শেফালি, শ্রীদেবী আরও যেসব তারকার মৃত্যু বলিউডকে নাড়িয়ে দিয়েছিল
গত ২৭ জুন প্রয়াত হয়েছেন বলিউড সংগীতশিল্পী ও মডেল শেফালি জরিওয়ালা। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো বলিউডই যেন থমকে গেছে। তবে কেবল শেফালি নন, এমন আরও তারকা আছেন যাঁদের হঠাৎ মৃত্যুর খবর হিন্দি সিনেমার দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ঘটনা।
শ্রীদেবী
২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় শ্রীদেবীর। পরদিন ভোরে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না শ্রীদেবী সত্যি সত্যিই আর নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাঁর স্মৃতিচারণায় ভরে যায়।
যদিও প্রথমে হৃদ্রোগে মৃত্যুর কথা বলা হলেও দুবাই পুলিশের ময়নাতদন্তে জানা যায়, দুর্ঘটনাবশত হোটেলের বাথটাবে ডুবে মারা যান তিনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বামী বনি কাপুর তাঁকে ডিনারে ডাকেন আর প্রস্তুত হতে গিয়ে তিনি বাথরুমে যান। প্রায় ১৫ মিনিট পর দরজা না খোলায় জোর করে দরজা খুললে বনি কাপুর তাঁকে অচেতন অবস্থায় পান।
সুশান্ত সিং রাজপুত
হিন্দি সিনেমার অন্যতম সম্ভাবনাময় অভিনেতা ছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তাঁর ক্যারিয়ার যখন উঠছে, তখনই অভিনেতার আকস্মিক মৃত্যুর খবর চমকে দেয় ভক্তদের। ২০২০ সালের ১৪ জুন, ৩৪ বছর বয়সে বান্দ্রার বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। পুলিশ আত্মহত্যা হিসেবে তদন্ত শুরু করলেও অনেকেই অভিযোগ তোলেন এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ফলে তদন্তে নামে সিবিআই ও এনসিবি।
সুশান্তের বাবা তৎকালীন প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং অর্থনৈতিক জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। অবশেষে ২০২৪ সালে সিবিআই জানায়, আত্মহত্যাই করেছেন অভিনেতা।
সিদ্ধার্থ শুক্লা
‘বালিকা বধূ’ অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লা ছিলেন পরিচিত মুখ। রিয়েলিটি শো থেকে অভিনয়—সব জায়গাতেই নিজের ছাপ রেখেছেন ছোট পর্দার এই আলোচিত অভিনেতা। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর, মুম্বাইয়ে ৪০ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। আগের রাতে ওষুধ খাওয়ার পর থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন। সকালে তাঁর মা তাঁকে ঘুম থেকে তুলতে গিয়ে সাড়া না পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। কুপার হাসপাতালে নেওয়ার পরই চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ময়নাতদন্তে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ভক্তরা শেষ দেখার জন্য রাস্তায় ভিড় জমান। শেহনাজ গিল, আলি গনি, জয় ভানুশালি, বিকাশ গুপ্তসহ অনেক তারকাও উপস্থিত ছিলেন।
পারভীন ববি
পারভীন ববি—বলিউডের আলোচিত এই নায়িকার মৃত্যু তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি, জুহুর ফ্ল্যাটে ৫০ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তিন দিন পর তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। মৃত্যুর কারণ ছিল মাল্টি–অর্গান ফেইলিওর। আশির দশকে তিনি স্কিজোফ্রেনিয়ায় ভুগতে শুরু করেন, যা ক্রমেই তাঁকে একাকিত্বে ঠেলে দেয়। শেষ জীবনে বিষক্রিয়ার আশঙ্কায় অন্যের রান্না করা খাবারও খেতেন না। তাঁর ফ্ল্যাটের দরজার বাইরে কয়েক দিন ধরে দুধ, ডিম, পত্রিকা পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। মানি কন্ট্রোলের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর মৃত্যু যেমন শারীরিক জটিলতায় হয়েছিল, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও তাঁর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
দিব্যা ভারতী
অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী ছিলেন নব্বইয়ের দশকের বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত তারকাদের একজন। অল্প বয়সেই খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল, মাত্র ১৯ বছর বয়সে ভারসোভায় ফ্ল্যাট থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। বলা হয়, তিনি পাঁচতলার বারান্দা থেকে নিচে পড়ে যান। কেউ বলেন আত্মহত্যা, আবার কেউ বলেন, তাঁকে কেউ ধাক্কা দিয়েছিল। বারান্দায় নাকি রেলিংও ছিল না। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে এত বছর পরও দিব্যার মৃত্যু নিয়ে রহস্য কাটেনি।
কেকে (কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ)
‘আঁখো মে তেরি’ গানের গায়ক কেকে ছিলেন বলিউডের অন্যতম আলোচিত কণ্ঠশিল্পী। পাঁচটির বেশি ভাষায় গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন। ২০২২ সালের ৩১ মে, কলকাতায় ৫৩ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
কনসার্ট শেষ করে হোটেলে ফিরে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অনেকেই প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর আশঙ্কা করলেও ময়নাতদন্তে তা নাকচ হয়। ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানায়, কনসার্টের আগেই তিনি হাতে ব্যথা ও ক্লান্তি অনুভব করছিলেন। কনসার্ট চলাকালে অস্বস্তি ও অতিরিক্ত ঘামার কথা নিজেও বলেছিলেন।
শেফালি জরিওয়ালা
গত ২৭ জুন ৪২ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে চলে যান ‘কাঁটা লাগা’ গান দিয়ে আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জরিওয়ালা। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতে অসুস্থতা অনুভব করার পর তড়িঘড়ি তাঁকে মুম্বাইয়ের বেলভিউ মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইন্ডি পপ গান ‘কাঁটা লাগা’র রিমেক ভিডিওর মাধ্যমে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান শেফালি জরিওয়ালা। সত্তরের দশকের হিন্দি সিনেমা ‘সমৃদ্ধি’র গানের রিমেকটি সে সময় তুমুল জনপ্রিয় হয়।