকটাক কাজ করেছি।’ এই ২৮ বছরে গ্ল্যামার–দুনিয়াকে কতটা মিস করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে হেসে তিনি বলেন, ‘গ্ল্যামার–দুনিয়াকে মিস করিনি, মিস করেছি কাজকে।’

ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে হঠাৎই উধাও হয়ে যান শান্তিপ্রিয়া। ‘বাজিগর’খ্যাত অভিনেতা সিদ্ধার্থ রায়কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় অন্তরালে থাকার প্রসঙ্গে শান্তিপ্রিয়া বলেন, ‘প্রেম, বিয়ে, সংসার, সন্তান—সবকিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার শ্বশুর বাঙালি আর শাশুড়ি মারাঠি।

শান্তিপ্রিয়া
ইনস্টাগ্রাম

ফিল্মি পরিবারে আমার বিয়ে হয়েছিল। আর তাই শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর পক্ষ থেকে আমার অভিনয় করার ক্ষেত্রে বাধা ছিল না; বরং তাঁরা চাইতেন আমি অভিনয় করি। কিন্তু আমি নতুন সংসারকে চিনতে চেয়েছিলাম। তাই অভিনয় থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুই দিক বজায় রেখে অনেকেই চলছেন। কিন্তু আমি পরিবারকে উজাড় করে দিতে চেয়েছিলাম। আমি যেটাই করি, সেটাই মনপ্রাণ দিয়ে করি।’

আরও পড়ুন

তবে শান্তিপ্রিয়ার জীবনে হঠাৎ চরম বিপর্যয় নেমে এসেছিল। স্বামী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। তখন শান্তিপ্রিয়ার দুই ছেলে খুব ছোট। একটু আনমনা হয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামী চলে যাওয়ার পর একা হাতে সবকিছু সামলাতে হয়েছে। দুই সন্তানকে সিঙ্গেল পেরেন্ট হিসেবে বড় করে তোলা সহজ ছিল না। কিন্তু আজ ছেলেরা বড় হয়েছে। তারাই আমাকে আবার কাজের জগতে ফিরে যাওয়ার জন্য জোর করেছে।’

অভিনয়জগৎ থেকে দূরে থাকার জন্য কখনো আক্ষেপ হয়নি? আলতো হেসে তিনি বলেন, ‘আক্ষেপ কিসের? অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত আমার নিজের ছিল। আমি আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আমার ওপর কেউ কিছু চাপিয়ে দেয়নি। তবে হয়তো নিজের ক্যারিয়ারটা আরও গুছিয়ে বিয়েটা করতে পারতাম। তাই আমার ছেলেদের বলেছি, আগে ক্যারিয়ার করতে, তারপর প্রেম–টেম করতে (হেসে)।’

আরও পড়ুন

মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে কয়েকটি হিট ছবিতে দেখা গেছে শান্তিপ্রিয়াকে। মিঠুনের ছেলে মিমোর সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।

ইংরেজি আর হিন্দি উচ্চারণ নিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। শুধু আমাকে নয়, দক্ষিণ ভারতীয়দের উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টা–তামাশা করা হয়। বিষয়টা আমার ভারী অদ্ভুত লাগে। কিন্তু গুজরাটি বা পাঞ্জাবিদের তা করা হয় না। গায়ের রং নিয়েও আমাকে বিদ্রূপ করা হতো। তবে আমি এসব খুব একটা গায়ে মাখতাম না। কারণ, এসবের ওপর আমার হাত নেই, ওপরওয়ালা আমাকে এ রকম বানিয়েছেন

মিঠুনের প্রসঙ্গ উঠতেই এই দক্ষিণি অভিনেত্রী বলেন, ‘মিঠুনদার সঙ্গে বহু বছর দেখা হয়নি। তাঁর মতো মানুষ কম দেখেছি। তিনি কিংবদন্তি। তবে তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। বাবার মতোই মিমো ও নমাশি অত্যন্ত আন্তরিক আর বড় মনের মানুষ।’

শান্তিপ্রিয়া এখন ব্যস্ত তাঁর আগামী প্যান–ইন্ডিয়া প্রকল্প নিয়ে। স্বাধীনতাসংগ্রামী সরোজিনী নাইডুর আত্মজীবনীমূলক ছবির শীর্ষ চরিত্র তিনি। এ নিয়ে একটু উচ্ছ্বাসের সঙ্গে শান্তিপ্রিয়া বলেন, ‘আবার কাজের মধ্যে ফিরে দারুণ ভালো লাগছে। এই প্যান–ইন্ডিয়া ছবির দুটি পর্যায়ের শুটিং হয়ে গেছে। এখনো একটি পর্যায় বাকি আছে। সরোজিনী নাইডুর ৩০ থেকে ৭৫ এই বয়সসীমা আমি পর্দায় তুলে ধরতে চলেছি। তাই আমাকে একটু একটু করে ওজন বাড়াতে হচ্ছে। ১৫ কেজি পর্যন্ত বাড়াতে হবে। আমার মতো রোগা–পাতলার জন্য যা খুবই কঠিন। ওজন বাড়ার জন্য প্রাণ খুলে খাচ্ছি।’

এখন বিদ্রূপ শব্দটা বলিউড তারকাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তবে আগে ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের মানুষের বিদ্রূপের শিকার হতে হতো অভিনেতাদের। এ প্রসঙ্গে একটু অভিমানের সুরে শান্তিপ্রিয়া বলেন, ‘ইংরেজি আর হিন্দি উচ্চারণ নিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। শুধু আমাকে নয়, দক্ষিণ ভারতীয়দের উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টা–তামাশা করা হয়। বিষয়টা আমার ভারী অদ্ভুত লাগে। কিন্তু গুজরাটি বা পাঞ্জাবিদের তা করা হয় না। গায়ের রং নিয়েও আমাকে বিদ্রূপ করা হতো। তবে আমি এসব খুব একটা গায়ে মাখতাম না। কারণ, এসবের ওপর আমার হাত নেই, ওপরওয়ালা আমাকে এ রকম বানিয়েছেন।’