‘চার মিনিটের চুমু’, ৯২ বছর ধরে সেই দৃশ্য নিয়ে আলোচনা
অনেক বলেন হিন্দি সিনেমায় প্রথম ঘনিষ্ঠ দৃশ্য, কেউ বলেন সবচেয়ে দীর্ঘতম চুম্বনদৃশ্যগুলোর একটি। তবে আজ থেকে ৯২ বছর আগে দৃশ্যটি নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল সন্দেহ নেই। পর্দায় যখন এক রাজকন্যা কোমায় থাকা প্রেমিককে চুমু দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করলেন, তখনই লেখা হলো সিনেমার এক নতুন ইতিহাস। তবে সেটি ভারতের সিনেমায় সবচেয়ে দীর্ঘ চুম্বনের দৃশ্য কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।
১৯৩৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কারমা’ ছবির সেই চুম্বনদৃশ্য, যেখানে বাস্তব জীবনের যুগল দেবিকা রানী ও হিমাংশু রায় একে অপরকে চুম্বন করেন—দীর্ঘদিন ধরে বলিউডের ইতিহাসে ‘প্রথম চুম্বন’ ও ‘সর্বকালের দীর্ঘতম চুমু’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল। তৎকালীন সংবাদমাধ্যম জানায়, ছবির সেই চুমু চার মিনিটের বেশি দীর্ঘ ছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে এই যুগল এবং ওই চুমু নিয়ে ভারতে গড়ে উঠেছে নানা রকম মিথ।
১৯৩৪ সালে এই দম্পতি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বম্বে টকিজ’, ভারতের প্রথম পেশাদার চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা। যা ‘টকিং সিনেমা’র যুগে এক দশক ধরে আধিপত্য বজায় রেখেছিল এবং প্রবর্তন করেছিল বহু রীতি, যা আজও বলিউডে চলমান।
২০২০ সালে প্রকাশিত কিশওয়ার দেশাই তাঁর ‘লংগেস্ট কিস: দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অব দেবিকা রানী’ বইতে লিখেছেন,‘ছবিটি তৈরি হচ্ছিল এমন সময়ে, যখন হিমাংশু ও দেবিকার সদ্য বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা তখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন, তাই পর্দায় আবেগঘন চুমু থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক।’
দেশাই আরও জানান, ওই সময়ের ভারতীয় ছবিতে চুমুর দৃশ্য নতুন কিছু ছিল না। কারণ, তখনো ব্রিটিশরা ভারতের শাসক এবং বহু ছবি তৈরি হচ্ছিল পাশ্চাত্য দর্শকদের জন্য। ১৯২০-এর দশক ও ১৯৩০-এর দশকের কিছু ছবিতে চুমুর দৃশ্য ছিল বলেই জানা যায়। ‘কারমা’ ছবিটিও ছিল সেই সময়ের বহু ছবির মতোই।
মাত্র ৬৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই রোমান্টিক ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন ব্রিটিশ নির্মাতা জে এল ফ্রিয়ার হান্ট। প্রচারে বলা হয়েছিল, এটি এমন একটি ছবি, যেখানে দেখানো হয়েছে ‘প্রকৃত রাজপ্রাসাদ ও প্রাচ্যের জাঁকজমকপূর্ণ দৃশ্য’। ছবিতে ছিল পশ্চিমা দর্শকের কাছে জনপ্রিয় সব উপাদান—ভারতীয় রাজপরিবার, বাঘ শিকার, সাপের নাচ এবং নাগ-নাগিনীর মিলনদৃশ্য।
চুমুর দৃশ্যটি আসে ছবির একেবারে শেষ দিকে, যখন সাপের কামড়ে অচেতন হয়ে পড়া রাজপুত্রকে রাজকুমারী একটি চুমু দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করেন।
‘মিথ রয়েছে যে চুমুটি চার মিনিটের বেশি দীর্ঘ ছিল, কিন্তু তা সত্যি নয়,’ বলেন দেশাই। ‘এটি আসলে ছিল না একটানা একটি চুমু; বরং একাধিক ছোট ছোট চুমুর দৃশ্য। সময় ধরলে দুই মিনিটও হয়তো পেরোয় না,’ বলেন তিনি।
দেশাই আরও বলেন, ছবিটির প্রচারে চুমুর দৃশ্য কোনোভাবে ব্যবহার করা হয়নি। তাঁর ভাষ্যে, ‘এটা অনেক পরের তৈরি একটি জনপ্রিয় মিথ, যা সম্ভবত সংবাদমাধ্যমই ছড়িয়েছে।’ তবে দুঃখজনকভাবে ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়নি।
ভারতে বহু দশক ধরেই পর্দায় বা বাস্তবে প্রকাশ্যে প্রেম প্রকাশ, বিশেষ করে চুমু, সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ ছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনেমায় প্রকাশ অনেকটাই সাহসী হয়ে উঠেছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি