ভারতের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে সিনেমা, কে ছিলেন কিরণ বেদি
ভারতে পেশাগত নারীদের অগ্রযাত্রায় তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। যখন নারীরা চাকরি করার কথা ভাবতেও পারেননি, সে সময়ই তিনি চাকরি শুরু করেন। ১৯৭২ সালে পুলিশের আইপিএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন কিরণ বেদি। প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ভারতের ইতিহাসে নাম লেখান। তিনিই পরবর্তী সময় মাদক, দুর্নীতি, জেলের সংস্কারসহ নানা অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। নারী হিসেবে তাঁর সংগ্রামকে সব সময় বলা হতো সিনেমার গল্পের মতো। সেই কিরণ বেদিকে নিয়ে এবার ভারতে তৈরি হচ্ছে সিনেমা।
কিরণ বেদি পুলিশের চাকরি শুরুর পর আশা খুঁজে পান বহু নারী। তাঁকে দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি যেখানেই গেছেন, শুনিয়েছেন নারীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সেই গল্প ও সংগ্রামী কর্মজীবন নিয়ে সিনেমাটি তৈরি করছে ড্রিম স্লেট পিকচার্স। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেদির জীবনের অনেক ঘটনাই রয়েছে, যেগুলো ঢাকা পড়েছে। যা সামনে আনা প্রয়োজন। তিনি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। সবকিছুর পরও দৃঢ়সংকল্প বেদির পুলিশি ক্যারিয়ারকে দারুণভাবে সাফল্যমণ্ডিত করেছে।
নিজের জীবনী নিয়ে সিনেমা প্রসঙ্গে ভ্যারাইটিকে কিরণ বেদি বলেন, ‘গল্পটি শুধুই আমার নয়। এটা ভারতের নারীদের গল্প। ভারতের যে নারীরা বেড়ে উঠেছে, পড়াশোনা করেছে ভারতে, যাদের পড়াশোনার ভার ছিল মা-বাবার ওপর। কর্মজীবনে যারা ভারতের মানুষের সঙ্গে কাজ করেছে, তাদের গল্প এই সিনেমায় উঠে আসবে।’
এ সময় কিরণ আরও বলেন, ‘মাত্র ৯ বছর বয়স থেকেই আমাকে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তখন একদিন আমার বাবা বললেন, “জীবনটা একটা ঝোঁকের মধ্যে আছে। সেটা তুমি চাইলে নিচে নিয়ে যেতে পারো, আবার উন্নতির শিখরেও ওঠাতে পারো।” আর মা বললেন, “জীবন মানে এমন একটা দিক, যেখানে শুধু তুমি দিয়েই যাবে, গ্রহণ করতে পারবে নিতান্তই সামান্য।” জীবন চলার পথে এই কথাগুলোই আমাকে মূল ভিত্তি হিসেবে নির্দেশনা, অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এগুলোই উঠে আসবে সিনেমায়। সিনেমাটি নারী দিবস উপলক্ষে মুক্তি পাবে, এটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
কিরণ বেদিকে নিয়ে সিনেমাটির গল্প ও পরিচালনা করবেন কৌশল চাওলা। তিনি ‘অ্যানাদার টাইম’ বানিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন। সিনেমাটি প্রযোজনা করবেন গৌরব চাওলা। সিনেমাটি আগামী বছর মুক্তির পরিকল্পনা করছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
কে এই কিরণ বেদি? বেদি ১৯৬৬ সালে জাতীয় জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নের মুকুট জয় করেন। পরে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং জাতীয় টেনিস খেলায় অংশ নিয়ে অনেক পুরস্কার পান। পরে ১৯৭২ সালে চাকরিতে যোগ দেন।
বেদি দিল্লির চাণক্যপুরী এলাকায় সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক জেতেন। পরে পশ্চিম দিল্লিতে বদলি হন। সেখানে তিনি নারীদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধ কীভাবে কমানো যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি দিল্লি কারাগারে ইন্সপেক্টর জেনারেল হয়েছিলেন। কর্মের জন্য র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার জয় করেন।
কিরণ বেদিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় ও প্রথম নারী পুলিশ, যিনি জাতিসংঘের পুলিশপ্রধান এবং জাতিসংঘের শান্তি অপারেশন বিভাগে পুলিশ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ২০০৭ সামাজিক কর্মকাণ্ড ও লেখালেখি করার জন্য চাকরি ছাড়েন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইন্ডিয়া ভিশন ফাউন্ডেশন।