একের পর এক তরুণী নিখোঁজ...

‘বোগেনভিলা’র দৃশ্য। আইএমডিবি

ফাহাদ ফাসিলকে কেন যে এই সিনেমায় নেওয়া হয়েছিল, কে জানে! পোস্টার আর প্রচারে তাঁর নাম বড় করে নেওয়া হলেও ছবিতে তিনি আদতে ‘অতিথি’। তাঁর চরিত্রটি তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার। সেটার দৈর্ঘ্য অনায়াসে আরও বাড়ানো যেত, পুলিশি তদন্তে আরও বিস্তারিতভাবে দেখানো যেত। সেটা না করে পরিচালক বরং ফাহাদ ফাসিলের মতো তারকাকে অপচয়ই করেছেন বলা যায়। তবে এটুকু শুনে সিনেমা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন না, ফাহাদ ফাসিলকে ‘অতিথি চরিত্র’ দিলেও সিনেমা হিসেবে তত খারাপ না ‘বোগেনভিলা’।

একনজরে
সিনেমা: ‘বোগেনভিলা’
পরিচালক: অমল নীরদ
অভিনয়: কনচাকো বোবান, জ্যোতির্ময়ী, ফাহাদ ফাসিল
দৈর্ঘ্য: ১৪৪ মিনিট
স্ট্রিমিং: সনি লিভ

কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় মালয়ালম সিনেমা। বিশেষ করে এই ইন্ডাস্ট্রির থ্রিলার চমকে দিয়েছে দর্শককে। গত বছর মুক্তি পাওয়া অমল নীরদের সিনেমা ‘বোগেনভিলা’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশেও। গত ১৭ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সিনেমাটি। বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করে, পায় সমালোচকদের প্রশংসায়। গত ১৩ ডিসেম্বর মুক্তি পায় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সনি লিভে, এর পর থেকেই অনেক দেশি দর্শক কথা বলেছেন ‘বোগানভিলা’ নিয়ে।

সিনেমার গল্প এক দম্পতিকে নিয়ে। আট বছর আগে রয়েস (কনচাকো বোবান) আর ঋতু (জ্যোতির্ময়ী) দম্পতি এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। রয়েস পুরোপুরি সেরে ওঠে, ঋতুকে নিয়ে হয় ঝামেলা। সে এখন আর কিছুই মনে রাখতে পারে না। কিছুক্ষণ আগের স্মৃতিও ভুলে যায়। কাজ চালিয়ে নিতে লিখে খাতায় নোট করে রাখে। এদিকে শহর থেকে পরপর কয়েকজন তরুণী লাপাত্তা হতে থাকে, সবাই পর্যটক।

‘বোগেনভিলা’র পোস্টার। আইএমডিবি

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, এক নিরুদ্দেশ পর্যটকের হোটেলের সামনে ছিল ঋতু! সেখানে কী কাজ তার? তদন্তে নামে এসিপি ডেভিড কোশি (ফাহাদ ফাসিল)। কিন্তু ঋতু যে কিছুই মনে করতে পারে না! মোটাদাগে এই হলো সিনেমার গল্প। এবার পুলিশ কী আদৌ রহস্যভেদ করতে পারবে? নিখোঁজ তরুণীদের সঙ্গে ঋতুর কি কোনো যোগাযোগ আছে? জানতে হলে দেখতে হবে ১৪৪ মিনিটের এই সিনেমা।

‘আয়োবিন্তে পুস্থাকাম’, ‘কমরেড ইন আমেরিকা’, ‘ভারাথান’ থেকে ‘বিশমা পারভাম’—অমল নীরদের সিনেমা মানেই দারুণ স্টাইলিস্ট ব্যাপার-স্যাপার। আপাতদৃষ্টে একটু ভারী গল্পও তিনি বাণিজ্যিক মোড়াকে পর্দায় হাজির করেন। অতি সংলাপ তাঁর সিনেমায় থাকে না; বরং ভিজ্যুয়াল দিয়ে সেটা পুষিয়ে দেন। সে চেষ্টা আছে এ সিনেমায়ও। ‘বোগেনভিলা’ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। নির্মাতা অমল নীরদের সঙ্গে সিনেমার সহলেখক জনপ্রিয় মালয়ালম ক্রাইম থ্রিলার লেখক লাজো জোসে। দুজনে মিলে চেষ্টা করেছেন ধাক্কা দেওয়ার মতো একটা থ্রিলার দর্শকদের উপহার দিতে। সেটা তাঁরা করতে পরেছেনও বলতে হবে।

