জানা গেল ‘দঙ্গল’–কন্যার অকালমৃত্যুর আসল কারণ

‘দঙ্গল’ ছবিতে আমির খানের সহ–অভিনেত্রী সুহানি ভাটনাগর মারা গেছেন। কোলাজ

‘দঙ্গল’ সিনেমায় আমির খানের মেয়ে ববিতা ফোগতের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুহানি ভাটনাগর। এই ছবিই ছোট্ট মেয়েটিকে রাতারাতি নিয়ে গিয়েছিল খ্যাতির চূড়ায়। সেই সঙ্গে তাঁর পরিবারকেও এনে দিয়েছিল বাড়তি সম্মান। শুক্রবার মেয়ের মৃত্যুর পর ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্মৃতিকাতর ‘দঙ্গল’-কন্যার মা পূজা ভাটনাগর। জানান, মাত্র ১৯ বছরের জীবনে মেয়ে তাঁকে নিয়ে যান সম্মানের শীর্ষ স্থানে। সবাই ‘দঙ্গল’-কন্যার মা হিসেবেই চিনতেন তাঁকে।
অশ্রুসিক্ত চোখে সুহানির মা জানান, ‘আমাদের পরিচয় কী? আমাদের তো সুহানির কারণে মানুষ চিনত। বলত, তারা “দঙ্গল”-কন্যার বাবা-মা। যেখানেই যেতাম, মেয়ের পরিচয়ে পরিচিত হতাম। সবাই নিজের সন্তান নিয়ে গর্বিত। কিন্তু আমাদের সন্তান পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার আগেই আমাদের গর্বিত করে গেছে।’

আরও পড়ুন

আমির খান নিয়মিত সুহানির খোঁজখবর নিতেন বলেও জানান পূজা। বলেন, ‘আমির খান ব্যক্তিগতভাবে ফোন করতেন আমাদের। সুহানিকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। মেয়ে ইরার বিয়েতে আমাদের খুব করে যেতে বলেছেন। কিন্তু সুহানির পা ভেঙে যাওয়ায় তখন তার চিকিৎসা চলছিল। সে কারণে যেতে পারিনি আমরা। সুহানির শরীর খারাপের ব্যাপারেও তাঁকে কিছু জানাতে পারিনি। তখন নিজেরাই খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম।’
পাশাপাশি ‘দঙ্গল’ সিনেমা আর সুহানি বড় হয়ে কী হতে চাইতেন, সেসব নিয়েও স্মৃতিচারণা করেন সুহানির মা। তিনি বলেন, ‘সুহানি খুব মেধাবী। বড় হয়ে সে একজন অভিনেত্রী হতে চাইত। তবে “দঙ্গল”-এর পর আর কোনো ছবিতে অভিনয় করেনি। আমরা চাইতাম, ও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই অভিনয়ে ফিরুক।’  

সুহানির আসলে কী হয়েছিল, পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তাঁর বাবা পুনিত ভাটনাগর। তিনি জানান, ‘ডার্মাটোমায়োসাইটিস নামের বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর মেয়ে। এই রোগ ত্বক, মাসল, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করে। র‌্যাশ-ফুসকুড়ি দেখা দেয়। দুর্বল হয়ে যায় আক্রান্ত অংশ। সুহানিরও একই অবস্থা হয়েছিল। মাস দুয়েক আগে ওর হাত ফুলতে শুরু করে। হাতে র‌্যাশ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু রোগনির্ণয়ে দেরি হচ্ছিল। পরে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেলে নেওয়ার পর মেয়ের রোগ ধরা পড়ে।’

সুহানি ভাটনাগর। ইনস্টাগ্রাম থেকে

সুহানির বাবা বলেন, ‘এটি একটি বিরল রোগ। এই রোগের জন্য তাকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছিল। স্টেরয়েডের প্রভাব সুহানির রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এতে ওর পুরো শরীর আর ফুসফুসে পানি জমে যায়। ভীষণ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একসময় চিকিৎসক জানান, সুহানি আর নেই।’

শনিবার সুহানির অকালমৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শোকের ছায়া নামে বলিউডে। তাঁর অসময়ে চলে যাওয়া মানতে পারছেন না কেউ। ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল আমির খান অভিনীত সিনেমা ‘দঙ্গল’। ক্রীড়ানির্ভর বায়োপিকে মহাবীর সিং ফোগাতের চরিত্রে অভিনয় করেন আমির। যিনি একজন অপেশাদার কুস্তিগির। তাঁর দুই মেয়ে গীতা আর ববিতা। যাঁদের বিশ্বমানের নারী কুস্তিগির হতে ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষণ দেন বাবা মহাবীর সিং।

জাইরা ওয়াসিম, আমির খান ও সুহানি ভাটনাগর। ইনস্টাগ্রাম থেকে

ছবিতে সুপারস্টার আমির খান, সাক্ষী তানওয়ার, ফাতিমা সানা শেখ, সানিয়া মালহোত্রা ও জাইরা ওয়াসিমের সঙ্গে কাজ করেন সুহানা। এ ছাড়া বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেছেন সুহানি। পড়াশোনা শেষে আবার অভিনয়ে ফেরার কথা ছিল সুহানার। তাঁর সে স্বপ্ন থেকে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে।