মুন্না–সার্কিট থেকে ফুংসুক—হিরানির আসল ম্যাজিক ‘গল্প’

রাজকুমার হিরানিছবি: কোলাজ

বলিউডে এমন পরিচালক খুব কমই আছেন, যাঁর প্রতিটি ছবি দর্শকের মনে আলাদা আলো জ্বালায়, আবার একই সঙ্গে ভেঙে দেয় প্রচলিত কাঠামো, ভেঙে দেয় দর্শকের ভাবনার সীমারেখা। সেই অনন্য নাম—রাজকুমার হিরানি। ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’, ‘লাগে রাহো মুন্নাভাই’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’—মাত্র চারটি চলচ্চিত্রেই তিনি হয়ে উঠেছেন বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী গল্পকার। আজ ২০ নভেম্বর, তাঁর জন্মদিন।

মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ১৯৬২ সালের এই দিনে এক সিন্ধি পরিবারে জন্মেছিলেন হিরানি। বাবা সুরেশ হিরানি চেয়েছিলেন ছেলে হোক ইঞ্জিনিয়ার; কিন্তু রাজুর মন পড়ে ছিল সিনেমার দিকে। তাঁর ইচ্ছা ছিল অভিনয় শেখার। শেষ পর্যন্ত পুনের এফটিআইআইয়ে ভর্তি হলেও অভিনয়ে সুযোগ হয়নি—অগত্যা সম্পাদনায় পড়লেন। পরে এ দক্ষতাই হয়ে ওঠে তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম হাতিয়ার।

রাজকুমার হিরানি
ফেসবুক থেকে

স্ট্রাগল থেকে ‘মুন্নাভাই’: পথচলার শুরু
হিরানির যাত্রা শুরু বিজ্ঞাপন দিয়ে। বিখ্যাত ‘ফেভিকল—জোর লাগাকে হ্যায়সা’ বিজ্ঞাপনটি তাঁরই পরিচালিত। বিজ্ঞাপনে একঝলক তাঁকেও দেখা গেছে। এরপর আসে জীবন বদলে দেওয়া সুযোগ—বিধু বিনোদ চোপড়ার সঙ্গে কাজ। ‘১৯৪২: আ লাভ স্টোরি’র ট্রেলার সম্পাদনা থেকে শুরু করে সব জায়গায় নিজের দক্ষতা দেখান তিনি।
কিন্তু উচ্চতার আসল শিখর আসে ‘মিশন কাশ্মীর’-এর সম্পাদনা করে। কয়েক বছরের লড়াইয়ের পর অবশেষে ২০০৩ সালে পরিচালক হিসেবে অভিষেক—‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’। ছবিটি শুধু হিটই হয়নি, দর্শকের মনে নতুন এক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও তৈরি করেছে। মুন্না-সার্কিট জুটি বলিউড ইতিহাসের স্মরণীয় চরিত্র হয়ে আছে।

