হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি, বাধ্য হয়ে মিথ্যা বলেছি: আমির খান
‘আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি, কিছু মানুষকে আমি মিথ্যা বলেছিলাম যে আমার ছবি (সিতারে জমিন পর) ইউটিউবে মুক্তি পাবে না। আমি এটা বলেছিলাম, কারণ, আমার কিছুই করার ছিল না। আমি চেয়েছিলাম থিয়েটারের ব্যবসাকে রক্ষা করতে, তা না হলে আমার স্বপ্ন ওখানেই ধূলিসাৎ হয়ে যেত। সিনেমা দিয়েই আমার শুরু আর সিনেমার প্রতি আমি অত্যন্ত অনুগত। তাই আমি সব সময় থিয়েটারের ব্যবসাকে রক্ষা করার প্রয়াস করব। এটা আমাদের প্রথম প্রয়াস ছিল, তাই বাধ্য হয়ে আমাকে মিথ্যা বলতে হয়েছিল। আমার প্রযোজনা সংস্থা প্রযোজিত আগামী সব ছবি প্রথমে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে, তারপর ইউটিউবে “পে-পার-ভিউ” মডেলে দেখা যাবে’—গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আমির হাত জোড় করে সবার উদ্দেশে ক্ষমা চেয়ে আবেগপ্রবণ কণ্ঠে কথাগুলো বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আমির জানান যে ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘ইউপিআই আসার পর ডিজিটাল পেমেন্ট ভারতীয়দের জন্য অনেক সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। তাই আমি মনে করি যে ডিজিটাল মাধ্যমে আসার জন্য এটা সঠিক সময়। আমার মতে, ইউটিউব এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যা সবাই ব্যবহার করেন। যেকোনো ডিভাইসে এটা চালানো যায়। এক দিনে প্রায় ৫৫ কোটি ভারতীয় ইউটিউব ব্যবহার করেন। তাই আমার মনে হয়েছিল যে ইউটিউবে এলে আমি আমার কাহিনি সব জায়গায় দেখাতে পারব। আর ইউপিআইয়ের সাহায্যে সব ভারতীয় সহজে এর পেমেন্ট করতে পারবেন।’
নবীনকে আহ্বান
আমির জানান যে কিছুদিন পর থেকে ‘আমির খান প্রোডাকশন’ প্রযোজিত প্রায় সব ছবি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে। সিনেমার প্রতি প্রেম থেকে আমির নবীন নির্মাতাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম দিতে চলেছেন। অভিনেতা জানান, ‘অনেক নবাগত পরিচালক আছেন, যাঁরা তাঁদের ছবি আনার জন্য প্ল্যাটফর্ম পান না। তাঁদের ছবি আমাদের পছন্দ হলে সেসব ছবি আমার ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ করব। তাই শুধু আমার ছবি, নতুনদের আমরা সুযোগ দেব। আমার বাবার (তাহির হুসেন) প্রযোজিত ‘অনামিকা’, ‘খুন কী পুকার’সহ আরও ছবি ‘আমির খান টকিজ’-এ মুক্তি দেওয়া হবে। আমাদের এই মডেল সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক নয়, “পে-পার-ভিউ”ভিত্তিক। ১০০ রুপির বিনিময়ে ছবি দেখা যাবে।
আমির বিভিন্ন সময় বলেছেন যে সিনেমার ব্যবসার ক্ষতির পেছনে ওটিটির অনেক বড় ভূমিকা আছে। কারণ, কোনো ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির মাসখানেকের মধ্যে তা ওটিটিতে চলে আসছে। দর্শক জানেনই যে কিছুদিন অপেক্ষা করলে ছবিটা ঘরে বসে ওটিটিতে দেখা যাবে, তাই মানুষ আর হলমুখী হচ্ছেন না। এদিনের অনুষ্ঠানে আমির ওটিটির প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘ওটিটি সাবস্ক্রিপশন–ভিত্তিক এক মডেল। ওটিটি নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু থিয়েটারে মুক্তির পর ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ছবিটি ওটিটিতে আসার যে প্রথা আছে, তা আমার মোটেও পছন্দ নয়। তাই আমি ওটিটি থেকে দূরে সরে এসেছি। “সাবস্ক্রিপশন মডেল” আর “পে-পার-ভিউ”-এর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। আমার মনে হয় না যে “পে-পার-ভিউ” মডেলের কারণে সিনেমার ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে। আমি এক নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে চলেছি, তাই আমি জানি না যে এর থেকে ব্যবসার সম্ভাবনা কতটা আছে।’
১২৫ কোটি নয়, ১০০–তেই খুশি
ওটিটিতে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সিনেমার স্বত্ব বিক্রি করা যায়। এ প্রসঙ্গ উঠতেই আমির বলেন, ‘আমি ১২৫ কোটি রুপি চাই না, আমি আমার দর্শকের থেকে ১০০ রুপি পেয়েই খুশি। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে আমি ভালো প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি সেসব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। সাবস্ক্রিপশন মডেল আমার পছন্দ নয়। আমার কাজ আর দর্শকের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমার কাজ ভালো হলে মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে তা দেখবেন, পরে আবার তা ইউটিউবে দেখবেন। আমার মনে হয় সাবস্ক্রিপশন মডেল সিনেমার ক্ষতি করছে। কিছু সময় পর ইন্ডাস্ট্রিতে এর প্রভাব বাজেভাবে পড়বে। তাই আমি এখানে ছবি মুক্তি করার প্রস্তাব নাকচ করেছি।’