‘বোগেনভিলা’র দৃশ্য। আইএমডিবি

কী ভালো
কনচাকো বোবান, জ্যোতির্ময়ী আর ফাহাদ ফাসিলের মতো দুর্দান্ত অভিনেতা আছেন ছবিতে। কেবল তাঁদের অভিনয় দেখার জন্যই ছবিটি দেখা যায়। কনচাকো বোবান মালয়ালম সিনেমার নতুন তারকা হয়ে উঠেছেন এর মধ্যেই। নানা ঘরানার সিনেমায় নিজের জাত চিনিয়েছেন। এ ছবিতেও তাঁর অভিনয় যথাযথ। তবে সবার দৃষ্টি ছিল জ্যোতির্ময়ীর দিকে। ছবিটি দিয়েই এক দশকের বিরতি ভেঙে পর্দায় ফিরলেন তিনি। আর ফেরাটা স্মরণীয় হয়ে রইল। কনচাকো বোবান আর জ্যোতির্ময়ী এ সিনেমার প্রযোজকও বটে।

অভিনয় ছাড়া ভিজ্যুয়াল গল্প বলা এ সিনেমার আরেকটি ইতিবাচক দিক। মালয়ালম সিনেমায় কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন আলাদা চরিত্র হয়ে ওঠে; ‘বোগানভিলা’তেও তার ব্যতিক্রম নয়। যাঁরা প্রচুর থ্রিলার সিনেমা দেখেছেন, তাঁদের জন্য হয়তো শেষটা তত বড় চমক নয়; কিন্তু বেশির ভাগ দর্শকের জন্য শেষের ধাক্কাটা যথাযথ। বলা যায়, নির্মাতা ছবির সবচেয়ে বড় চমকটিকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পেরেছেন।

‘বোগেনভিলা’র দৃশ্য। আইএমডিবি

কী আরও ভালো হতে পারত
‘বোগেনভিলা’ স্লথ গতির, তবে গতি সমস্যা নয়। মুশকিল হলো, নির্মাতা দর্শকের জন্য সব চমক ছবির শেষেই রেখেছেন। ফলে পুরো সিনেমার অন্য অনেক কিছুই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়, সম্পাদক চাইলেও আরও মিনিট কুড়ি অনায়াসে ছেঁটে ফেলতে পারতেন। চাইলে পুলিশি তদন্তের বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে দেখানো যেত, অথবা ঘটনার মূল হোতার অপরাধী হয়ে ওঠার গল্প। কিন্তু নির্মাতার মূল চরিত্র ঋতু, ছবির প্রায় প্রতিটি দৃশ্যেই সে আছে। ফলে অন্য অনেক কিছুই যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। অমল নীরদ আবহ তৈরি করার ওপর অনেক বেশি সময় দিয়েছেন। যার প্রভাবটা পড়েছে সিনেমার গতিতে।

আরও পড়ুন

শেষ কথা
দুর্বলতা থাকলেও ‘বোগেনভিলা’ অবশ্যই একবার দেখার মতো সিনেমা, বিশেষ করে যাঁরা দক্ষিণি থ্রিলারের ভক্ত। অমল নীরদের সাইলিস্ট নির্মাণ, জ্যোতির্ময়ীর ফেরা আর শেষে ধাক্কা খাওয়ার মতো চমক মিলিয়ে আপনার সপ্তাহান্তের ছবি দেখার তালিকায় রাখতে পারেন সিনেমাটিকে।