মানুষের ভেতরের মানুষকে দেখার ক্ষমতা
রাজকুমার হিরানির সিনেমা শুধু সফল বাণিজ্যিক ছবি নয়; মূলত মানুষের মনস্তত্ত্ব, মানবিক দুর্বলতা আর নৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্বকে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে তৈরি গল্প। তিনি পরিচালক হওয়ার আগে থেকেই মানুষের আচরণ, মানসিক গঠনের সূক্ষ্ম পরিবর্তন, ছোট-বড় সিদ্ধান্তের পেছনের ‘মাইক্রো-ইমোশন’ লক্ষ করতেন। এই গভীর মানব পর্যবেক্ষণই তাঁর ছবির চরিত্রগুলোকে করে তুলেছে জীবন্ত, বাস্তবের মতো প্রাণবান। হিরানি মনে করেন, মানুষ নিজের গল্পে কখনো ভিলেন নয়। মানুষের সব ভুল, অন্যায়, স্বার্থপরতা—সবই আসে ভুল ধারণা, চাপ, ভয় অথবা পরিস্থিতির সীমাবদ্ধতা থেকে।
এই দর্শন ইরানি প্রথম পান বোমান ইরানির কাছ থেকে। ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর শুটিংয়ে বোমান তাঁকে বলেছিলেন, ‘কেউই নিজের মনে নিজেকে খলনায়ক ভাবে না। প্রত্যেকেই নিজের দৃষ্টিতে ঠিক।’ এই ভাবনা হিরানির গল্প বলার পদ্ধতিকে আমূল বদলে দেয়। তাই তাঁর ছবির ভিলেনরা ‘খারাপ’ হলেও তাঁরা অমানুষ নয়; বরং মানুষেরই ভঙ্গুরতা, ভয়, অহংকার, একগুঁয়েমি বা ভুল-শিক্ষার প্রতিচ্ছবি।
যেমন ড. আস্থানা একজন কঠোর, অহংকারী ডিন, কিন্তু তাঁর ভয়—হাসপাতালের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। লাকি সিং—চতুর ব্যবসায়ী, কিন্তু বেঁচে থাকার লড়াই তাকে চালায় ভুল পথে। ভাইরাস—একজন উচ্চাভিলাষী একাডেমিক, যিনি মনে করেন সাফল্য মানেই শৃঙ্খলাবদ্ধ, নির্মম প্রতিযোগিতা। সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রতিটি ‘ভিলেন’ই আসলে মানুষেরই অন্য রূপ—ভুল শিক্ষা, ভয়, অহং, সামাজিক চাপ বা আর্থিক লড়াইয়ের ফল। ফলে দর্শক কখনোই তাদের ঘৃণা করে না; বরং তাদের ভুল দেখে হাসে, আবার মায়াও লাগে।

রাজকুমার হিরানি
ফেসবুক থেকে

নিজের জীবনের সংগ্রামও ঢুকে পড়ে তাঁর সিনেমায়
হিরানির ছবিতে বারবার ফিরে আসে এক প্রশ্ন, ‘আপনি কি সত্যিই সেই কাজ করছেন, যেটা আপনার ভালো লাগে?’ এ প্রশ্নের পেছনে রয়েছে তাঁর নিজের জীবনের দীর্ঘ দমবন্ধ সময়। পরিবার চাইত তিনি পড়াশোনা করে নিরাপদ পেশায় যান—ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যবসায়ী হোন। কিন্তু রাজু হিরানির মন পড়ে ছিল শুধু সিনেমায়। তাঁর স্বপ্ন ছিল পর্দায় অভিনয় করা, চরিত্রে ঢুকে বাঁচা। এফটিআইআইয়ে ভর্তি হলেও অভিনয়ের সুযোগ না পাওয়ার হতাশা, জীবনের দিশাহীনতা, প্রাত্যহিক চাপ, পরিবারকে বোঝানোর সংগ্রাম—এ বাস্তব অভিজ্ঞতাই পরবর্তী সময়ে ঢুকে যায় তাঁর চলচ্চিত্রে। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ ফারহান যখন বাবাকে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ফটোগ্রাফি’, সেটা নিছক একটি দৃশ্য নয়; বরং হিরানির নিজের মন থেকে উঠে আসা দীর্ঘদিনের ব্যথা, চাপা স্বপ্নের আর্তনাদ। যেভাবে ফারহান নিজের ভয় ভেঙে সত্যিকারের ইচ্ছা প্রকাশ করে, ঠিক সেভাবেই হিরানিও নিজের পরিবারের প্রত্যাশা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন—সিনেমার জগতে নিজের জায়গা তৈরি করতে। হিরানির সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য তাই শুধু গল্প নয়; তাঁর নিজের জীবনের ছায়া, সংগ্রাম ও আত্ম-অন্বেষণের ফসল।

জীবনদর্শন: ভয় কাটিয়ে ওঠার শিক্ষা
রাজকুমার হিরানির দর্শন জীবনের মতোই সহজ। তিনি বিশ্বাস করেন, জীবনে আসলে মানুষের দুটো সমস্যাই গুরুতর—স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য। প্রয়োজন ও লোভের সীমা সবাইকেই বুঝতে হবে।
ভয় মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। অনিশ্চয়তাকে জয় করাটাই আসল বুদ্ধিমত্তা। একবার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভয়ংকর আশঙ্কার কথা শুনেছিলেন তিনি। চিকিৎসক বলেছিলেন, তাঁর দেহের একটি অংশ ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেদিনই তিনি উপলব্ধি করেন—মানসিক চাপই মানুষের সবচেয়ে বড় ‘রোগ’। জীবন যত ছোট, ততই তাকে মুক্তমনে উপভোগ করা জরুরি। আরেকটি শিক্ষা পেয়েছিলেন থাইল্যান্ডের বিলিয়ার্ড তারকা গীত সিতাইয়ের গল্প থেকে—ফাইনালে হেরে যাওয়া খেলোয়াড় ওয়াত্তানা বলেছিলেন, তাঁর মন ছিল পুরস্কারের টাকার দিকে, খেলায় নয়।
হিরানি সেই গল্প থেকে শিখেছেন—ফোকাসই সাফল্যের সবচেয়ে বড় রহস্য।

রাজকুমার হিরানি
ফেসবুক থেকে

টেকনোলজি ও শিক্ষাব্যবস্থা: হিরানির গভীর ভাবনা
হিরানি মুঠোফোন ব্যবহার করেন না। ব্যক্তিগত ইমেইলও নেই তাঁর। তিনি বলেন, ‘২০ হাজার মানুষের মনোযোগ প্রতিদিন চাইতে চাইতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর থেকে দূরে থাকাই ভালো।’ একবার মুম্বাই ইউনিভার্সিটির উপাচার্য তাঁকে বলেছিলেন, ‘ক্লাসরুমভিত্তিক শিক্ষার যুগ শেষ। বাচ্চাদের হাতে এখন আইফোন-আইপ্যাড। এ যন্ত্রগুলোতেই সবচেয়ে ভালো শিক্ষক লুকিয়ে আছে।’ ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুক্তির পর অসংখ্য প্রকৌশলী তাঁর কাছে এসে বলেছেন, তাঁরা ভুল পেশায় আছেন, কিন্তু বের হয়ে আসতেও ভয় পান। হিরানির বার্তা—ভয় কাটানোর মধ্যেই শুরু হয় সত্যিকারের শিক্ষা। মানুষের জ্ঞানও ‘সেকেন্ড হ্যান্ড নলেজ’—এ উপলব্ধি তাঁর সিনেমায় প্রতিফলিত। পশুরা জ্ঞান রেখে যেতে পারে না, মানুষ পারে। তাই মানুষই প্রতিনিয়ত নিজের ভুল-অভিজ্ঞতা-গল্প অন্য প্রজন্মকে দিচ্ছে।


সব সময় একটু খামখেয়ালি, কিন্তু অর্থপূর্ণ
সব সময় একটু খামখেয়ালি, কিন্তু অর্থপূর্ণ—এ বৈশিষ্ট্য যেন রাজকুমার হিরানির গল্প বলার ধরন। তাঁর ছবির চরিত্রদের নামকরণ দেখলেই বোঝা যায়, তিনি শুধু কৌতুক বা অদ্ভুত ব্যাপার সৃষ্টি করতে চান না; বরং নামের ভেতরেও রেখে দেন গভীর শিল্পসত্তা, ব্যঙ্গ, সামাজিক প্রতীক আর চরিত্রের অন্তর্নিহিত দর্শন।
‘থ্রি ইডিয়টস’-এ আমির খানের চরিত্রের নাম ফুংসুক ওয়াংড়ু—শুনতে হাস্যকর, অদ্ভুত, এমনকি একটু বিদেশি রহস্যময়তা আছে। কিন্তু এই নামই আসলে ভারতের প্রান্তিক পাহাড়ি অঞ্চল লাদাখের শিক্ষা-সংগ্রাম ও উদ্ভাবনী শক্তির প্রতি এক ইঙ্গিত। বাস্তবের সোনম ওয়াংচুককে অনুপ্রাণিত করে তৈরি এ চরিত্র তাই নিছক নাম নয়, এটা এক সাংস্কৃতিক রেফারেন্স, এক মানবিক প্রতীক।
‘পিকে’-তে আনুশকা শর্মার নাম জগজ্জননী, ডাকনাম জগ্গু। নামটি প্রথমে খানিকটা কমিক লাগলেও হিরানির দৃষ্টিতে এটি সমাজ, পরিবার এবং নারী-পুরুষের পরিচয়বোধ নিয়ে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য। জগজ্জননী—একজন নারী যে পৃথিবী সৃষ্টি করে—এ মিথের সঙ্গে জগ্গুর সাংবাদিক পরিচয় ও সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতাকে মিলিয়ে তিনি তৈরি করেন এক ‘সত্যসন্ধানী নারী’ রূপক। নামটির মধ্যেই আছে পরিচয়ের মুক্তি, সামাজিক ছক ভাঙার বার্তা।

আর ‘মুন্নাভাই’-এর মুন্না আর সার্কিট—বলিউড ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া এক অবিচ্ছেদ্য জুটি। মুন্না নামের ভেতরে আছে আদরের, পথভ্রষ্ট কিন্তু সৎ হৃদয়ের এক মানুষের প্রতিচ্ছবি; আর সার্কিট—নামে যেমন হাস্যরস, তেমনই আছে মুন্নার চারপাশ ঘুরে বেড়ানো, সবকিছু চালু করে দেওয়া এক সঙ্গীর স্বভাব। নামগুলো দেখলে মনে হয় অদ্ভুত, মজার; কিন্তু প্রতিটি নাম চরিত্রের ব্যক্তিত্ব, কাজ, নৈতিকতা ও গল্পের ভেতরকার ‘মেসেজ’-এর সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে যায়।
হিরানির নামকরণ তাই কোনোভাবেই এলোমেলো নয়। তিনি চরিত্রের নামকে ব্যবহার করেন গল্পের ভেতরে গভীরতর বয়ান তৈরি করতে। কখনো স্যাটায়ার, কখনো ব্যঙ্গ, কখনো সমাজের ভ্রান্ত ধারণার প্রতি চপল ইঙ্গিত—সব মিলিয়ে তাঁর ছবির নামগুলো চরিত্র তৈরি করার পাশাপাশি দর্শকের মানসিক ছবিও গড়ে দেয়। উদ্ভটতার আড়ালে তাই থাকে গভীর অর্থ, আর এই নামকরণের মধ্যেই উঁকি দেয় হিরানির মানবিকতা ও গল্পকারের মেধা।


পুরস্কার ও সম্মাননা
রাজকুমার হিরানি তাঁর চলচ্চিত্রজীবনের শুরু থেকেই আলাদা পথ তৈরি করেছেন, আর সেই পথ তাঁকে এনে দিয়েছে অসংখ্য সম্মান। তিনি তিনবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চারবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, সেই সঙ্গে ভারতের ভেতরে-বাইরে নানা আন্তর্জাতিক উৎসব, ফোরাম ও সমালোচক সমিতির স্বীকৃতি।
হিরানির প্রতিটি ছবিই বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদের কাছ থেকেও পেয়েছে বিশেষ মর্যাদা, যা বলিউডে খুব কম পরিচালকেরই ভাগ্যে জোটে। বিশেষ করে ‘থ্রি ইডিয়টস’ ভারতীয় সিনেমার বাজারচিত্রই বদলে দিয়েছিল। শুধু বক্স অফিস নয়, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন, জাপান—এশিয়ার নানা দেশে এই ছবি তরুণ প্রজন্মের চিন্তাভাবনা পাল্টে দেয়।

‘পিকে’—ধর্ম, প্রশ্ন, বিশ্বাস ও পরিচয় নিয়ে নির্মিত আধুনিক ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে সাহসী ছবিগুলোর একটি।
আর ‘সঞ্জু’—সিনেমা, খ্যাতি, আসক্তি, পরিবার ও পুনর্জন্মের মতো বিশৃঙ্খল জীবনের গল্পে হিরানির গল্পকার-সত্তা আবারও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এসব সাফল্য কেবল বাণিজ্য নয়; বরং একটি প্রজন্মের ওপর গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব। হিরানির সিনেমা বক্স অফিসে টাকা তো আনে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি—প্রশ্ন তোলে, আলোচনার জন্ম দেয়, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়।


কেন হিরানির ছবিগুলো এত আলাদা
রাজকুমার হিরানি বিশ্বাস করেন, সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটা মানুষের জীবনে আলো ফেলার এক শক্তিশালী হাতিয়ার। তাঁর সিনেমায় হাসি আছে, কান্না আছে, প্রেম আছে; কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয়, আছে মানুষকে পরিবর্তন করার শক্তি।

রাজকুমার হিরানি
ফেসবুক থেকে

হিরানির সিনেমার চারটি অদৃশ্য স্তম্ভই এই শক্তিকে গড়ে তোলে

১. মানবিকতা
হিরানির গল্পে খল চরিত্রও শেষ পর্যন্ত মানুষই হয়ে ওঠে। দুর্বলতা, অহং, ভুল—সব মিলিয়েই তাঁর চরিত্র তৈরি। এ কারণেই দর্শক তাঁর গল্পে নিজের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পায়।
২. ব্যঙ্গ ও স্যাটায়ার
সমাজের জটিলতা, ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, শিক্ষাব্যবস্থার সংকট—সবই তিনি দেখান হাসির আড়ালে ছুরি চালানোর মতো ধারালো ব্যঙ্গের মাধ্যমে।
৩. তীক্ষ্ণ সামাজিক পর্যবেক্ষণ
‘এলস ওয়েল’, ‘জাদু কি ঝাঁপি’, ‘আল ইজ ওয়েল’—এই স্লোগানগুলো শুধু সংলাপ নয়; এগুলো সামাজিক সেলফ-হেল্প মন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
৪. গল্পের গতিময়তা ও চরিত্রের নিষ্কলুষতা

জটিল গল্পকেও হিরানি বলেন সহজভাবে। তাঁর নায়ক-ভিলেন সবাই ভুল করে, শেখে, বদলায়। এই মানবিক পরিবর্তনই তাঁর সিনেমার সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। এসব মিলেই রাজকুমার হিরানি হয়ে উঠেছেন বিরল এক নাম, যাঁর ছবি একদিকে ব্লকবাস্টার, অন্যদিকে সিনেমার স্কুলের পাঠ্যবই। তাঁর সিনেমা যতটা বড় বাজেট, তার চেয়ে বেশি বড় হয় মানুষের অন্তর্গত সত্যকে তুলে ধরার শক্তিতে। তাঁর ছবিগুলো আমাদের হাসায়, কাঁদায়, ভাবায়—সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের নিজেদের দিকে তাকাতে শেখায়। জীবনে কত চাপ, কত অনিশ্চয়তা, কত ভুল সিদ্ধান্ত...কিন্তু তাঁর ছবিগুলো বারবার বলে—ভয় কাটিয়ে এগোতে হয়, নিজের সত্যিকারের ইচ্ছা খুঁজে নিতে হয়। তাঁর গল্পে যে মানবিকতা আছে, যে সরলতা আছে, যে স্যাটায়ারের আড়ালে সত্য বলার শক্তি আছে, তা আজও বলিউডে বিরল।