ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে না পারা সেই ছেলেই ‘বাহুবলী’,'আরআরআর’ বানিয়ে বিখ্যাত

এস এস রাজামৌলি
ছবি : সংগৃহীত

আগে ‘মাগাধীরা’, ‘মক্ষি’ বানিয়ে পরিচালক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। পরে ‘বাহুবলী’র দুই কিস্তি তাঁকে দিয়েছে ভারতজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি। তাঁর ‘বাহুবলী’র ব্যাপক সাফল্যের পরই শুরু হয় ‘প্যান ইন্ডিয়া’ ছবি নির্মাণের হিড়িক। তাঁর ছবি মানেই বক্স অফিসে নিশ্চিত হিট, পর্দায় অন্য রকম কিছু দেখার অভিজ্ঞতা। এসব এস এস রাজামৌলি সম্পর্কে বলা হতো ‘আরআরআর’ মুক্তির আগে।

চলতি বছর ‘আরআরআর’ মুক্তির পর পরিচালক নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। এ সময়ের ভারতের অন্যতম সেরা পরিচালক তিনি আগেই ছিলেন, তবে ‘আরআরআর’-এর অবিশ্বাস্য সাফল্য তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে বৈশ্বিক স্তরে। ভারতের মতো বা ভারতের চেয়েও ‘আরআরআর’ হলিউডে বেশি সাড়া ফেলেছে। ছবিটি পশ্চিমা তরুণদের পপ কালচারের অংশ হয়ে উঠেছে বললেও ভুল বলা হয় না। ছবিটি দিয়েই হলিউড প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে রাজামৌলি হয়ে উঠেছে সমীহ জাগানিয়া এক নাম। ‘আরআরআর’-এর সাফল্যের পরই পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি করেছে হলিউডের নামী সংস্থা। রাজামৌলিকে নিয়ে এত কথার হেতু, আজ এই নন্দিত পরিচালকের জন্মদিন। ১৯৭৩ সালের ১০ অক্টোবর কর্ণাটকে জন্ম হয়েছিল তাঁর। ‘আরআরআর’-এ ব্যাপক সাফল্য নিয়ে ৪৯ বছরে পা দিয়েছেন তিনি।

‘আরআরআর’–এর শুটিংয়ে রাজামৌলি
ছবি : সংগৃহীত

পরিচালক হিসেবে এত সাফল্য পেলেও ছোটবেলায় সিনেমা নিয়ে তেমন ভাবনাচিন্তা ছিল না রাজামৌলির। শুধু কী সিনেমা, বড় হয়ে কী হবেন, সে লক্ষ্যই তো স্থির করতে পারেননি। রাজামৌলির বাবা প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ভি বিজয়েন্দ্রপ্রসাদ। ‘বাহুবলী’, ‘আরআরআর’, ‘মাগাধীরা’, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, ‘মণিকর্ণিকা’র মতো সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। ছেলে রাজামৌলি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শৈশবে ওর মধ্যে কোনো স্বপ্ন ছিল না। এমনকি বড় হয়ে ওঠার সময়ও সে বুঝতে পারেনি, কিসে তার আগ্রহ। মাঝেমধ্যে সিনেমার প্রতি কিছুটা আগ্রহ দেখতাম। আমার “পরিচালক” ছবিতে তরুণ কৃষ্ণের চরিত্রে অভিনয় করেছিল ও।’

শুটিংয়ে রাজামৌলি
ছবি : সংগৃহীত

তবে রাজামৌলি তো বটেই, তাঁর বাবা ভিজয়েন্দ্রপ্রসাদের সিনেমায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প নিয়ে আরেকটা সিনেমা করা যায়। রাজামৌলির দাদা ছিলেন ধনাঢ্য ব্যক্তি। কেবল জমিজমাই ছিল ৩৬০ একরের বেশি। রাজামৌলির যখন ১০ কি ১১ বছর, তখন কী এক ঘটনায় বেশির ভাগ সম্পত্তিই খোয়া যায়। তাঁর বাবা ও চাচার ছিল সিনেমায় ঝোঁক। তাই বাকি সম্পত্তি বিক্রি করে সিনেমা বানাতে চলে আসেন চেন্নাইয়ে। একের পর এক সিনেমা শুরু করলেও কোনোটাই শেষ করতে পারছিলেন না। এদিকে পয়সাতেও টান পড়েছে। কী করা যায়, ভাবতে ভাবতে বিজয়েন্দ্রপ্রসাদ শুরু করলেন ঘোস্ট রাইটার হিসেবে লেখালেখি। ১৯৯৪ সালে ‘বোববিল সিমহাম’ এবং ১৯৯৫ সালে ‘ঘারানা বুলোডু’ দিয়ে চিত্রনাট্যকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বিজয়েন্দ্রপ্রসাদ। পরে ১৯৯৬ সালে পরিচালনা করেন ‘আর্ধঙ্গি’ নামের ছবি। যে ছবিতে ‘জীবন রক্ষাকারী’ বলে অভিহিত করেন বিজয়েন্দ্রপ্রসাদ। চিত্রনাট্যকার হিসেবে তাঁর প্রতিষ্ঠা পাওয়া যেন ছেলে রাজামৌলিরও নির্মাতা হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়।‘আরআরআর’–এ

‘আরআরআর’–এর শুটিংয়ে রাজামৌলি
ছবি : সংগৃহীত

এ প্রসঙ্গে পরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজামৌলি বলেন, ‘বিশ বছর বয়সেও আমি জানতাম না ভবিষ্যতের জন্য কীভাবে পরিকল্পনা করব। এ জন্য বহুবার বাবার বকা খেয়েছি। সিনেমা নিয়ে কিছুটা আগ্রহ ছিল, তাই ভেবেছি বসে না থেকে টুকটাক কাজ করি। তবে কাজ করতে গিয়েই সিনেমার প্রেমে পড়ে যাই। পরিচালনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।’এর পরের গল্প তো সবার জানা। ২০০১ সালে ‘স্টুডেন্ট নম্বর ওয়ান’ দিয়ে শুরু। পরের ২১ বছরে করেছেন আরও ১০টি ছবি। বেশির ভাগ ছবিতেই নিজের কাজের আলাদা ছাপ রেখেছেন রাজামৌলি।

‘আরআরআর’–এ এনটিআর জুনিয়র
ছবি : সংগৃহীত

এস এস রাজামৌলির ছবি মানেই লার্জার দ্যান লাইফ অভিজ্ঞতা, পর্দায় রোমাঞ্চকর এক মহাকাব্যের সাক্ষী হওয়া। তাঁর ছবিতে নানা পৌরাণিক কাহিনির প্রভাব স্পষ্ট, বারবার ফিরে আসে পুনর্জন্ম। এ প্রসঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তরুণ বয়স থেকেই আমি অনেক কিছু কল্পনা করতাম। বাবা যখন কাজ করতেন, তখন কোনো দৃশ্য নিয়ে পরিকল্পনা করতেন, আমি মনে মনে দৃশ্যটি কল্পনা করতাম। লার্জার দ্যান লাইফ আইডিয়া আমি পছন্দ করি, আমি অবিশ্বাস্য অবস্থাকে দর্শককে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করি। আমার ছবিতে বারবার নানা পৌরাণিক কাহিনির ছাপ পাওয়া যায়। কারণ, ছোটবেলা থেকেই আমি “রামায়ণ”, “মহাভারত” পড়ে বড় হয়েছি। সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে কাহিনিগুলো আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। পুরাণের প্রভাব আমার ছবিকে ভিন্নমাত্রা দেয়। এ জন্য আমি গর্ব করি।’

আরও পড়ুন